বাগমারার রাজনীতিতে নতুন আলোচনায় সরদার পরিবারের উত্তরসূরি শুভ
সাজেদুর রহমান
|
![]() বাগমারার রাজনীতিতে নতুন আলোচনায় সরদার পরিবারের উত্তরসূরি শুভ এই ঘোষণায় স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন প্রাণ এসেছে, একই সঙ্গে দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। শুভর পদক্ষেপকে অনেকেই সরদার আমজাদ হোসেনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। আবার কারও মতে, এটি বাগমারার রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের আগমনী বার্তা। প্রবীণ নেতা সরদার আমজাদ হোসেন: এক ঐতিহ্যের নাম প্রবীণ ও প্রভাবশালী রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সরদার আমজাদ হোসেন রাজশাহীর বাগমারায় জন্ম নেওয়া এই নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনীতির সময় থেকেই দল ও দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খাদ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং মৎস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন এই বর্ষীয়ান নেতা। বাগমারার মানুষের মুখে এখনো তার নাম উচ্চারণ হয় সম্মানের সঙ্গে। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে সরদার সানিয়াত হোসেন শুভ রাজনীতির সেই উত্তরাধিকার এবার বহন করতে মাঠে নামছে সরদার সানিয়াত হোসেন শুভ। তিনি পিতার রাজনৈতিক দর্শন ও মানবিক চেতনা নিয়ে বিএনপির পতাকাতলে দাঁড়াতে চান। বাগমারার জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই তার এই সিদ্ধান্ত—এমনটাই জানিয়েছেন শুভ নিজেই। ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় বিএনপি কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সরদার পরিবারের প্রতি অনুগত প্রবীণ নেতাকর্মীরা পাশে এসে দাঁড়াবেন বলে মনে করেন শুভ।তবে তরুণ নেতৃত্ব হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে চান-এমন সংকল্প তার বক্তব্যে স্পষ্ট। বিএনপির ভেতরে নতুন প্রতিযোগিতা বর্তমানে বাগমারা আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট জনে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান উপজেলা পর্যায়ের নেতা, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী নেতারা। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে শুভর আগমন অনেকের কাছে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে। বিএনপির রাজনীতি এখন একটি পুনর্গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। এমন সময় সরদার পরিবারের একজন সদস্য মাঠে নামায় দলীয় তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা। কারণ, সরদার আমজাদের নাম এখনো বাগমারা মানুষের মধ্যে এক প্রেরণার উৎস। তবে প্রতিযোগিতা কঠিন হবে তা বলাই বাহুল্য। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন। শুভকে তাই স্বল্প সময়ে সংগঠনিক প্রস্তুতি, জনসংযোগ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জামায়াতের একক প্রার্থী ও ভোট-সমীকরণ এদিকে বাগমারা আসনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও একজন প্রার্থীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আসন্ন নির্বাচনে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে-বিএনপি ও জামায়াত। এই অবস্থায় বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ ঐক্য বজায় রাখতে না পারে, তাহলে জামাতের প্রার্থী নিশ্চিত জয় পাবে। তাই শুভসহ অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো-দলীয় ঐক্য রক্ষা করা এবং কেন্দ্রের কাছে এলাকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। রাজনীতির মাঠে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার চেয়ে সাংগঠনিক সমন্বয়ই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন আশা সরদার সানিয়াত হোসেন শুভ তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন-এই দিকটিও উল্লেখযোগ্য। বাগমারা দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবীণ নেতাদের প্রভাবাধীন ছিল। সেখানে শুভর মতো শিক্ষিত, নতুন ভাবনার রাজনীতিকরা আগমন করায় তরুণ ভোটারদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। রাজনীতি এখন শুধুই দলীয় প্রচার নয়, বরং সামাজিক যোগাযোগ, গণমানুষের আস্থা এবং প্রযুক্তিনির্ভর সচেতনতারও লড়াই। শুভ যদি এই উপাদানগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে তিনি শুধু দল নয়, পুরো বাগমারার রাজনীতিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। দলের জন্য সময়ের দাবি-ঐক্য ও সংগঠন বিএনপির সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, ভেতরের বিভাজন কাটিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্য ফিরিয়ে আনা। সরদার পরিবারের রাজনীতি সবসময় ছিল সংগঠননির্ভর-কোনো ব্যক্তির নয়। শুভ যদি পিতার সেই রাজনৈতিক দর্শন অনুসরণ করেন, তাহলে বিএনপি ও স্থানীয় সাংগঠনিক শক্তি আরো জাগ্রত হতে পারে। রাজনীতি মানে নেতৃত্ব, আর নেতৃত্ব মানে ত্যাগ ও সহনশীলতা। সরদার আমজাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শিক্ষা এখানেই। শুভ যদি সেই শিক্ষা ধারণ করতে পারেন, তাহলে দলের জন্য এবং এলাকার জন্য তা হবে এক ইতিবাচক রূপান্তর। শেষকথা বাগমারার রাজনীতি এখন এক নতুন মোড়ের অপেক্ষায়। প্রবীণ নেতৃত্বের স্মৃতি, নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা ও আসন্ন নির্বাচনের উত্তেজনা-সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত রাজনীতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সরদার সানিয়াত হোসেন শুভর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা কেবল একটি ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নয়; এটি সরদার পরিবারের দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতা যদি সংগঠিত প্রচেষ্টা ও তৃণমূল ঐক্যের সঙ্গে মিলে যায়, তবে বিএনপির জন্য বাগমারা হতে পারে নতুন আশার প্রতীক। রাজনীতি কখনও শুধুই ভোটের হিসাব নয়-এটি ইতিহাস, উত্তরাধিকার, ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায়িত্ব। সরদার আমজাদ হোসেন যেভাবে নিজের জীবনে দায়িত্ব ও সততার উদাহরণ রেখে গেছেন, ঠিক সেভাবেই তার উত্তরসূরি শুভ যদি সেই মূল্যবোধ ধারণ করেন, তাহলে বাগমারার রাজনীতিতে “সরদার পরিবার” আবারও আলোচনায় আসবে-গৌরবের সঙ্গে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |