|
মধ্যবিত্তদের ধনী হতে বাধা দেয় যে ৫টি অর্থনৈতিক ফাঁদ!
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() মধ্যবিত্তদের ধনী হতে বাধা দেয় যে ৫টি অর্থনৈতিক ফাঁদ! বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ফাঁদ, যা অজান্তেই মানুষকে বারবার একই চক্রে আবদ্ধ করে রাখে। নিচে সেই পাঁচটি ফাঁদ ও সেগুলো থেকে মুক্তির উপায় তুলে ধরা হলো। ১. চেহারায় সচ্ছলতা দেখানো, বাস্তবে শূন্যতা চাকরিতে পদোন্নতি বা বেতন বাড়লেই অনেকেই প্রথমে গাড়ি বদলান, নতুন বাড়িতে ওঠেন বা দামি গ্যাজেট কেনেন। তাৎক্ষণিকভাবে এটি ভালো লাগলেও দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাসই হয়ে ওঠে ‘লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন’ বা জীবনযাপনের অতিবৃদ্ধি। এভাবে আয় বাড়ার সঙ্গে ব্যয়ও যদি একই হারে বাড়ে, তাহলে প্রকৃত সঞ্চয় বা বিনিয়োগের জায়গা আর থাকে না। যাঁরা প্রতিবার বেতন বাড়লে জীবনযাত্রা উন্নত করার পরিবর্তে সঞ্চয়ে মনোযোগ দেন, তারাই ধীরে ধীরে সম্পদ গড়ে তুলতে পারেন। জীবন উপভোগ করা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু প্রতিবার ‘স্বল্পমেয়াদি আনন্দ’-এর পেছনে ছুটলে ‘দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি’ কখনোই আসে না। ২. একমাত্র উপার্জনের উৎসের ওপর নির্ভরতা মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশের ধারণা—একটি ভালো চাকরিই জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। কিন্তু বাস্তবে একমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করা আজকের অর্থনীতিতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। চাকরি হারানো, অর্থনৈতিক মন্দা বা হঠাৎ কোনো বিপর্যয় মুহূর্তেই সব হিসাব নষ্ট করে দিতে পারে। যাঁরা প্রকৃত সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তাঁরা প্রায় সবাই বহুমুখী আয়ের উৎস তৈরি করেছেন—কখনও ছোট ব্যবসা, কখনও রিয়েল এস্টেট, কখনও অনলাইন আয় বা বিনিয়োগ। শুরুটা ছোট হতে পারে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা টেকসই সম্পদে পরিণত হয়। সুতরাং শুধুমাত্র একটি বেতনের ওপর নয়, বরং নিজের দক্ষতা ও আগ্রহের জায়গায় দ্বিতীয় আয়ের পথ তৈরি করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ৩. ভয়ে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকা অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ টাকা হারানোর ভয়ে বিনিয়োগ এড়িয়ে চলেন। ফলে তাঁদের অর্থ বছরের পর বছর সঞ্চয়ী হিসাবে পড়ে থাকে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে তার মূল্য কমিয়ে দেয়। ওয়ারেন বাফেটের ভাষায়, “ঝুঁকি আসে তখনই, যখন আপনি জানেন না আপনি কী করছেন।” বিনিয়োগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানই ভয় কাটানোর একমাত্র উপায়। ধীরে ধীরে ইনডেক্স ফান্ড, মিউচুয়াল ফান্ড বা বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও সম্পর্কে জানুন এবং নিয়মিত ছোট অঙ্কের বিনিয়োগ শুরু করুন। নিখুঁত সময়ের অপেক্ষা করতে গেলে কখনোই শুরু করা হবে না। মাঝারি ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়। ৪. ক্রেডিট কার্ডের ঋণে ডুবে থাকা ভোক্তা ঋণ আজকের মধ্যবিত্ত জীবনের এক নীরব শত্রু। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা উপকারে আসে, কিন্তু সময়মতো বিল পরিশোধ না করলে সেটিই হয়ে যায় সর্বনাশের ফাঁদ। উচ্চ সুদের কারণে ছোট ঋণও দ্রুত বিশাল বোঝায় রূপ নেয়, যা সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। মার্ক কিউবান একবার বলেছিলেন, “যদি আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তবে আপনি ধনী হতে চান না।” এই বক্তব্যের মধ্যে কঠোর সত্য লুকিয়ে আছে—অপ্রয়োজনীয় ঋণ মানেই আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাওয়া। তাই ধার নিলে তা যেন মূল্যবৃদ্ধিকারী বিনিয়োগের জন্যই হয়—যেমন ব্যবসা বা সম্পদ ক্রয়। নচেৎ সেটি হয়ে যাবে আপনার আর্থিক অগ্রগতির অন্তরায়। ৫. দক্ষতা উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি যত দ্রুত বদলাচ্ছে, পুরোনো দক্ষতার ওপর নির্ভর করে থাকা মানে নিজেকে পিছিয়ে দেওয়া। অনেক মধ্যবিত্ত কর্মজীবী আগের জ্ঞান নিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে চান, কিন্তু এভাবে পেশাগত সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। নতুন দক্ষতা অর্জন মানেই কেবল প্রোগ্রামিং শেখা নয়; ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা অ্যানালিটিকস, বা অনলাইন শিক্ষাদানের মতো ক্ষেত্রও হতে পারে বাড়তি আয়ের সুযোগ। আজ অসংখ্য অনলাইন কোর্স ও ফ্রি টিউটোরিয়াল রয়েছে, যা নিজের সুবিধামতো সময়ে শেখা যায়। শেখা বন্ধ মানেই আয় বৃদ্ধি থেমে যাওয়া। তাই প্রতিনিয়ত শেখার অভ্যাসই হতে পারে আপনার পেশাগত ও আর্থিক অগ্রগতির চাবিকাঠি। এই পাঁচটি ফাঁদ একে একে ছোট মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এগুলোই অনেককে মধ্যবিত্ত সীমারেখার মধ্যে আটকে রাখে। মুক্তি পেতে হলে লাগবে সচেতন সিদ্ধান্ত, নিয়মিত শৃঙ্খলা এবং নিজের লক্ষ্য নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সাহস। হয়তো এখনই জীবনযাত্রা কিছুটা সংযমী করে একটি বিনিয়োগ শুরু করা, কিংবা প্রতিদিন কিছু সময় রেখে নতুন দক্ষতা শেখা—এসব ছোট পদক্ষেপই ভবিষ্যতের বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। অর্থনৈতিক সাফল্য কোনো ভাগ্যের খেলা নয়; এটি ধৈর্য, জ্ঞান এবং নিয়মিত চর্চার ফল। আজ থেকেই শুরু করুন। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
