ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ৭ নভেম্বর ২০২৫ ২১ কার্তিক ১৪৩২
শতবর্ষি সহচরীর '৭৫ ব্যাচের মিলন মেলায় দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে স্মৃতিচারণ
শেখ সেকেন্দার আলী,পাইকগাছা
প্রকাশ: Thursday, 11 September, 2025, 12:06 PM

শতবর্ষি সহচরীর '৭৫ ব্যাচের মিলন মেলায় দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে স্মৃতিচারণ

শতবর্ষি সহচরীর '৭৫ ব্যাচের মিলন মেলায় দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে স্মৃতিচারণ

পূর্ব নির্ধারিত সময় সকাল ১০ ঘটিকা। ততক্ষণে হাজির হয়েছেন জনাদশেকের মত। আয়োজকদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলছে ছোটাছুটি এবং টক-মিষ্টি বাক্যালাপ।স্থান কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির স্কুল এন্ড কলেজ ক্যাম্পাস। আগামী বছর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠটি শতবর্ষি আলোকবর্তিকায় নাম লিখাবে। দক্ষিণাঞ্চলের সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজকের এই আয়োজনটিও তারই ধারাবাহিকতার অংশ। "শতবর্ষ উদযাপনে এসো মিলি এক কাতারে" এই স্লোগান সামনে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও মিলন মেলা '২৫ এর আয়োজক বিদ্যালয়ের '৭৫ এর এসএসসি ব্যাচ। গাণিতিক হিসেবে পাশের সালটি খুঁজতে ৫০ টি বর্ষ পঞ্জিকা পাল্টাতে হবে। পঞ্জিকা পাল্টানোর সাথে সাথে ইতোমধ্যে অনেক বন্ধুকেও চিরতরে হারিয়েছেন তারা ।

খুঁজে খুঁজে তাদের সন্তানদের হাজির করেছেন অনুষ্ঠানে। ছিল ছোটদের স্নেহ আর বড়দের সম্মানের প্রতিকী উপস্থাপনা। এই বিদ্যালয়ের গুটি কয়েক অগ্রজ এবং অনুজদের দেওয়া হয় বিশেষ সংবর্ধনা। অতিথি সারিতে তাদের বসানো হয় নির্ধারিত চেয়ারে। ঘড়ির কাঁটায় তখন বারোটা ছুঁইছুঁই। সভাপতির আসনে বসেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মন্ডল। প্রধান অতিথি এই বিদ্যাপীঠের সাবেক সহঃ প্রধান শিক্ষক( '৭৫ ব্যাচের ছাত্রদের স্যার) মোঃ ওয়াজেদ আলী সরদার। সঞ্চালক মোঃ হাসান- উজ-জামান ফু দিয়ে শব্দ যন্ত্রটি পরীক্ষা করে নিচ্ছেন। শব্দ যন্ত্রটি ফিটনেস সার্টিফিকেট পেলেও শুরু হলো উপস্থাপকের অনুষ্ঠান সূচির ফিরিস্তির কাগজ খোঁজাখুঁজির পালা। বোধ করি, এই দৃশ্যটিও ছিল দৃষ্টিনন্দন অনুষ্ঠানের অলংকার স্বরূপ। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পর শুরু হয় ফুলেল শুভেচ্ছা।

এরপর স্মৃতিচারণ। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। দুষ্টুমি, খুনসুটি, শিক্ষকের বকুনি, কবিতা, গান, যে যেভাবে পেরেছেন সাধ্যমত নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এ পর্বে। এ যেন সেই ছেলেবেলার ক্লাসরুমের প্রতিযোগিতা চলছে। আর হবেই না কেন, প্রধান অতিথি যেখানে রাজাধিরাজ শিক্ষক মোঃ ওয়াজেদ আলী সরদার। যথারীতি হাতে লাঠি নিয়ে উপস্থিত এই অনুষ্ঠানে। তবে আজ সেই লাঠি শাসনের জন্য নয়, বয়সের ভারে নতুজানু নিজেকে সামলে রাখার অবলম্বন। '৭৫ ব্যাচের আবু বকর হাজরা। সালের সাথে নিজের বয়সেরও কাকতালীয় মিল রয়েছে। উপস্থিত বন্ধুরাও কাছাকাছি বয়সের। শারীরিকভাবে একটু দুর্বল হওয়ায় নিজে মাইক্রোফোন হাতে করেননি,বন্ধুদের কথা শুনছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু থেকেই আবু বকর এর চোখ থেকে আনন্দাশ্রু ঝরছে। 

