|
কুড়িগ্রামের উলিপুরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ২৮ বছর পর ফিরে এসেছে
আহম্মেদুল কবির, কুড়িগ্রাম
|
![]() কুড়িগ্রামের উলিপুরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ২৮ বছর পর ফিরে এসেছে হৃদয়বিদারক ও আনন্দঘন এই ঘটনাটি জানতে ও সাইফুলকে একনজর দেখার জন্য গ্রামের মানুষজন ছুটছে সাইফুূলদের বাড়িতে। অপরদিকে সাইফুলকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত তার পিতা- মাতা পরিবার ও স্বজনরা। সাইফুলের হারিয়ে যাওয়া ঘটনা শুনে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জানা যায়, পরিবারে ৫ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিলো ৪র্থতম। ৮শতক বাড়িভিটে ছাড়া তাদের পরিবারের সম্পদ বলতে আর কিছুই ছিলো না। পরিবারের ১০জনের সংসারে মা-বাবা গ্রামে- গ্রামে কাজ করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। অধিকাংশ সময় কাটে পরিবারের সদস্যদের খেয়ে না খেয়ে। পাশ্ববর্তি গ্রামের এক নারীর সঙ্গে ১৯৯৭সালে ০৯ বছরের সাইফুলকে চট্টগ্রামে মানুষের বাসায় কাজের উদ্দেশ্যে পাঠায় পরিবার। পথিমধ্যে স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে সাইফুল প্রাকৃতিক কাজ সারতে ট্রেন থেকে নেমে পড়লে ট্রেনটি ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ সাইফুল। চট্টগ্রামের সিতাকুন্ডা উপজেলার ভাটিয়ারি রেল স্টেশন একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় ও কাজ জোটে সাইফুলের। সেখানেই কেটে যায় ২৮টি বছর। গতসপ্তাহে সাইফুলদের গ্রামের এক বাসিন্দার সঙ্গে চট্টগ্রামে হঠাৎ কথা হয়। সাইফুল জেলা-উপজেলার নাম বলতে না পারলেও বাবা-মা এবং গ্রামের নাম বলতে পারে। এভাবেই পরিবারের খোঁজ মেলে সাইফুলের। পরিচয় নিশ্চিত হবার পরে সাইফুলের বড় ভাই মাহফুজ রহমান গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে গিয়ে ভাটিয়ারি রেল স্টেশনে চায়ের দোকান থেকে গত শনিবার সকালে সাইফুলকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। দীর্ঘ ২৮ বছর প্রতীক্ষার পর পরিবারের সঙ্গে সাইফুলের এই মিলন যেমন ছিলো বেদনার তেমনি ছিলো আনন্দের। হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে দীর্ঘ সময় পর ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত পিতা- মাতা। স্থানীয় গ্রামবাসীরা ও আত্নীয়- স্বজনরাও খুব খুশি। সাইফুলের ফিরে আসার খবর গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষের ভীড় জমে সাইফুলদের বাড়িতে। সাইফুলের বড় ভাই মাহফুজার রহমান বলেন, গত সপ্তাহে সাইফুলের তথ্য পাই। এরপর সেই ঠিকানা মোতাবেক গিয়ে আমার ভাইকে দেখে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি। সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। এসময় ভাটিয়ারি রেল স্টেশনে চায়ের দোকানের মালিক মোস্তাকিন এর সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্ট্যাম্পে লিখিত এবং ভোটার আইডি দিয়ে আমার ভাইকে নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসি। এতোদিন পরে ভাইকে ফেরত পাওয়ার অনুভূতির ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় বলে তিনি জানান। অশ্রুসিক্ত বাবা আব্দুল লতিফ বলেন, ছেলেকে দেখে আমি চিনতে পেরেছি। ছেলের জন্য নামাজ পড়েছি, আল্লাহর কাছে অনেক কেদেছি। ছেলেকে পেয়ে খুশি হয়েছি। অশ্রুসিক্ত মা আমেনা বেগম বলেন, সংসারে অভাব-মঙ্গা, খাবার জুটতো না। পরিবারের ১০জন সদস্য খাই- না খাই দিন কাটছে। সেজন্যে ছোট শিশুকে মাইনষ্যের বাড়িতে কাজের জন্য এলাকার এক মহিলার সাথে চট্টগ্রামে পাঠে দেই। যাবার পথে ছেলে মোর হারায় যায়। এরপর বহু খুজেঁছি,কবিরাজের কাছে গেছি। আল্লাহর কাছে কানছি, আল্লাহর অহমতে ছাওয়াটাক ফেরত পাইছি। এজন্যে আল্লার দরবারোত সুকরিয়া জানাই। স্থানীয়রা বলেন, সাইফুলের দাদী মসজিদের বারান্দায় আঁচল বিছিয়ে সাইফুলকে ফিরে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে আমরা দেখেছি। এদিকে নাতী ফাইফুল ফিরে এলো সত্যি কিন্তু বেশ কয়েক বছর হলো ওর দাদী মারা গেছে। দাদী বেঁচে থাকলে আজ সাইফুলের ফেরত আসায় অনেক খুশি হতো। সাইফুলদের পরিবার এখনো হতদরিদ্র। দীর্ঘ সময় পর সাইফুল ফিরে আসার খবর পৌঁছে গেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কানে। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা সাইফুলদের অসহায়ত্বের কথা শুনে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকার অনেকেই তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চান বলে জানা গেছে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
