ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৭ ভাদ্র ১৪৩১
ভারত চাইলেই কি বাংলাদেশের বন্যা এড়ানো যেতো?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Tuesday, 27 August, 2024, 10:30 PM
সর্বশেষ আপডেট: Sunday, 1 September, 2024, 3:25 PM

ভারত চাইলেই কি বাংলাদেশের বন্যা এড়ানো যেতো?

ভারত চাইলেই কি বাংলাদেশের বন্যা এড়ানো যেতো?

ভয়াবহ বন্যায় তলিয়েছে দেশের অন্তত ১১টি জেলা। আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘটেছে প্রাণহানি। ফল-ফসল, গবাদি পশুসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অপরিসীম! ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট এই বন্যাকে প্রাকৃতিক নয়, বরং পরিকল্পিত মানবসৃষ্ট বলে মনে করছেন অনেকে। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন, সবখানেই দায়ী করা হচ্ছে ভারতকে।

এই বন্যার জন্য শুরু থেকেই ভারতকে দায়ী করে আসছিলেন অনেকে। সামাজিক মাধ্যমে এজন্য #indiaout (#ইন্ডিয়াআউট) ট্রেন্ডও দেখা গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও চলমান বন্যাকে ভারতের চাপিয়ে দেয়া বন্যা বলে অভিযোগ তুলছে। বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে ভারত যেভাবে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানাচ্ছেন তারা।

উজানের বাঁধ খুলে দেয়ায় ভারত নিয়ম-নীতি মানেনি বলেই আকস্মিক এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনভাইরনমেন্ট সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুর রহমান। 
 
সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‌‘বাঁধের পানি ছাড়ার একটা নিয়ম আছে। আমাদের কাপ্তাই বাঁধে যেটা করা হলো- প্রথমে ৬ সেন্টিমিটার ছেড়ে দেয়া হলো। সেই পানি নদীতে স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হয়ে গেল। ২৪ ঘণ্টা পর আবার পানি ছাড়া হলো। কিন্তু ভারত এই সিস্টেমটা ফলো না করে সবগুলো বাঁধ একসঙ্গে খুলে দিয়েছিল। এর ফলে পানির প্রবাহ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, কোনোভাবে বাধা দেয়া সম্ভব ছিল না।’

তিনি বলেন, বাঁধ খুলে দেয়ার বিষয়টি ভারত আগে থেকে জানায়নি। পানি আমাদের দেশে ঢোকার পরে আমরা টের পেয়েছি। তারা আগে থেকে সংকেত না দেয়ায় আমাদের এই বিপর্যয়টা এসেছে।


আর তাই এটিকে প্রাকৃতিক বন্যা বলে মানতে চান না অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান। তার মতে, ভারত যদি পানি ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে পারতো তাহলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যাই হতো না।


তিনি বলেন, ‘সিকিমে প্রথম অবস্থায় যখন পানির স্তর উঁচু হচ্ছিল তখন তারা যদি প্রতিদিন দুই/তিনটা করে গেট খুলে দিত তাহলে আমাদের নদীর বিপৎসীমার উপর দিয়েই সব পানি চলে যেত। নদী ছাপিয়ে এত বিশাল অঞ্চল প্লাবিত হতো না, এত ক্ষয়ক্ষতিও হতো না।’ 
 
অধ্যাপক রিদওয়ানুর আরও বলেন, পানি ছাড়ার ব্যাপারে ভারতের কোনো নিয়ম-নীতি বা আন্তর্জাতিক আইন না মানার পেছনে কী কারণ সেটা জানি না। কূটনৈতিক কোনো কারণ আছে কী না বা কোনো প্রতিহিংসা আছে কী না; সেটা আমি জানি না। তবে তারা যেটা করেছে সেটা একেবারেই পানিসন্ত্রাস।


 
তিনি বলেন, ‘এই পানি তো অন্য কোনো জায়গা থেকে আসছে না। এটা তো পাহাড়ি ঢল। কী পরিমাণ পানি সেটা তো বোঝা যায়। সেই হিসাব করে যখনই তাদের ওপাশে পানি বিপৎসীমার উপরে উঠল, তখন থেকেই তারা ধীরে ধীরে ছাড়তে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এতে তাদেরও কিন্তু বিপর্যয় হয়েছে, সেখানেও বন্যা হয়েছে। পরে দেখা গেল, তারা সবগুলো বাঁধ একসঙ্গে খুলে দিলো।’


