|
পিরোজপুরে জমে উঠেছে শতবর্ষী চাঁইয়ের হাট
জালিস মাহমুদ, পিরোজপুর
|
![]() পিরোজপুরে জমে উঠেছে শতবর্ষী চাঁইয়ের হাট উপকূল হিসেবে পরিচিত পিরোজপুর জেলা পানিতে ডুবে যায় বর্ষার শুরুতে। পিরোজপুর জেলার সিংহভাগ এলাকা বর্ষার শুরুতেই প্লাবিত হওয়ায় গ্রামীণ মানুষের মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে চাঁইয়ের ব্যবহার করে। নদী, খাল ও বিল পিরোজপুর জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহমান থাকায় শত বছর আগে থেকেই কালিগঙ্গা নদীর তীরের শ্রীরামকাঠী বাজার চাঁইয়ের হাটের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতি রবিবার ও বুধবার পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীরামকাঠি বাজারে চাঁইয়ের পসরা সাজিয়ে বসে চাঁই ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ বাজারে সড়ক ও নদীপথে বিক্রির জন্য অর্ধশতাধিক ব্যক্তি চাঁই নিয়ে হাটে এসেছে। তবে তাদের মধ্যে স্থানীয় কৃষক বেশি। নাজিরপুর উপজেলা ছাড়াও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা, বানরীপাড়াসহ জেলার অন্য উপজেলা থেকে বিক্রির চাঁই নিয়ে আসেন এই হাটে। দুর দুরান্ত থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসছেন এখানে। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক দঁড়ি, নারকেলের তৈরি এক ধরনের দড়িঁ (কাতা), বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় চাঁই। কুঁড়ি ( বিশটি এক কুঁড়ি) হিসেবে, পিচ হিসেবে বিক্রি করা হয় চাই। ৬ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত এক কুঁড়ি চাঁই বিক্রি হয় এ বাজারে। বেশ কয়েকজন চাঁইয়ের কারিগর ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে জানান, বর্ষা এলেই এ অঞ্চলে চাঁইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। সারা বছর অন্য কাজ করলেও এসময় তারা শুধু চাঁই তৈরি করেন। বছরের তিন থেকে চার মাস তাদের এ ব্যস্ততা থাকে। এখন দিন-রাত চাঁই তৈরিতেই সময় কাটছে তাদের ও এ কাজে সাহায্য করে থাকে গৃহিনীরা। এ হাটের চাঁই পাইকারী ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গা বিক্রি করে থাকেন পাইকাররা। চাঁই বিক্রি করতে আসা সুখরঞ্জন মৃধা বলেন, এ বছর প্রথম হাটে এসেছি। ৪ হাজার টাকা কুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে। এক কুঁড়ি চাই তৈরিতে হাজার খানেক টাকা খরচ হয়। সুশীল নামের এক চাঁই বিক্রেতা জানান, কুঁড়ি ৩ হাজার টাকা ধরে ১২পিচ বিক্রি করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম কম। পাইকারী ক্রেতা মিজান ফকির বলেন, গত বছরের তুলনায় কুঁড়িতে ৪০০-৫০০ টাকা বেশি। এক পিচের দাম ১০০ থেকে ১২৫ টাকা পড়ে। চাঁইগুলো এ বাজার থেকে ক্রয় করে খুচরা বিক্রি করবো কাউখালি, ভান্ডারিয়া, আউমগা, বদ্দিখালী, বরগুনা। ১০০ টাকা পিচ ধরে ৪০০ শত পিচ কিনেছি। দীর্ঘ বিশ বছর বর্ষার সময়ে এ পেশায় থাকেন তিনি। সৈয়দ শেখ নামের এক পাইকার জানান, চাঁইয়ের দাম একটু বেশি, সঙ্গে খাজনাও বেশি নেন হাটের ইজারাদার। যে চাঁই কিনছি এটা বিক্রি করবো কাউখালি। শ্রীরামকাঠী বন্দর কণ্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল কবির রাসেল জানান, একশো বছরের পুরাতন এই হাটে দূর দুরন্ত থেকে মানুষ চাঁই নিয়ে আসে। পিরোজপুর জেলার সব চেয়ে বৃহত্তর চাঁইয়ের হাট বসে এ বাজারে। এই হাটে চাঁই বিক্রি করতে ও ক্রয় করতে আসা সকলকে আমরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। চাঁই একটি কুঠির শিল্প এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের সাহায্য করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
