ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
মঙ্গলবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫ আশ্বিন ১৪৩২
রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ হত্যার চতুর্থ বার্ষিকী পালন, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা
রফিক মাহমুদ, উখিয়া
প্রকাশ: Monday, 29 September, 2025, 4:43 PM

রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ হত্যার চতুর্থ বার্ষিকী পালন, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা

রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ হত্যার চতুর্থ বার্ষিকী পালন, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা

রোহিঙ্গা শান্তি কর্মী ও জনপ্রিয় নেতা মহিব উল্লাহর হত্যার আজ চতুর্থ বার্ষিকী। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে সশস্ত্র আরসা সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। হত্যার চার বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তাঁর স্মৃতি ও স্বপ্ন এখনো দিকনির্দেশনা হয়ে রয়েছে।

মাস্টার মহিব উল্লাহ ছিলেন রোহিঙ্গাদের অধিকার আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় তিনি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। কুতুপালং ক্যাম্পে তাঁর নেতৃত্বে রোহিঙ্গারা প্রথমবারের মতো “গণহত্যা দিবস” পালন করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০১৯ সালে তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য দেন এবং হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তবে তাঁর জনপ্রিয়তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তদন্তে উঠে আসে, মহিব উল্লাহকে সংগঠন ভেঙে আরসায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে আরসার সশস্ত্র সদস্যরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

হত্যার পরদিন তাঁর জানাজায় হাজারো রোহিঙ্গা অংশ নেয়। আন্তর্জাতিক মহল এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছিল।

মাস্টার মুহিব উল্লাহ হত্যার ন্যায় বিচার চেয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে ক্যাম্প ওয়ানে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় তাঁরা তাদের নেতার প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মরণ করেছেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন,“মহিব উল্লাহ ছিলেন আমাদের অধিকার আদায়ের বাতিঘর। তিনি শুধু একজন নেতা ছিলেন না; ছিলেন আমাদের আশার প্রতীক। তাঁর কণ্ঠে আমরা নিজেদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, নির্যাতন ও কষ্টের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতাম। তাঁর হত্যার চার বছর পরও আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই—মহিব উল্লাহর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হোক, যেন আর কোনো রোহিঙ্গা নেতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে না হয়।”

আরাকান রোহিঙ্গা সিভিল সোসাইটির নেতা মৌলভী ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, “মহিব উল্লাহর হত্যার মাধ্যমে আমাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আজ তাঁর নামে, তাঁর স্মৃতিতে আমরা আরও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। তিনি ছিলেন সত্যিকারের শান্তির পক্ষে যোদ্ধা। তাঁর হত্যাকারীদের এখনো বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় বেদনা। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো শান্তি আসবে না। তাঁর মতো দূরদর্শী নেতার রক্ত যেন বিফলে না যায়।”

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ সোয়াইব বলেন, “তিনি ছিলেন রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা, যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অস্তিত্বকে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর হত্যার মাধ্যমে আমাদের আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আজও আমরা তাঁর হত্যার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি। যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, তবে আমাদের সমাজে ভয়, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা আরও গভীর হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা অনুরোধ করছি—মাস্টার মহিব উল্লাহর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন।”

রোহিঙ্গাদের আর এক নেতা মাস্টার জাহাঙ্গীর বলেন, “মহিব উল্লাহ রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীকে একত্র করে এক ধরনের শক্তিতে পরিনত করেছিল। তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন—সংগ্রাম মানে অস্ত্র নয়, বরং ঐক্য, ন্যায়বিচারের দাবি ও বিশ্বজনমতের কাছে সত্য তুলে ধরা। আজ তাঁর স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে আমাদের প্রথম শর্ত হলো তাঁর হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, এ হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। এতে শুধু মহিব উল্লাহ নয়, সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ন্যায়বিচার পাবে।”

মহিব উল্লাহ বিশ্বাস করতেন—রোহিঙ্গারা একদিন তাদের আদি ভূমি আরাকানে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। তিনি বলতেন, “আমাদের সংগ্রাম আমাদের অধিকারের জন্য, দান-খয়রাতের জন্য নয়।”

বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি এবং ভাসানচরে ১ টি সহ ৩৪ টি ক্যাম্পে ১৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। যা জাতিসংঘের মতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। ২০১৭ সালের গণহত্যার পর পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠী আজও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছে।

চার বছর পরও মহিব উল্লাহ রোহিঙ্গাদের প্রেরণার প্রতীক হয়ে রয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন ও দৃষ্টিই এখন রোহিঙ্গাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের পথনির্দেশক।


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status