ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের গাফলতিতে চরম ভোগান্তি
সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: Monday, 30 June, 2025, 5:30 PM

আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের গাফলতিতে চরম ভোগান্তি

আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের গাফলতিতে চরম ভোগান্তি

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদারের গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া সড়কের কাজ। দীর্ঘ প্রায় তিন বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় সড়ক ব্যবহারকারী কয়েক লাখ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।স্থানীয়দের অভিযোগ, রহস্যজনক কারণে ঠিকাদার কাজ শেষ করছেন না। 

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল অংশে টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের আওতায় ২৪.৬৫০ কি.মি. অংশে রিজিড প্রেভমেন্ট ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ।এতে টাঙ্গাইল অংশে প্রকল্প ব্যায় ধরা হয় ২ শ ৯৪ কোটি ৬০ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা।প্রকল্পের কাজ পায় আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ও এনডিই নামের দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

২৪ সালের ৩০ জুন ৫ টি প্যাকেজের  কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ দীর্ঘায়িত হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ২৪ সালের ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দীর্ঘ সময় প্যাকেজ ১ ও প্যাকেজ ২ এর স্থবির হয়ে পড়ে। তবে আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ৫ এর অন্তর্ভুক্ত ২ টি ব্রীজ ও ২ টি কালভার্টের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাকি দুটি প্যাকেজ ৩ ও প্যাকেজ ৪ এ কাজ করছে এনডিই। 

এরমধ্যে আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ১ এ ৬ কি.মি. এর বিপরীতে প্রকল্প ব্যায় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। কাজ সম্পন্ন করেছে ৮.৭৫ শতাংশ। এর বিপরীতে বিল উত্তোলন করেছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্যাকেজ ২ এ ৬ কি.মি. এর বিপরীতে প্রকল্প ব্যায় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা। কাজ সম্পন্ন করেছে ২৯.৭৭ শতাংশ। এর বিপরীতে বিল উত্তোলন করেছে ১৯ কোটি ৮১ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

প্যাকেজ ৫ এ ২ টি ব্রীজ ও ২ টি কালভার্টের  বিপরীতে প্রকল্প ব্যায় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ১৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। কাজ সম্পন্ন করেছে ২.২১ শতাংশ। এর বিপরীতে বিল উত্তোলন করেছে ৯৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা। প্রকল্প ২৪ সালের ৩০ জুন এর মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শেষ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন  আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ । সময় বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে কোন আবেদন জমা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি। তবে এনডিই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টি ২ টি একটি প্যাকেজ ৩ এর  ৯২ শতাংশ শেষ করেছে। বাকি প্যাকেজ ৪ এর ৬৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে,  সড়কের বেশিরভাগ অংশে খানাখন্দসহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সাইফুল ইসলাম বলেন,সড়কের এমন অবস্থা একটু বৃষ্টি হলেই যাওয়ার উপায় নেই। না যায় হাটা না চালানো যায়   রিকশা।যে কামাই করি  তার বেশিরভাগ রিকশা মেরামত করতেই চইলা যায় ।

মোটরসাইকেল আরোহী শাহ্ আলম বলেন, উন্নয়নের নামে ভোগান্তি শুরু হইছে। কষ্ট লাঘবের জন্য সড়কের উন্নয়ন অথচ কষ্ট বেড়ে গেলো। লাভ হইলো কি?  স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা তো নাই। তাহলে ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তদন্ত করার দাবি জানাই।

আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নমিনেটেড সাব ঠিকাদারের প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন, আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথমে যে সাব ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করে তাদের অপারগতায় দীর্ঘদিন কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। পরে আমরা উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নমিনেটেড সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করি। ব্রিজ নির্মাণের সময় আছে। নির্দিষ্ট সময়েই তা শেষ হবে। রাস্তার কাজ শেষ করতে ব্যাংক জটিলতা দেখা দিয়েছে। 

একারনে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে পারছে না প্রতিষ্ঠান টি।আশা করছি আমাদের প্রতিষ্ঠান শীঘ্রই ব্যাংক জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে । তাছাড়া  নকশায় রাস্তা অন্তর্ভুক্ত জমির মালিকগণ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে বিলম্ব হওয়া ও জমি অধিগ্রহনের টাকা পরিশোধ না করায় কাজের গতি কমেছে। তবে শীঘ্রই সমস্ত সমস্যা সমাধান পূর্বক প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। 

সড়ক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মোল্লা  বলেন, আইসিসিএল-র‌্যাব-আরসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ ( প্যাকেজ ১,প্যাকেজ ২ ও প্যাকেজ ৫) গাফিলতির কারনে গত কয়েক মাস যাবত কাজটি শেষ করার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। দাপ্তরিক তাগিদ ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মহাদয়ের মাধ্যমে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে।তবুও কাজটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কাজের চুক্তির সাথে নিরাপত্তা জামানত এর মেয়াদও শেষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন নিরাপত্তা জামানত দাখিল না করায় সময় বৃদ্ধির আবেদন অগ্রায়ণ সম্ভব হয়নি। 

এতদ বিষয় সড়ক বিভাগ টাঙ্গাইল এর নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়কে গত ৫ জানুয়ারী ২৫ এ লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, গত বছরই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদেরকে ৪ মার্চ ২৫ এ সড়ক বিভাগ টাঙ্গাইল, 
 ১০ মার্চ ২৫ এ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মহোদয় ও পিপিআর ২০০৮ মোতাবেক চুক্তি বাতিল এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশসহ একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ২৩ জুন ২৫ তারিখে স্টিয়ারিং কমিটির সভায় ওই সড়কের বিষয়ে সচিব মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টার্মিনেশন করা হবে। পরবর্তীতে তাদের লাইন্সেস হ্যাম্পার করা হবে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status