ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্যে, মাছ মরে ভাসছে কর্ণফুলীতে
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Thursday, 7 March, 2024, 1:25 AM
সর্বশেষ আপডেট: Thursday, 7 March, 2024, 1:32 AM

এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্যে, মাছ মরে ভাসছে কর্ণফুলীতে

এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্যে, মাছ মরে ভাসছে কর্ণফুলীতে

চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামে লাগা আগুনে পুড়ে যাওয়া চিনির গলিত লাভা ও কেমিক্যাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হয়ে বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে মাছ, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী।

বুধবার ৬ মার্চ, দুপুরে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, এস আলম সুগার মিলের নালা দিয়ে পোড়া বর্জ্য আসছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর পানি তামাটে রং ধারণ করেছে। নদীর তীরে মরে যাওয়া মাছ কুড়াচ্ছে এলাকার মানুষ।

এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্যে, মাছ মরে ভাসছে কর্ণফুলীতে

এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্যে, মাছ মরে ভাসছে কর্ণফুলীতে


আরও দেখা গেছে, ১ নম্বর গুদামটির পোড়া চিনির গলিত পানি দুটি নালা হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধও ছড়িয়ে পড়েছে। পানিতে পোড়া তেল ও ফেনার মতো ভাসছে চিনির বর্জ্য। এতে নদীর পানি দূষিত হয়ে মারছে মাছ। স্থানীয়রা নদী থেকে হাত দিয়েই মাছ ধরছে। আবার কেউ কেউ জাল ফেলেও মাছ ধরছে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার থেকেই নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে হাত দিয়েই নদীতে মাছ ধরা যাচ্ছে। এভাবে দূষণ হতে থাকলে নদীর মাছ প্রায় হারিয়ে যাবে। আগুনে পোড়া বর্জ্য শুধু কর্ণফুলী নদীতেই ফেলা হচ্ছে না। কারখানার আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়ও যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ইছানগর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব কারখানার বর্জ্য নিয়মিতই নদীতে ফেলা হয়। এখন রাস্তাঘাট ও জমিতে ফেলছে, এতে আমাদের এলাকার মানুষ অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনির দাহ্য পদার্থ যখন ৩৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে তখন বিষাক্ত কেমিক্যালে রূপ নেয়। আর সেখানে পানি ছাড়া হলে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন কার্বন তৈরি হয়। যে কারণে কারখানায় পোড়া চিনি বিষাক্ত কেমিক্যালে রূপ নিয়ে নদী দূষণ করছে। যার কারণে নদীর মাছসহ সব ধরনের জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে নদী গবেষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া চিনি বিষাক্ত কেমিক্যালে রূপ নিয়েছে।  শিল্প কারখানা গড়ে তোলার আগে ডাম্পিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখার প্রয়োজন ছিল। এটি না করায় কারখানা থেকে পোড়া বর্জ্য পড়ে কর্ণফুলী নদী দূষিত করে তুলছে। যাতে ক্ষতি হবে মৎস্য সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য। এতে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা আর পূরণ হবে না। এজন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও সজাগ হওয়া উচিৎ ছিল।’

এদিকে সকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানার ড্রেন ও নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে।

উপ-পরিচালক বলেন, ‘নমুনা পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পানির বিভিন্ন উপাদানের কী ক্ষতি হয়েছে তা বলতে পারব।’

এস আলম গ্রুপের প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাইন বিল্লাহ আদিল বলেন, ‘আমরা এখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি, যাতে চিনিকল ও অন্য গুদামগুলোতে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে। যেহেতু এটি দেশের সুগার মিলে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড। এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩০টি ডাম্পট্রাক দিয়ে গলিত র-সুগার আমাদের নিজস্ব জায়গায় ডাম্পিং করা হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি র-সুগার যাতে নদীতে না পড়ে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। এরপরও ফায়ার সার্ভিসের ছেটানো কিছু পানি গড়িয়ে নদীতে পড়েছে। এতে আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

আগুন লাগার পেছনে নাশকতার আশঙ্কা করছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকার তদন্ত কমিটি করেছে। ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তদন্ত কমিটি তদন্ত করবে। তখন আপনারা জানতে পারবেন। এখন আমরা শুধু কারখানা রক্ষার বিষয়টি ভাবছি।’

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status