ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অর্থ দিয়ে ইসরায়েলের গাজা, লেবানন ও ইরান যুদ্ধ জিইয়ে রেখেছে
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 8 October, 2025, 12:59 PM

যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অর্থ দিয়ে ইসরায়েলের গাজা, লেবানন ও ইরান যুদ্ধ জিইয়ে রেখেছে

যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অর্থ দিয়ে ইসরায়েলের গাজা, লেবানন ও ইরান যুদ্ধ জিইয়ে রেখেছে

ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আর্থিক সহায়তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধগুলো টিকিয়ে রাখতে পারত না—সম্প্রতি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট' প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। এই অর্থ ও অস্ত্র না থাকলে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ চালানো, ইরানের সঙ্গে লড়াই শুরু করা কিংবা ইয়েমেনে বারবার বোমা হামলা করা সম্ভব হতো না।

এই প্রতিবেদনের তথ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিশ্লেষকরাও। তারাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও কূটনৈতিক সহায়তা ছাড়া গাজা এবং বৃহত্তর অঞ্চলে ইসরায়েলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।

মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর এইচ রহমান আল জাজিরাকে বলেন, 'গাজা ও সমগ্র অঞ্চলে ইসরায়েলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সব পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অপরিহার্য।'

গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের চিত্র

দুই বছর আগে হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে এক হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এবং এই অঞ্চলে তাদের বিরোধী হিসেবে বিবেচিত যেকোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধ শুরু করে।

অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে অভিযান বৃদ্ধি; লেবাননে ৪ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা এবং বিস্তীর্ণ গ্রাম ধ্বংস; লেবানন ও সিরিয়ার ভূমি দখল ও আক্রমণ; দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বোমা হামলা এবং ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু; এবং ইয়েমেনের হুথিদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায় ইসরায়েল।

শুধু গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। এখনও হাজার হাজার মানুষ গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ডজন এবং জুনে ইরানে আক্রমণে ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

মার্কিন সহায়তায় যুদ্ধ টিকে আছে

কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো উইলিয়াম ডি হার্টুংয়ের 'ইউএস মিলিটারি এইড অ্যান্ড আর্মস ট্রান্সফারস টু ইসরায়েল, অক্টোবর ২০২৩–সেপ্টেম্বর ২০২৫' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ব্যয়ের পরিমাণ বিবেচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন অর্থায়ন, অস্ত্র ও রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় এতটা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারত না বা অঞ্চলজুড়ে তাদের সামরিক কার্যক্রমও বাড়াতে পারত না।'
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অর্থ দিয়ে ইসরায়েলের গাজা, লেবানন ও ইরান যুদ্ধ জিইয়ে রেখেছে

যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অর্থ দিয়ে ইসরায়েলের গাজা, লেবানন ও ইরান যুদ্ধ জিইয়ে রেখেছে

হার্টুংয়ের প্রতিবেদনটি 'কস্টস অব ওয়ার' এবং 'কুইন্সি ইনস্টিটিউট' যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। হার্টুং এবং হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের বাজেট ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ লিন্ডা জে বিলমসের আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সামরিক সহায়তা ও আঞ্চলিক সামরিক কর্মকাণ্ডে ৩১.৩৫ থেকে ৩৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

বিশ্লেষকরাও এই প্রতিবেদনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। ওমর এইচ রহমান বলেন, 'ইসরায়েল যা করছে, তা করার জন্য তাদের মার্কিন অস্ত্রের প্রয়োজন। তারা গাজা এবং অন্য জায়গায় বিপুল পরিমাণে বোমা ফেলেছে। তারা নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র ও প্রযুক্তি তৈরি করে, কিন্তু বোমা তৈরি করে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া তারা এই বোমাগুলো ফেলতেও পারত না।'

দ্বিদলীয় সমর্থন অব্যাহত

যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসন বদলালেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনে পরিবর্তন আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক। মার্কিন বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে ইসরায়েল বার্ষিক (প্রায় ৩৩০ কোটি ডলার) ও সামগ্রিকভাবে (২০২২ সাল পর্যন্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি) সবচেয়ে বেশি অর্থ গ্রহণ করে। 

হার্টুংয়ের প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প, উভয়ের প্রশাসনই ইসরায়েলকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে এমন পরিষেবা ও অস্ত্রও রয়েছে যার অর্থ আগামী বছরগুলোতে পরিশোধ করা হবে।

ওমর রহমান বলেন, 'এমন দ্বিদলীয় সমর্থনের কারণেই একটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছ থেকে কোনো বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হয়নি।'

তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। গবেষকেরা গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' আখ্যা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জনমতও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অনেকটা ঘুরে গেছে। 

এই পরিবর্তন আমেরিকান ইহুদিদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, প্রতি ১০ জন মার্কিন ইহুদির মধ্যে ৪ জন বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। ৬০ শতাংশের বেশি মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে।

মার্কিন অভ্যন্তরে সমালোচনা

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট ডাস আল জাজিরাকে বলেন, 'বাইডেন প্রশাসনের কিছু সাবেক কর্মকর্তা হয়তো আশা করছেন যে তাদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে না, কিন্তু তারা একটি কল্পনার জগতে বাস করছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি মনে করি না কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ২০২৮ সালে বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা সংঘটিত এবং সমর্থিত একটি গণহত্যাকে স্বীকার না করে প্রাইমারিতে জিততে পারবে।'

তার মতে, মার্কিন বাজেট বরাদ্দ নিয়েও জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। 'আমেরিকানরা যখন সবচেয়ে দুর্বল সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছে, তখনো আমরা ইসরায়েলের যুদ্ধের জন্য বিলিয়নের পর বিলিয়ন ডলার বের করতে পারছি—এটি একেবারেই অযৌক্তিক।'

ডাস আরও বলেন, এটি শুধু ইসরায়েলের স্বার্থ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প খাতেরও বিপুল মুনাফা জড়িত। কারণ, সহায়তার বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকেই দেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status