ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর ২০২৫ ২১ কার্তিক ১৪৩২
হালদা নদীকে 'মৎস্য হেরিটেজ এলাকা' ঘোষণা, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বিধান বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: Thursday, 6 November, 2025, 6:28 PM

হালদা নদীকে 'মৎস্য হেরিটেজ এলাকা' ঘোষণা, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলছেন বিশেষজ্ঞরা

হালদা নদীকে 'মৎস্য হেরিটেজ এলাকা' ঘোষণা, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক রুই জাতীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীকে ‘মৎস্য হেরিটেজ এলাকা’ ঘোষণা করেছে সরকার। নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে বুধবার (৫ নভেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে নদী ও এর আশপাশের এলাকায় ১৭টি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী রুইজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হিসেবে অনন্য। এখানকার রুইজাতীয় মাছ জেনেটিক্যালি বিশুদ্ধ। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত নদীতে প্রজননের ফলে প্রচুর নিষিক্ত ডিম পাওয়া যায়। একই সঙ্গে নদীটি বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিনেরও আবাসস্থল। হালদা নদী ও এর তীরবর্তী মোট ২৩ হাজার ৪২২ দশমিক ২৮ একর এলাকা ‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারি গেজেট অনুযায়ী, এখন থেকে হালদা নদী থেকে কোনো প্রকার মাছ বা জলজ প্রাণী ধরা বা শিকার করা যাবে না। শুধুমাত্র মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়েই নিষিক্ত ডিম আহরণ করা যাবে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নদীর প্রাণি ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী যেকোনো কাজ, মাছ, ডলফিন বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম এবং নদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নতুন এই ঘোষণায় বসতবাড়ি বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের পয়ঃবর্জ্য নদীতে ফেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নদীর বাঁক কেটে সোজা করা, নতুন রাবার ড্যাম বা কংক্রিট ড্যাম নির্মাণ এবং প্রাকৃতিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নদীর পাড়সংলগ্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন, হালদা ও এর শাখা নদীতে বালুমহাল ইজারা দেওয়া এবং ড্রেজার ব্যবহারও বন্ধ থাকবে।

এ সংক্রান্ত তদারকি কমিটির অনুমতি ছাড়া পানি শোধনাগার বা সেচ প্রকল্প থেকে পানি উত্তোলন করা যাবে না। কর্ণফুলী মোহনা থেকে নাজিরহাট ব্রিজ পর্যন্ত ভারী ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নদীর অববাহিকায় তামাক চাষ এবং কৃষিজমিতে ক্ষতিকর কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া দেশি বা বিদেশি কেউ অনুমতি ছাড়া এই হেরিটেজ এলাকায় গবেষণা পরিচালনা করতে পারবেন না।

সরকারের এই ঘোষণাকে নদী রক্ষায় নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মন্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা এখন দেশের গর্ব। হালদা শুধু একটি নদী নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। সরকারের এই ঘোষণা নদী রক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরাও এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ ইতিহাসে একটি ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এসব নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন করা হবে। গেজেটে আরও বলা হয়েছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন বা পরিবেশগত পরিবর্তন ঘটলে এলাকাভিত্তিক সীমারেখা ও বিধিনিষেধ সময়মতো হালনাগাদ করা হবে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status