ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
চীন কি আরব আমিরাতে সামরিক ঘাঁটি বানাচ্ছে, কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 26 November, 2025, 10:47 AM

চীন কি আরব আমিরাতে সামরিক ঘাঁটি বানাচ্ছে, কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র

চীন কি আরব আমিরাতে সামরিক ঘাঁটি বানাচ্ছে, কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) একটি সামরিক ঘাঁটিতে চীনের সামরিক সদস্যরা ছিলেন। কারণ, ওই ঘাঁটির একটি অংশে যুক্তরাষ্ট্রকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দুজন সাবেক উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আবুধাবির জায়েদ মিলিটারি সিটিতে চীনের গণমুক্তি ফৌজের (পিএলএ) সদস্যদের ইউএই আতিথ্য দিচ্ছিল।

ওই কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এমন ধারণা করেছিলেন।

ঘটনাটি সম্পর্কে জানেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা যখন জায়েদ মিলিটারি সিটির একটি অংশে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলেন, তখন তা নাকচ করা হয়েছিল। তারপরই যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটিটি সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে চীনা সামরিক সদস্যদের উপস্থিতির বিষয়টি জানতে পারল বা ওই ঘাঁটিতে তাদের কী ভূমিকা ছিল, সে সম্পর্কে সাবেক এ দুই কর্মকর্তার কেউ কিছু জানাননি।

দুই সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পিএলএ হয়তো জায়েদ মিলিটারি সিটি ব্যবহার করে আরব আমিরাতে থাকা মার্কিন বাহিনীর সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে।

আরব আমিরাতের আল–ধাফরা এয়ার বেজে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮০তম এয়ার এক্সপেডিশনারি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে এবং এটি আবুধাবি থেকে মাত্র ২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।

মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেছেন, আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে পূর্ব এশীয় কিছু দেশ পিএলএকে তাদের দেশে থাকার সুযোগ দিয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন। আরব আমিরাতের জায়েদ মিলিটারি সিটিতে পিএলএর উপস্থিতির সঙ্গে এর মিল খুঁজে পায় যুক্তরাষ্ট্র।

আবুধাবির জায়েদ মিলিটারি সিটিতে চীনা সামরিক বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে এর আগে কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি।

২০২১ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন আবুধাবির কাছে একটি সামরিক বন্দর তৈরি করছে। ওই খবর প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর অন্য একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আরব আমিরাত সেই প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে।
চীন-আমিরাত সামরিক সম্পর্ক

বর্তমানেও পিএলএর সদস্যরা ওই ঘাঁটিতে আছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। চীন সামরিকভাবে আরব আমিরাতের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করায় যুক্তরাষ্ট্র বারবার তাদের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আরব আমিরাতের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েনও রয়েছে।

২০২১ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন আবুধাবির কাছে একটি সামরিক বন্দর তৈরি করছে। ওই খবর প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর অন্য একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আরব আমিরাত সেই প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে।

তবে ডিসকর্ড মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে বলা হয়েছে, এক বছর পর চীন সেই ঘাঁটিতে আবারও কাজ শুরু করেছে। এ খবর দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল।

আরব আমিরাত ও চীন তাদের সামরিক সম্পর্ক গোপন করছে না। ২০২৪ সালে তারা চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে বিমানবাহিনীর যৌথ মহড়া করেছিল।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিডল ইস্ট আই ওয়াশিংটনে অবস্থিত আরব আমিরাত এবং চীনের দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিল। তবে কোনো পক্ষই সাড়া দেয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগও কোনো জবাব দেয়নি।

আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কাতার ও সৌদি আরবের মতোই আরব আমিরাতও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর পরিবারকে, বিশেষ করে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারকে খুশি করার চেষ্টা করেছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কোম্পানি জি৪২ এবং তাদের সৌদি প্রতিদ্বন্দ্বী হিউমেইনের কাছে হাজার হাজার উন্নত এআই চিপস রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে এনভিডিয়ার মতো প্রযুক্তি সংস্থাগুলো স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, তাদের চিপস বিক্রি বৃদ্ধির জন্য রপ্তানির বাজার দরকার। কিন্তু উপসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব নিয়ে চিন্তিত মার্কিন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের কিছু কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট।

সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘সৌদিরা হয়তো কিছুটা ভালো। কিন্তু আমি মনে করি না, আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে।’

গত অক্টোবরে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল, আরব আমিরাতের জি৪২ কোম্পানি চীনের হুয়াওয়েকে এমন প্রযুক্তি দিয়েছে, যা চীনের গণমুক্তি ফৌজ তাদের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করেছিল।
গত অক্টোবরে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল, আরব আমিরাতের জি৪২ কোম্পানি চীনের হুয়াওয়েকে এমন প্রযুক্তি দিয়েছে, যা চীনের গণমুক্তি ফৌজ তাদের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করেছিল।

ব্যবসায়িক চুক্তি ছাড়াও ওই অঞ্চলে ক্ষমতা দেখানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরব আমিরাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিডল ইস্ট আই সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সোমালিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আমিরাতের লোহিত সাগরের ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করেছে।

ওয়াশিংটনের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আরব আমিরাত ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আরব অংশীদার হিসেবে উঠে এসেছে।

২০২০ সালে আরব আমিরাত ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এ স্বাক্ষর করেছিল। চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েল যাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের এলাকা দখলে না রাখে, সে জন্য আমিরাত ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তদবির করেছিল। তবে গাজায় নৃশংস ইসরায়েলি হামলা শুরুর পরও আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের সম্পর্ক মোটামুটি টিকে আছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে আরব আমিরাতকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রথম মেয়াদের ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণে বাইডেন প্রশাসনের সময় সেই চুক্তি আটকে যায়।

২০২২ সালের আগস্টে সিনেটের এক শুনানিতে বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ কূটনীতিক বারবারা লিফ বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চীন ‘যা খুশি তাই করে পার পেয়ে যাচ্ছে’।

আরব আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি কেন আটকে গেছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে লিফ চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক–সংক্রান্ত ‘অনেকগুলো বিষয়ের’ কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা এই চুক্তিকে ব্যাহত করেছে।

সম্প্রতি সৌদি যুবরাজের ওয়াশিংটন সফরের সময় ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status