|
বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
নোমাইনুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি
|
![]() বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, "অধ্যাপক মোঃ আবু তাহের, সিনিয়র সহ-সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আলমগীর কবির (সাবেক মেয়র), মহাসচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। মোঃ আনিসুজ্জামান ডালিম (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান), সাংগঠনিক সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। মোঃ লোকমান হোসেন, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, খাগড়াছড়ি জেলা। সালমা আহমেদ মৌ, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা নাগরিক পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন, "মোঃ আবদুল কাইয়ুম, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা। এবং সঞ্চালনায় ছিলেন, "মোঃ মোক্তার হোসেন সোহেল, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা। বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পাহাড়ি ও সমতলের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, শান্তি ও উন্নয়ন বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিয়ে আসছে। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯৭ সালের তথাকথিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবে “কালো চুক্তি” হিসেবে পরিণত হয়েছে, কারণ এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আসেনি বরং এক শ্রেণির অস্ত্রধারী গোষ্ঠী এখনো পাহাড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ৩৬ হাজার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও অধিকাংশ ঘটনার বিচার আজও হয়নি। বক্তারা দাবি জানান, অবিলম্বে পাহাড়ের সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, এই কালো চুক্তির পর পাহাড় থেকে যেসব সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে পুনঃস্থাপন করতে হবে। কারণ, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা। তারা জোর দাবি জানান, পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সেসব সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে। বক্তারা বলেন, “আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। দেশের যেকোনো প্রান্তে অবাধ চলাচল ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করার অধিকার আমাদের আছে—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।” সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ইঙ্গিত করে বক্তারা বলেন, ভারতের মদদে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় রয়েছে। তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতের যোগসাজশে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে আবারও সংগ্রামে নামতে প্রস্তুত নাগরিক পরিষদ। বক্তারা আরও বলেন, পাহাড়ের বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামো, শিক্ষা, চাকরি ও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের মতে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পাহাড়ে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তারা জোর দিয়ে বলেন—“আমরা পাহাড়ের নাগরিক, আমরা বাংলাদেশেরই নাগরিক, আমাদের বঞ্চিত করা যাবে না।” এক পর্যায়ে বক্তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা স্মরণ করে বলেন, “যদি তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন না করতেন, তবে এই অঞ্চল আজও বিচ্ছিন্ন ও অনুন্নত ‘জুমল্যান্ড’ হয়ে যেতো । তারা বলেন, জিয়াউর রহমানের সেই সিদ্ধান্ত পাহাড়ের উন্নয়ন, ঐক্য ও জাতীয় সংহতি রক্ষায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। বক্তারা স্মরণ করেন ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচন চলাকালে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের। তারা বলেন, “নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সময় যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের পরিবারের পুনর্বাসন আজও হয়নি, এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।” তারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পূর্ণ পুনর্বাসনের দাবি জানান। সম্মেলনে বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখার সভাপতি, সম্পাদকসহ শতাধিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে “আমার পাহাড়—আমার জীবন” স্লোগানটি প্রতিধ্বনিত হয়, আর বক্তাদের বক্তব্যে পাহাড়ের শান্তি, উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকারের আহ্বান উঠে আসে। সম্মেলনের শেষে বাঘাইছড়ি উপজেলা নাগরিক পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মোক্তার হোসেন সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবছার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফসান হোসেন মাসুদ এবং বাঘাইছড়ি পৌর নাগরিক পরিষদের সভাপতি হিসেবে মোঃ মহিউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোঃ নুরুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়। আয়োজকরা জানান, সংগঠনটি আগামীতেও পার্বত্য অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র নির্মূল, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাবে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
