ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
তত্ত্বীয় জ্ঞানের সীমানা পেরিয়ে ফিড মিলে বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের সফর
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 17 November, 2025, 6:38 PM
সর্বশেষ আপডেট: Monday, 17 November, 2025, 8:12 PM

তত্ত্বীয় জ্ঞানের সীমানা পেরিয়ে ফিড মিলে বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের সফর

তত্ত্বীয় জ্ঞানের সীমানা পেরিয়ে ফিড মিলে বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের সফর

প্রায় টানা আঠারো দিনের সেমিস্টার ফাইনালের চাপ ও ক্লান্তির ভারে যখন মন একেবারে নিস্তেজ, তখন সিআরের সাহেবের বার্তা পরদিনই ফিশ নিউট্রিশন কোর্সের শিক্ষাসফর। মনে হলো, যাক! একঘেয়েমির দেয়াল থেকে বের হতে পারব।

 "মাছে ভাতে বাঙালি"—এই চিরকালীন প্রবাদ শুধু কথামালা নয়; এটি আমাদের সংস্কৃতি, জীবনযাপন আর মাটির গন্ধমাখা অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। দেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অমূল্য অবদান বহন করে প্রান্তিক জেলেরা; সেই সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিয়েছে বড় বড় ফিশ ফিড কোম্পানিগুলো, যারা জলজ সম্পদকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।

মাছের পুষ্টি ও মানসম্মত ফিড প্রস্তুতকরণ বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন একজন ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েটের পেশাগত যাত্রার অপরিহার্য ধাপ। বইয়ের পাতায় আঁকা তত্ত্ব যেমন বুনিয়াদ গড়ে দেয়, তেমনি এই তত্ত্বের প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায় মাঠে, ল্যাবে, আর বাস্তব অভিজ্ঞতার অনবরত স্পর্শে। পাঠ্যসূচিতে থাকা এসব বিষয় আমাদের দিশা দেখায়, কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোই এগুলোকে করে তোলে পূর্ণাঙ্গ, জীবন্ত।

এই উপলব্ধি থেকেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগ আয়োজন করে ফিশ নিউট্রিশন কোর্সের একটি সমৃদ্ধ শিক্ষাসফর—গন্তব্য টংওয়ে ফিড মিলস বাংলাদেশ। তত্ত্ব আর প্রয়োগের সেতুবন্ধনে এই সফর যেন আমাদের সামনে খুলে দেয় নতুন দিগন্ত; যেখানে বইয়ের সীমা ছাড়িয়ে জ্ঞানের নতুন আলো ছড়িয়ে পড়ে বাস্তবতার মাটিতে।

চারিদিকে হালকা কুয়াশার চাদর যেন আসন্ন শীতের আগমন বার্তা ঘোষণা করছিল। শিক্ষা সফরের উদ্দীপনায় দেখলাম আমার সহপাঠীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালিপ্যাডে এসে একত্রিত হয়েছিল।

​কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মণ্ডলী এসে উপস্থিত হলে অপেক্ষার পালা শেষ হয়। আমাদের সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার হাশেম যার তত্ত্বাবধানে এই সফরটি পরিচালিত হয়েছিল।আরও ছিলেন অধ্যাপক ড. তানভীর রহমান,আমাদের এই কোর্সের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড.জান্নাতুল ফেরদৌস এবং সহকারী অধ্যাপক ফারহাবুন বিনতে ফরহাদ।

সকালে রৌদ্রোজ্জ্বল ও মনোরম আবহাওয়ায় সকলের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে ১০ নভেম্বর (সোমবার) সকাল সাড়ে ৮টায় আমরা গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত চাইনিজ কোম্পানি টংওয়ে গ্রুপের টংওয়ে ফিড মিল বাংলাদেশ উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু করি।

দুপুর ১২টায় আমরা আমাদের প্রথম গন্তব্যে পৌছায় আমাদের স্বাগতম জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের হেড রিপ্রেজেনটেটিভ (এইচ আর) মো সোহরাব হোসেন, প্রোডাকশন অফিসার আলীম হোসেন সহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ব্যক্তি ছিলেন। সেখানে আমাদের শিক্ষক আমাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন এবং কোম্পানির প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানালেন কোম্পানির এইচ আর এবং তিনি নিজে প্রতিটি বিষয় আমাদের শেখান। ফিডের কাচামাল তৈরি থেকে শুরু করে তার কোয়ালিটি, প্যাকেজিং এবং বাজারজাত করণের প্রতিটি শাখা দেখান। 

প্রথমে আমাদের দেখানো হয় বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন কাঁচামাল কীভাবে সঠিকভাবে ওজন করা হয়। এরপর প্রিমিক্স তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন মেথিওনিনসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেডিসিন পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যে গুদামঘরটি দেখানো হয় তার ধারণক্ষমতা ২,৫০০ টন, যেখানে এসব কাঁচামাল সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তারা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ২০২৪ সালের মৎস্যখাদ্য বিধিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করে ফিড উৎপাদন করে থাকে।

এরপর দুপুরে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে কনফারেন্স হলে আমাদের একটি ব্রিফিং দেওয়া হয়। সঙ্গে ছিল দুপুরের আপ্যায়ন—যদিও সবাই ক্লান্ত, তবুও বিভিন্ন উপঢৌকনের কারণে সবার মুখে খুশির হাসি ফুটে উঠেছিল। ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারি। জানা যায়, ময়মনসিংহে প্রায় ৩০ বিঘা জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বিস্তৃত। এখানে দুটি আধুনিক প্ল্যান্টে বছরে প্রায় ২ লাখ টন ফিড উৎপাদিত হয়, যা আগামী পাঁচ বছরে ৩ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এরপর বিকেল ৩টার দিকে প্রথম প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা হই নারিশ ফিশ ফিডস লিমিটেডের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে কার্প মাছের ফিড তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সরাসরি দেখা সুযোগ হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের ল্যাব ঘুরিয়ে দেখান এবং জানান, বাইরে থেকে আনা প্রতিটি কাঁচামাল আগে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। 

কারণ প্রতিটি মাছের জন্য ফিডের ফর্মুলা আলাদা এবং গুণগত মান নিশ্চিত না হলে পরবর্তী ধাপে এগোনো হয় না। তারা প্রতিষ্ঠানের আলাদা একটি অংশে নিজেদেরই মাছ চাষ করে, যেখানে তৈরি করা ফিড ব্যবহারের পর মাছের বৃদ্ধি কেমন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। সবশেষে রাত ৮টার দিকে আমরা সেখান থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিই।

তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রায়োগিক জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই, আর এই শিক্ষাসফর আমাদের বইয়ের সীমানা পেরিয়ে বাস্তবতার স্পর্শে জ্ঞানকে করেছে আরও পরিপূর্ণ। সারাদিনের ক্লান্তি চাপা দিয়ে ফেরার পথে বাসভর্তি হাসি–আনন্দ, গানের তালে আনন্দ করতে থাকে। স্নাতক জীবনের শেষ প্রহরে মনে হয় বন্ধুত্বের এই গল্পগুলবা এই সময়গুলো একসময় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু স্মৃতির পাতায় এই মুহুর্তগুলো থাকবে জীবন্ত।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status