ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
কুকি চিনের ইউটার্ন
মেজর নাসিম হোসেন (অব.)
প্রকাশ: Thursday, 18 April, 2024, 11:42 AM
সর্বশেষ আপডেট: Thursday, 18 April, 2024, 11:48 AM

কুকি চিনের ইউটার্ন

কুকি চিনের ইউটার্ন

কুকি চিন গোষ্ঠী কেএনএফ আবার স্বরূপে ফিরে এসেছে শান্তি কমিটিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সমঝোতা থেকে। কিছু দিন আগেই তারা বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলো, তারা কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হবেন না। এসব কিছু যে নিছকই একটা সময়ক্ষেপণ, নিজেদের আরেকটু গুছিয়ে নেওয়া, শক্তি সংহত করা বা সরকারি বাহিনীর অব্যাহত চাপ থেকে স্বস্তির কৌশল- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদের এজেন্ডা নিয়ে যারা ময়দানে নামে তাদের এসব পুরনো কৌশল। সরকার বা সরকারের দায়িত্বশীল মহলের উচিত ছিল আলোচনার টেবিলে দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে আমলে না নিয়ে তাদের সতর্কতা শতভাগ বজায় রাখা।

ইতিহাস বলে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন যখনই কোন আভ্যন্তরীন চাপে পড়ে তখনই নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে কোন সফট টার্গেট বেছে নেয়। 

এই পাহাড়েই জেএসএস ১৯৮৪ সালে মারিশ্যা থেকে আমেরিকার তেল অনুসন্ধানী কোম্পানি ‘শেল’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পুলিশ প্রহরার মধ্য থেকেই কৌশলে অপহরণ করে সরকারকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। কয়েক কেজি স্বর্ন, কোটি অঙ্কের নগদ অর্থ, টাইপ রাইটার মেশিন, সাইক্লোস্টাইল মেশিন সহ অনেক দাবী মিটানোর পর মুক্তি মেলে বিদেশিদের। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনভিজ্ঞ পুলিশকে বোকা বানিয়ে তারা সফলভাবে অপহরণ করে।  

সেবার জেএসএস এই অপহরণটি করে দলীয় ভাবে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় যখন তাদের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে নিহত (১০ নভেম্বর১৯৮৩) হয়ে দলটি বিভক্ত হয়। দলের বিভক্তি জেএসএস (সন্তু লারমা) কে প্ররোচিত করে অর্থ সংস্থানের জন্য বিদেশি নাগরিক অপহরণে। এতে দলের অর্থ সংকট কেটে যাবে, দলের জনসমর্থন বাড়বে আর সরকার জেএসএস’র বিভক্তি জনিত কারণে যে স্বস্তির অবস্থায় আছে তা থেকে উওর ঘটানো। আর বহির্বিশ্বের মনোযোগ অর্জন তা তো আছেই। 

শ্রীলংকার এলটিটিই যতবার কলোম্বোর সঙ্গে অস্ত্র বিরতি দিয়েছে ততবারই সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পুনরায় দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে। আসলে এলটিটিই’র এসব শান্তি আলোচনার আড়ালে ছিল নিজেদের অবস্থানকে সংহত করার জন্য সময় নেওয়া, ফান্ড কালেকশন জোরদার করা।

সেনাবাহিনীর অব্যাহত চাপে বান্দরবানে কেএনএফ সে কাজটিই করেছে কিনা তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। কিছু দিন আগেই কেএনএফ’র মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং তার এক ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনী কর্তৃক ‘নিরীহ’ গ্রামবাসী গ্রেপ্তার বা তল্লাশির জন্য আটকের অভিযোগ করে এবং উপযুক্ত সময়ে এর জবাব দেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। তাদের অনেক ফলোয়ারের মন্তব্যেও ‘কিছু একটা’ করার ইচ্ছা দেখা যায়। এসবকে নিছক বাগাড়ম্বর মনে করা হলেও নিরাপত্তা বাহিনীকে কখনো ‘অফ গার্ড’ পজিশনে থাকা অনুচিত। 

বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সরকারি বাহিনীর কোন ‘রিলাক্সড মুড’কে বেছে নিয়ে দারুণ সব অঘটন ঘটিয়ে দেয়। ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে, লংগদুতে বাংগালী নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদকে ঠিক ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে উপজেলা সদরের প্রান্তে হত্যা করে। ইফতারের ঐসময়ে পার্শ্ববর্তী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সৈনিকরা তখন ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সেনাবাহিনীর পাল্টা জবাব দেওয়ার আগেই বাঙালীদের মধ্যে উওেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে বাঙ্গালী পাহাড়ি দাংগার সূত্রপাত ঘটে। গতকালের (০২ এপ্রিল) ঘটনাটি তো সেরকমই তারাবির নামাজের সময় জনচলাচল কম থাকায় বা কর্তব্যরতরা কেউ কেউ মসজিদে নামাজে থাকায় অন্ধকারে ফাঁড়ি লুটের মত ঘটনাটি সহজে ঘটাতে পেরেছে।
কুকি চিনের ইউটার্ন

কুকি চিনের ইউটার্ন



স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে- এতে কি নিরাপত্তার প্রতি শৈথিল্য প্রকাশ পায়নি?

অস্বীকার করার জো নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সকল নিরাপত্তাকর্মীদের জানা উচিত পাহাড় কি! এখানে ‘খুশি টাইম’ পাস করার মতো অবস্থা নেই। এটা পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দিনের ‘এসওপি’: ঈদের দিন, জুম্মা নামাজ, বিশেষ বিশেষ দিনে বা উপলক্ষে ‘রেড এলার্ট’ অবস্থায় থাকা। পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা কি অবস্থায় ছিলেন কোথায় তাদের প্রহরী? কেমন তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী? এলার্ম সিস্টেম? আর গোয়েন্দা ব্যর্থতা তো আসেই। ৭০ জন লোক জড়ো হলো কেউ টের পেল না?

আরেকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়- কোথায় কন্টিনজেন্সী বা আপদকালীন অবস্থার পরিকল্পনা? রুমা তো দীর্ঘ সময় থেকে কেএনএফ-জেএসএস-ইউপিডিএফ-মগ পার্টির ত্রিমুখী সংঘাতে বিপর্যস্ত। এখানে ‘কেপিআই’গুলোতে হামলা ঠেকাতে সমন্বিত ব্যবস্থা ও তার অনুশীলন থাকা বাঞ্চনীয় ছিল। কোন কি শৈথিল্য ছিল তাতে? পাহাড়ে দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি এখানে সরকারের সব নিরাপত্তা কর্মীর নিরাপত্তাবোধ এক নয়। একটা ম্রিয়মান ভাব থাকে যাকে আমি বলি - ‘একেবারে রাতারাতি বান্দরবান পাঠিয়ে দেব’ সিনড্রোম। সেই বিতর্কিত তাজা চায়ের বিজ্ঞাপনের মতো। এখানে আসলে কি নিস্তেজ হয়ে যায় নিরাপত্তা কর্মীদের মন? 

আর নিস্তেজ হলে তো কেএনএফ ইউটার্ন নেবেই। যারাই পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত থাকেন তাদের এটা অনুধাবন করা উচিত- আপনার প্রতিপক্ষ ২৪/৭ আপনার গতিবিধি লক্ষ্য করছে, আপনার দৈনন্দিন চলাফেরা-জীবন যাপন, প্রশিক্ষনের মান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ সব কিছু হিসাবের মধ্যে এনেই সে আক্রমণ শানাবে।



কেএনএফ’র এই সফল লুট একটা বার্তা দিয়ে গেল যে তারা কি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকানে তাদের জ্ঞাতি ভাইদের (জো জনগোষ্ঠী) সাফল্য তাদেরকে উজ্জ্বীবিত করে থাকবে। তাদের মুভমেন্ট নিছক কোন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনিত কোন বিষয় নয়, এর রাজনৈতিক দিকটি তারা খুব জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।

তারা সামরিক ক্ষেত্রে খুব বেশি সাফল্য বা ফ্রী স্পেস পেলে আলোচনায় বসতে চাইবে না। বসলেও দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে আগ্রহী হবে না। 

পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোচনার পর্বে জেএসএস বার বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বাঙালী বসতির উপর আক্রমন করেছে। কেএনএফ তেমনটাই করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি উওর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি দ্বারা সব সময়ই প্রভাবিত হতে থাকবে। ঐতিহাসিক ভাবে লুণ্ঠন প্রিয় কুকিরা নিরাপত্তা বাহিনীর যে কোন শৈথিল্যকে কাজে লাগিয়ে শিকার ধরতে উদগ্রীব থাকবে, সেটা যেন মনে থাকে।

লেখক: মেজর নাসিম হোসেন (অব.)

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status