|
খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে হত্যা, লাশ ফেলা হয় খালে
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে হত্যা, লাশ ফেলা হয় খালে রাঙামাটিতে সাড়ে চার মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বামীকে খুনের এমন বিবরণ তুলে ধরেছেন। একই ঘটনায় তাঁর দুই সহযোগীও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নিখোঁজ থাকা ওই ব্যক্তির নাম দিদার আলম (২৮)। তিনি রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা থানার পশ্চিম কোদালা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁর লাশের সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় কোহিনূর ছাড়া জবানবন্দি দেওয়া অপর দুজন হলেন দিদারের প্রতিবেশী মো. হামজা ও মো. সেলিম। দিদার নিখোঁজ থাকার ঘটনায় এ ছাড়া মো. খালেক নামে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার রয়েছেন। গত ৩০ মে দিদার নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় দিদারের বাবা জামির হোসেন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরও দিদারের সন্ধান না মেলায় গত জুলাই মাসে দিদারের স্ত্রী কোহিনূর আক্তার ও আবদুল খালেক নামে ওই ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন জামির হোসেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ২৭ জুলাই পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রামের জেলা পরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, তদন্তের একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকা থেকে কোহিনূর ও খালেককে ৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১০ অক্টোবর কোহিনূর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ সময় তিনি স্বামীকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেছেন। রুহুল আমিন জানান, কোহিনূর আদালতকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে মো. হামজা ও খালেকের পরকীয়া ছিল। হামজার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি দিদার জানতেন না, তবে খালেকের বিষয়টি জানতেন। এ কারণে কোহিনূরের সঙ্গে দিদারের প্রায়ই ঝগড়া হতো, কোহিনূরকে মারধরও করতেন দিদার। মারধরের বিষয়টি কোহিনূর হামজাকে জানালে তিনি দিদারকে হত্যার পরামর্শ দেন। হামজা দিদারকে হত্যার উদ্দেশ্যে চারটি ঘুমের ওষুধ কোহিনূরকে এনে দিয়েছিলেন। ঘটনার রাতে ওষুধগুলো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিদারকে খাওয়ান কোহিনূর। পরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দিদারকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়। কোহিনূর জবানবন্দিতে বলেছেন, স্বামীকে খুনের সময় হামজা ও তাঁর সহযোগী সেলিম পার্শ্ববর্তী পশ্চিম কোদালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে বসে লুডু খেলছিলেন। কোহিনূর স্বামীকে হত্যার বিষয়টি সেখানে গিয়ে তাঁদের জানান। এরপর ধান শুকানোর প্লাস্টিকের চাটাই দিয়ে দিদারের লাশ মুড়িয়ে হামজা ও সেলিমের সহযোগিতায় পাশের খালে ফেলে দেওয়া হয়। সেদিন অঝোরে বৃষ্টি হওয়ায় লাশটি পানির স্রোতে ভেসে যায়। পিবিআই জানায়, কোহিনূরের জবানবন্দির পর হামজা ও সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাও ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে গত শনিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, কৃষক দিদারের লাশটি এখনো পাওয়া যায়নি। এটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। খালে সেদিন পানির স্রোত বেশি থাকায় দ্রুত লাশটি ভেসে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘একসঙ্গে দুজনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান কৃষক দিদারের স্ত্রী কোহিনূর। খুনের ঘটনার কয়েক মাস আগে গোপনে স্বামীকে তালাকের জন্য আবেদনও করেন তিনি। প্রেমিক হামজার পরিকল্পনায় স্বামীকে খুন করে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার পর আরেক প্রেমিক খালেককে বিয়ে করে গাজীপুরে চলে যান কোহিনূর।’ জানতে চাইলে নিহত কৃষকের বাবা ও মামলার বাদী জামির হোসেন বলেন, ‘চার মাস হলেও ছেলের লাশটি এখনো পাইনি। আমি এ ঘটনায় জড়িত সবার ফাঁসি চাই।’ |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