ভারতের বিহার ও ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির কারণে পানির চাপ বাড়ায় ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেটের সবগুলো খুলে দিয়েছে ভারত। এর ফলে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীসহ ফারাক্কার ভাটি এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলে সামাজিক মাধ্যমে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করছেন অনেকে। দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যার ভয়াবহতার কারণে ফারাক্কা ব্যারেজ খুলে দেয়ায় নতুন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে এর ফলে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আকস্মিক বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শ্রী রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘ফারাক্কা ব্যারেজের গেট খোলায় স্বাভাবিক গতিপথে নদীর ভাটিতে গঙ্গা/পদ্মায় ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হবে। এটি একটি স্বাভাবিক মৌসুমি অবস্থা। যা উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ঘটে থাকে।’

তিনি বলেন,  ফারাক্কা কোনো বাঁধ নয়, এটি ব্যারেজ। পানির স্তর ব্যারেজের সীমায় পৌঁছালে তা প্রবাহিত হয়।


ফারাক্কা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ার বিষয়ে অন্যান্যবারের মতো এবারও প্রোটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সময়মতো তথ্য শেয়ার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ভারতীয় মুখপাত্র।

ফারাক্কা খুলে দেয়ার কারণে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে বলে যেসব ভিডিও বা ভয়ভীতি ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোকে গুজব বলেও উল্লেখ করেন রণধীর জয়সওয়াল।

একই রকম কথা বলেছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর।

সোমবার সন্ধ্যায় সময় সংবাদকে তিনি জানান, যে হারে পানি বাড়ছে, এতে আগামী দুই-তিন দিনে এই অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা নেই। এখনও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে।
 


অঙ্কুর জানান, বর্ষার শুরু থেকেই ফারাক্কার ১০৯টি গেট খোলাই ছিল। এখন পদ্মায় পানির যে স্তর, গত ১৫ দিন আগে যা ছিল; তার চেয়ে কম। কাজেই বড় বন্যার কোনো শঙ্কা নেই।

অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুর রহমান জানান, ফারাক্কা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়া হলেও এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। আগে থেকেই ১০৯টি গেট ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত খোলা ছিল। এখন তারা এটা বাড়িয়ে ২০ সেন্টিমিটার করেছে। ফলে যে পানিটা আসবে তা আমাদের জন্য বিপর্যয় তৈরি করার কথা না। এই পানি নদীর বিপৎসীমার ভেতরেই থাকবে। সম্পূর্ণ খুলে দিলে তো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ফেনী-নোয়াখালীর বন্যার পর বাংলাদেশে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে; তার কারণেই হয়তো তারা ফারাক্কা ব্যারেজের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলছে।

ভারত যাতে এই সিস্টেমটা অন্যান্য বাঁধের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করে সেজন্য ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা উচিত বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পাংখা পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। পদ্মায় বিপৎসীমা ২২ দশমিক ৫ মিটার। বর্তমানে পানির স্তর রয়েছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। পদ্মা নদী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্য দুই নদী মহানন্দা ও পুনর্ভবায় পানি বাড়ার হার একই।
 
মহানন্দায় বিপৎসীমা ২০ দশমিক ৫৫ মিটার। বর্তমানে মহানন্দা নদীতে পানির স্তর রয়েছে ১৮ দশমিক ৪৯ মিটার। পুনর্ভবায় বিপৎসীমা ২১ দশমিক ৫৫ মিটার। বর্তমানে এই নদীতে পানির স্তর রয়েছে ১৮ দশমিক ৫৫ মিটার।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, দেশে চলমান বন্যায় প্রায় ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১০ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ২ জন।

কে এম আলী রেজা বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি, উপজেলার সংখ্যা ৭৪টি। পানিবন্দি পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে বন্যার পানি কমবে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব। তবে সমুদ্রে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। এতে নতুন কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status