আলাপচারিতায় জানা গেল, এভাবেই প্রতিটি কথায় আবেগ আপ্লুত হন তিনি। অজান্তে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। এই ব্যাচের মেধাবী ছাত্র শংকর দেবনাথ, উপস্থিত সকলকে হতবাক করেছেন। ৭৫ এ পা রেখেও পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের কবর কবিতা পুরাটাই আবৃত্তি করেন নির্ভুল ও সাবলীল ভাবে। বন্ধুদের অনুরোধে শেখ সুলতান আহমেদ ইসলামী সংগীত পরিবেশন করলেন যা একজন পেশাদার শিল্পীকেও হার মানায়। মিলন মেলায় উপস্থিত সকলে যখন হাসি আর আনন্দে মেতেছে উপস্থাপক তখন হারিয়ে যাওয়া বন্ধু কওছার উদ্দীনের ছেলে হারুনার রশিদকে ডাকলেন কথা বলার জন্য। মুহূর্তে ভারী হলো পরিবেশ, আনন্দ হঠাৎ বিষাদে পরিণত হলো। সকলের চোখে অশ্রু। এবারে বন্ধুপুত্র ডাঃ মোঃ সাব্বির হোসেন এর অসাধারণ আবৃত্তি বিষাদের বাতাস সারাতে কিছুটা সাহায্য করে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আশরাফ হোসেন, আরাধন চৌধুরী, পরিমল কুমার , মোঃ হাফিজুর রহমান গাজী,গোষ্ঠ বিহারী দত্ত,সুভাষ সরকার, পরিতোষ কুমার ঢালী, অরুণ কুমার মন্ডল, বিধান চন্দ্র শীল, অমিত রঞ্জন দেবনাথ, বিমল রায়, শংকর হোড়, চন্দন কুমার পাল, জীবন কৃষ্ণ দে, আনিসুর রহমান, মোঃ আহাদ, অজিত কুমার, মোসলেম জর্দার, আকামুদ্দিন গাজী, মফিজ উদ্দিন সরদার, কাজী মমিনউদ্দিন, মোঃ রফিকুল ইসলাম, অগ্রজ মোঃ হাসান আলী, অনুজ এস এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজ, এইচ এম শফিকুল ইসলাম,আব্দুর রশিদ মোড়ল। কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের স্মৃতিচারণ ও মিলন মেলা '২৫ এর অনুষ্ঠান প্রায় শেষ পর্যায়ে । ৫০ বছর আগে ছেড়ে যাওয়া বন্ধুদের মিলিত করার মূল উদোক্তা আব্দুল মজিদ মোড়র জানালেন আশার বাণী। '২৬ সালের শতবর্ষ অনুষ্ঠানের পূর্বে আবারো মিলিত হবেন তারা।

হাত উঁচু করে শপথ নিলেন হাজির হবেন শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে। জানান দিলেন কতটা জমকালো এবং সাজানো গোছানো হবে সেই আয়োজন। তরুণদের সাথে নিয়েই সকলকে এক কাতারে মিলাতে চান তারা। এবার বিদায়ের পালা। আবারো ভারী হতে শুরু করেছে সেখানকার পরিবেশ। তবুও বিদায় নিতে হবে। একরাশ ক্লান্তির পর নীড়ের পাখি তো নীড়েই ফেরে। পরিপাটি পোশাকে হাজির হওয়া মানুষগুলির পোশাকে ঘাম আর অশ্রুর নোনা জলের ছাপ লাগতে শুরু করেছে। সভাপতির সমাপনী বক্তব্য শেষ হয়েছে অনেক আগেই। মানুষগুলির ঘরে ফেরার তাড়া থাকলেও গতিটা যেন মন্থর। অবশেষে যথা সময়ে অনুষ্ঠান শুরু না হওয়ার সমাধান মিলেছে। #

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status