ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর ২০২৫ ২১ কার্তিক ১৪৩২
ভারত-পাকিস্তানের মাঝে আটকে আছেন রাষ্ট্রহীন দুই বোন
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 3 September, 2025, 12:56 PM

ভারত-পাকিস্তানের মাঝে আটকে আছেন রাষ্ট্রহীন দুই বোন

ভারত-পাকিস্তানের মাঝে আটকে আছেন রাষ্ট্রহীন দুই বোন

এক টুকরো কাগজ। আর এর জন্যই দুই বোন আজ রাষ্ট্রহীন । ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় পাকিস্তানের নাগরিকত্ব ছাড়ার কোনো প্রমাণপত্র জোগাড় করতে পারেননি তারা। ফলে এখন তারা না ভারতীয়, না পাকিস্তানি—কেবলই পরিচয়হীন। 

২০০৮ সাল থেকে ভারতের কেরালা রাজ্যে বাস করছেন এই দুই বোন। সম্প্রতি আদালতের কাছে তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তারা জানান, ২০১৭ সালে দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনে নিজেদের পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাদের বয়স ছিল ২১ বছরের কম, যা পাকিস্তানে নাগরিকত্ব ছাড়ার ন্যূনতম বয়স। তাই হাইকমিশন তাদের নাগরিকত্ব ত্যাগের সনদ দেয়নি।

২১ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তারা আবার হাইকমিশনে যান, কিন্তু এবারও কোনো কারণ ছাড়াই তাদের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দুই বোনের মা, রাশিদা বানু বলেন, "আমার আর আমার ছেলের এখন ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে, কিন্তু আমার মেয়েরা বছরের পর বছর ধরে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।"

তাদের কাছে শুধু ২০১৮ সালের একটি প্রত্যয়নপত্র আছে, যেখানে বলা হয়েছে—বোনেরা পাসপোর্ট জমা দিয়েছে এবং ভারত তাদের নাগরিকত্ব দিলে পাকিস্তানের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটিকে নাগরিকত্ব ত্যাগের মূল সনদ হিসেবে মানতে নারাজ। এই নিয়েই শুরু হয় আইনি লড়াই।

এই পরিস্থিতির কারণে মেয়েদের জীবনটাই যেন থমকে গেছে। সামান্য পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার অধিকারও তাদের নেই। এ বিষয়ে বিবিসি ভারতের পাকিস্তান হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনো জবাব পায়নি।

দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মানুষের যাতায়াত নতুন কিছু নয়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় অনেক পরিবারই দুই দেশে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কাগজপত্রের কড়াকড়ির কারণে এই প্রক্রিয়া অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, ৭ হাজারের বেশি পাকিস্তানি নাগরিকের আবেদন ভারতের কাছে ঝুলে আছে।

রাশিদা বানু জানান, পাকিস্তান হাইকমিশন যখন সনদ দেয়নি, তখন তিনি মেয়েদের পাসপোর্ট ফেরত চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনও গ্রাহ্য হয়নি।

আদালতের বারান্দায়

গত বছর কেরালা হাইকোর্টের একজন বিচারক তাদের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন, "এটা স্পষ্ট যে আবেদনকারীরা ওই সনদ জোগাড় করতে পারবেন না। এটা তাদের অসম্ভবকে সম্ভব করতে বলার সামিল।" আদালত ভারত সরকারকে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
ভারত-পাকিস্তানের মাঝে আটকে আছেন রাষ্ট্রহীন দুই বোন

ভারত-পাকিস্তানের মাঝে আটকে আছেন রাষ্ট্রহীন দুই বোন

কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এ বছরের ২৩ আগস্ট, একই আদালতের দুই বিচারকের বেঞ্চ আগের রায়টি বাতিল করে দেয়। নতুন রায়ে বলা হয়, "ভারতের নাগরিক হতে হলে তাকে কেবল ভারত রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে, অন্য কোনো দেশের দাবি সেখানে থাকতে পারবে না। নাগরিকত্ব ত্যাগের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটিই এই আইনি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।" এখন দুই বোনের সামনে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পথ খোলা আছে।

থমকে যাওয়া জীবন

দুই বোনের বাবা মোহাম্মদ মারুফ কেরালায় জন্মালেও শৈশবে পাকিস্তানে চলে যান। তাদের মা রাশিদা বানুর বাবা-মাও ছিলেন ভারতীয়, কিন্তু ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে গিয়ে আটকা পড়েন এবং পরে সেখানকার নাগরিকত্ব নেন।

২০০৮ সালে রাশিদা তার পরিবার নিয়ে 'শিকড়ের টানে' ভারতে ফিরে আসেন। রাশিদা ও তার ছেলে ভারতের নাগরিকত্ব পেলেও আটকে যায় মেয়েদের আবেদন।

রাশিদা বলেন, পাকিস্তানি পরিচয়পত্র দেখাতে গিয়ে তাদের অনেক লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু এখন তো মেয়েদের কোনো পরিচয়ই নেই। একটি মোবাইল সিম কেনা বা সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করার মতো সাধারণ কাজও তাদের জন্য কঠিন। যদিও কর্তৃপক্ষ তাদের ভারতের পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড দিয়েছে, কিন্তু তা নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।

পাসপোর্ট না থাকায় তাদের ব্যক্তিগত জীবনও বিপর্যস্ত। একজনের স্বামী উপসাগরীয় অঞ্চলের চাকরি ছেড়ে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ স্ত্রী তার কাছে যেতে পারছেন না। আরেকজনের সন্তানের বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু মায়ের পাসপোর্ট না থাকায় সেও ভারত ছাড়তে পারছে না।

তাদের আইনজীবী এম. শশিন্দ্রন বলেন, "অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ২০১৭ সালে তারা সনদটি পায়নি। এখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক, কিন্তু পাসপোর্ট জমা দেওয়ায় পাকিস্তানেও যেতে পারছে না। তাহলে তারা সনদটি পাবে কীভাবে?" ‍তিনি শেষে বলেন, "তারা এখন আক্ষরিক অর্থেই আটকা পড়েছে।"

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status