|
সুদানিরা কেন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() সুদানিরা কেন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন জাতিসংঘের তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণভাবে সুদান বিশ্বের বৃহত্তম বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এর ফলে দেশটির ১৮টি রাজ্যের ১৮৫টি এলাকার ১০ হাজার ৯২৯টি স্থান থেকে ৯৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ দারফুর থেকে ১৮ লাখ ৪০ হাজার, উত্তর দারফুর থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ও মধ্য দারফুর থেকে ৯ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিলে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। আরএসএফ দারফুরে নৃশংসতার সঙ্গেও জড়িত। জাতিসংঘ বলেছে, এটি গণহত্যা। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরোধ, অনাহার ও বোমাবর্ষণের পর গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশের ও এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় আরএসএফ। দখল নেওয়ার পর এই অঞ্চল থেকে এ পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮১৭ জন মানুষ পালিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই পায়ে হেঁটে এলাকা ছেড়েছেন। সংস্থাটি বলছে, এলাকা ছেড়ে যাওয়াদের অনেকেই উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশেরের বিভিন্ন অংশে ও নিকটবর্তী শহর তাওয়িলায় আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর শহরের ভেতরে হাজারো মানুষকে মেরে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। মুক্তিপণের জন্য অনেককে আটকে রেখেছে। কলেরা ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আল জাজিরার তথ্যমতে, বর্তমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আইওএম ধারণা করেছিল, সুদানে ২৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই দারফুরে আশ্রয় নিয়েছেন। সুদানের অভ্যন্তরে এ পর্যন্ত ৭২ লাখ ৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে খার্তুম থেকে ২৭ লাখের কাছাকাছি, দক্ষিণ দারফুর থেকে ২০ লাখ ও উত্তর দারফুর থেকেও ২০ লাখের মতো মানুষ দেশে ছেড়েছেন। কেন সুদানিরা দেশ ছাড়ছেন গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্ষুধা, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততার কারণে সুদানিরা দেশ ছাড়ছেন। যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে, ফলে বাড়ছে ক্ষুধা সংকট। ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন সুদানের বাসিন্দারা। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পূর্ব চাদে পাড়ি জমিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ নারী এবং শিশু। এই সংখ্যা ২০২৪ সালে এক সপ্তাহের রেকর্ড সংখ্যা। চাদ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চাদে এখন পর্যন্ত সুদানের ৬ লাখের বেশি আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সুদানের দারফুর অঞ্চলের ফারচানা শিবিরের পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। শিবিরে থাকা শরণার্থীরা গার্ডিয়ানকে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। অনেকেই ইতালি, ইউরোপের অন্যান্য দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ফারচানা ক্যাম্পের পরিচালক হাতিম আবদুল্লাহ এল-ফাদিল বলেছেন, সংকট এতটাই দেখা দিয়েছে যে, সুদানিরা খাবারের জন্য শহরের বাজারে ভিক্ষা করতে যান। এছাড়া দারফুরের জমজম বাস্তুচ্যুতি শিবিরে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘাতের কারণে এই অঞ্চলে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন। ২৬ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। হাসান ইব্রাহিম ইয়াহিয়া এখন ফারচানায় তাঁবুর পেছনে একটি ছোট জমিতে চিনাবাদাম চাষ করেন। তিনি বলেছেন, আমরা সব হারিয়েছি। কোনো আশা ছাড়াই আমরা অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। রয়টার্স জানিয়েছে, এমএসএফের জরুরি বিভাগের প্রধান মিশেল অলিভিয়ে লাশারিতে বলেন, ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী সবচেয়ে সম্ভাব্য এবং ভীতিকর ব্যাখ্যা হলো-মানুষদের পালানোর পথে হত্যা করা হচ্ছে, আটকানো হচ্ছে বা তাড়া করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বেঁচে ফেরা অনেকেই জানান, আরএসএফ যোদ্ধারা বয়স, লিঙ্গ বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে আলাদা করে মুক্তিপণ দাবি করছে-যার পরিমাণ ৫০ লাখ থেকে তিন কোটি সুদানি পাউন্ড (আট হাজার ডলার থেকে প্রায় ৫০ হাজার ডলার) পর্যন্ত। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আরএসএফ কিছু বন্দিকে গাড়ির চাকায় পিষে হত্যা করেছে। নাতি-নাতনিদের নিয়ে পাঁচ দিন হাঁটার পর তাওইলায় পৌঁছাতে পেরেছেন ফাতিমা আব্দুল রহিম। তিনি বলেন, তারা ছেলেদের মারধর করেছে, আমাদের সব কিছু নিয়ে গেছে। পরে আমরা জানতে পারি যে, আমাদের পরের দলে থাকা মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে-কিন্তু আমাদের মেয়েরা পালিয়ে বেঁচেছে। শহর থেকে পালানো তরুণী রাওয়া আবদাল্লাহ জানান, তার বাবা এখনো নিখোঁজ। তিনি বলেন, আমরা জানি না তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, পালাতে পেরেছেন নাকি আহত হয়েছেন। গত বুধবার রাতে আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেতি’ দাগালো তার যোদ্ধাদের বেসামরিক মানুষকে রক্ষার নির্দেশ দেন এবং বলেন, অপরাধীরা শাস্তি পাবে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর এল-ফাশের মাতৃসদন হাসপাতালে আরএসএফ অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে এবং প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
