আরজি কর হাসপাতালের প্রতিটি ইঁট পাথরে অজস্র রহস্য। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে এমন সব ঘটনা য শুনলে শিউরে উঠতে হয়। অজস্র সাধারণ মানুষের ভরসার সরকারি হাসপাতালের ভেতরে যে কি চলতো তা অকল্পনীয়। জানা গেছে, রাতের আঁধারে আর জি কর হাসপাতালের মর্গে রাখা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির কার্যক্রম গত কয়েক বছরে ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল। সিবিআইয়ের তদন্তকারী সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, হাসপাতালের দুর্নীতির তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোর বেশ কিছু মর্গ কার্যত দুর্নীতির আড়ত হয়ে উঠেছে। এমনকি তদন্তকারী সূত্রের দাবি, গত সাত বছরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে অন্তত ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত মিলেছে। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকেও এক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সিবিআই সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মর্গে থাকা বেওয়ারিশ ব্যক্তির মরদেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবাধে অস্ত্রোপচার করে বের করে নেয়া হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দাম অন্তত ৪ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
শুধু অন্য রাজ্যেই নয়, প্রতিবেশী দেশেও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার করা হতো বলে তদন্তকারীরা কিছু তথ্য পেয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবদেহের হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, কিডনির চাহিদা বেড়েছে। মূলত চিকিৎসা শিক্ষায় এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজে লাগে।
তদন্তকারীরা বলছেন, আর জি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় মূল অভিযোগকারী আখতার আলির সঙ্গে কথা বলেও মর্গ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির বিষয়ে প্রাথমিক কিছু সূত্র মিলেছে। ওই সূত্রের ভিত্তিতে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই দুজনকে তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেআইনি অঙ্গ-ব্যবসার জোরালো তথ্য পাওয়া গেছে। আর জি কর হাসপাতালের মর্গে গত সাত বছরের ময়নাতদন্ত এবং বেওয়ারিশ দেহের নথি সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। ওই নথিতে কিছু অসঙ্গতিও পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি দক্ষিণবঙ্গের একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ বেআইনিভাবে বের করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে যান কয়েকজন। এই ঘটনায় হাসপাতালের বড় কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও স্থানীয় ডোমের ওপরেই চটজলদি দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। শেষমেশ ধামাচাপা পড়ে যায় বিষয়টি। তদন্তকারীদের দাবি, রাজ্যের বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের একাংশ ওই বেআইনি কাজে জড়িত বলে প্রাথমিক সূত্র পাওয়া যাচ্ছে এবং ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সন্দীপের জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলছে।
বেওয়ারিশ মরদেহ সাধারণত সাতদিন পেরিয়ে গেলেই পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ম রয়েছে। আর আইন অনুযায়ী, কোনো অজ্ঞাতপরিচয়ের মরদেহ থেকে অঙ্গ নিতে হলে স্বাস্থ্য ভবনের ছাড়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু এক্ষেত্রে ডাক্তারদের সিন্ডিকেটই বেআইনি অঙ্গ-ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত বলেই অভিযোগ উঠেছে।