ময়মনসিংহে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, ৫ লাখ টাকায় সমঝোতা!
মোঃ মাইন উদ্দিন উজ্জ্বল, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: Thursday, 27 November, 2025, 4:55 PM
ময়মনসিংহে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, ৫ লাখ টাকায় সমঝোতা!
ময়মনসিংহে বেসরকারি হাসপাতালে রেখা আক্তার নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে নগরীর পাদ্রি মিশন রোডের নিরাময় ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় ক্লিনিক মালিক সমিতির সঙ্গে ৫ লাখ টাকায় সমাঝোতা করা হয়। এর আগেও এই ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগির মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
নিহত প্রসূতির পরিবার সূত্রে জানা যায়, তারাকান্দা উপজেলার ধারা গ্রামের রেখা আক্তারকে মঙ্গলবার দুপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য নিরাময় ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপারেশন করা হয়, কিছুক্ষণ পরে মারা যান তিনি।
ওই ঘটনায় রোগির স্বজনরা ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে নিহতের বড় ভাই নূর ইসলাম কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ নিরাময় ক্লিনিকের মালিক ডা.মুমিনুর রহমান জিন্নাহসহ ৫ জনকে আটক করে।
নিহত রেখার বড় ভাই নূর ইসলাম বলেন, তার বোন বাসা থেকে আসার সময় বেশ হাসি-খুশি ছিল, অপারেশনের আগেও তাদের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু অপারেশনের পরই তার বোনের মৃত্যু হয়, এর জন্য তিনি ভুল চিকিৎসাকে দায়ি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ক্লিনিক মালিককে আটক করেছে। কিন্ত পারিবারিকভাবে ৫ লাখ টাকা সমঝোতা হওয়ায় আমরা আর মামলায় যাচ্ছি না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ,নিরাময় ক্লিনিক ভেতর থেকে গেট লাগানো আছে, দরজায় বারবার নাড়া দিলেও কেউ গেট খুলেনি। বরং ভেতর থেকে জানানো হয় ক্লিনিক মালিক কর্তৃপক্ষের আদেশ গেট খোলা নিষেধ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার কমিউনিটির সভাপতি সাকিব আহমেদ তুহিন বলেন, ময়মনসিংহে ভুয়া ডাক্তার ও অবৈধ ক্লিনিক–হাসপাতালের দৌরাত্ম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিন প্রাণহানি ও চিকিৎসা হয়রানির ঘটনার ফলে নগরবাসীর জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন অনেকেই ময়মনসিংহকে লাশের নগরী হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
বিগত চার মাস ধরে অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধের দাবিতে আমি নিয়মিত আন্দোলন করে আসছি। স্বাস্থ্য পরিচালক আমাকে বারবার আশ্বস্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান সমাধান পাওয়া যায়নি। নগরবাসীর জীবন বাঁচাতে অবিলম্বে ময়মনসিংহের সব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধ করা জরুরি। আর মৃত্যু হলেই ৫ লাখ টাকা জরিমানায় তারা রেহাই পান এটা মানা যায় না।
নিরাময় ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ক্লিনিকের মালিকসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। কিন্তু পারিবারিকভাবে সমাঝোতা হওয়ায় বাদি পক্ষ না আসায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্তে অনিয়ম পাওয়া গেলে ওই ক্লিনিক বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে অভিযান চলমান রয়েছে।
ময়মনসিংহে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, ৫ লাখ টাকায় সমঝোতা!
এদিকে, কিছুদিন আগেও নগরীর ভাটিকাশর এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল ভেনাসে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তখনও ৫ লাখ টাকায় সমাধান করা হয়। এভাবে গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত রোগির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর প্রতি মৃত্যুর ঘটনায় ২ থেকে ৫ লাথ টাকায় সমাধান করার তথ্য মিলেছে। এসব হাসপাতালে রোগির মৃত্যু হলেই ৫ লাখ টাকা জরিমানায় খালাস পান ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিক কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে পর পর ৫টি ঘটনায় জরিমানা দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা দামাচাপা দিচ্ছে তারা। আর এ কাজে ক্লিনিক-ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিক অ্যাসোসিয়েশন মূখ্য ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অথচ এ সব ক্লিনিকের অধিকাংশের নেই বৈধ লাইসেন্স। তবে এ সব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানান স্থাস্থ্য প্রশাসন ।
ময়মনসিংহ নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নামে বেনামে ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। স্থাস্থ্য বিভাগে তিনশত বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য থাকলেও এর অধিকাংশের নেই বৈধ লাইসেন্স। এর বাইরেও রয়েছে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। তবে সম্প্রতি স্থাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও র্যাব এসব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা চলমান রেখেছেন।