ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর ২০২৫ ২১ কার্তিক ১৪৩২
ফাশারের কসাই কে এই আবু লুলু?
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Thursday, 6 November, 2025, 11:28 AM

ফাশারের কসাই কে এই আবু লুলু?

ফাশারের কসাই কে এই আবু লুলু?

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুদানের এল-ফাশার শহরে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) সন্ত্রাসীদের নৃশংস অপরাধের খবরাখবরের মধ্যে ‘আবু লুলু’ নামে এক সন্ত্রাসীর নাম এখন সবার মুখে মুখে।তিনি গর্বের সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবি প্রকাশ করেন এবং ‘ফাশারের কসাই’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। 

বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, এ অঞ্চলে দ্রুত উন্নয়নসহ গাজা ইস্যু এবং সেখানে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ার ওপর বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ার মধ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত আরএসএফ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সুদানে একটি বড় গণহত্যা চালানো হয়েছে।তবে মিডিয়া সুদানের ওই ভয়াবহ ঘটনার খবর গোপন করতে পারেনি।

গত কয়েকদিন ধরে সুদানের ঘটনাবলীর খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে, বিশেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে। সেখানকার যেসব ছবি এবং ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে তা আরএসএফ মিলিশিয়াদের হাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত দেয়।

গত সপ্তার শুরুতে সন্ত্রাসীরা ঘোষণা করেছিল যে, তারা ৫০০ দিনের অবরোধের পর উত্তর দারফুর রাজ্যের এল-ফাশির শহর সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এরপর এই সন্ত্রাসীদের হাতে অসহায় মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত নৃশংস অপরাধের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ২,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে ভয়াবহভাবে হত্যা করা হয়েছে। 

সুদানে আমিরাতি সন্ত্রাসীদের নৃশংস অপরাধের সঙ্গে গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের অপরাধের একটা মিল রয়েছে। আর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুদানের ঘটনাবলীর সঙ্গে সম্পর্কিত সংবাদের শীর্ষে যে নামটি উঠে এসেছে, সেই নামটি হলো- আবু লুলু। যাকে ‘ফাশারের কসাই’ উপাধি দেওয়া হয়েছে।

আসল নাম ফাতিহ আবদুল্লাহ ইদ্রিস হলেও আবু লুলু নামেই সমধিক পরিচিত। ফাশার শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে তেমন একটা পরিচিত ছিলেন না লুলু। কিন্তু শহরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার পর তার নাম ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে এবং সুদানে বর্বরতা ও সন্ত্রাসের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। 

যদিও আরএসএফ আবু লুলুর সঙ্গে তাদের কোনোরকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে। এমনকি তার পরিচয় সম্পর্কে অবহিত নয় বলেও দাবি করেছে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করে ফাশারের ‘শেলা’ কারাগারে আটক রাখার ঘোষণাও দেয়। তবুও তিনি নিজে যে ভয়াবহ ভিডিওগুলো বারবার প্রকাশ করেছেন তা আরএসএফ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার সংযোগের ইঙ্গিত দেয় এবং মিডিয়া তাকে ফাশারের কসাই বলে উল্লেখ করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবু লুলুর ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হলে অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে তার অপরাধ প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

সুদানে সংযুক্ত আরব আমিরাত-সমর্থিত আরএসএফ গত দুই সপ্তাহ ধরে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। ফাশারের স্যাটেলাইট ছবিতে রক্তে ভরা গর্ত এবং লাশের স্তূপ দেখা যায়। কিন্তু আরএসএফের একজন মুখপাত্র কয়েকদিন আগে ঘোষণা দেন যে, ফাশার শহর দখলের সময় অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য একটি অভিযান শুরু হয়েছে।

আরএসএফের মুখপাত্র দাবি করেন, হাইকমান্ডের নির্দেশে এই গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয় এবং আইনি কমিটি সন্দেহভাজনদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

এদিকে আবু লুলু বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে তার সহিংসতার নথিভুক্ত বেশ কয়েকটি অডিও ফাইল প্রকাশ করে দাবি করেছেন, তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত নন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। একটি ফাইলে তিনি এল-ফাশারে প্রায় ১,০০০ মানুষকে হত্যা করার কথা গর্ব করে বলেছেন।

ফাশারে ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ

যদিও আবু লুলু কোনো দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক দাবি করেননি, তবে তিনি আরএসএফের সঙ্গে অসংখ্য আক্রমণে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আবু লুলুর নৃশংস অপরাধগুলো বেশিরভাগই ফাশারের উত্তরাঞ্চলে এবং তার আশেপাশে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। তবে তিনি যে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী তা বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে এবং তার নাম অনেক যুদ্ধক্ষেত্রে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। 

পর্যবেক্ষকরা জোর দিয়ে বলেন, আবু লুলুর মতো ব্যক্তিত্বের উত্থান সুদানজুড়ে বিকশিত ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং ব্যাপক নৈতিক পতনকেই প্রতিফলিত করে। যেখানে সন্ত্রাসীরা গর্বের সঙ্গে তাদের অপরাধের ছবি প্রকাশ করে।

রক্তের নরক এবং মৃত্যুর পথে ফাশারের উদ্বাস্তুরা

এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর এবং জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোকে ফাশারে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার পর শহরটি সম্পূর্ণ ভীত-সন্ত্রস্ত এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে গেছে। স্থানীয় সংস্থাগুলো জানিয়েছে, শহরের ভেতরে আটকা পড়াদের বিরুদ্ধে অপরাধ অব্যাহত রয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক তাহের আল-মারজি ফাশারের কিছু সংস্থা এবং মেডিকেল নেটওয়ার্ক থেকে যেসব তথ্য প্রকাশ করেছেন, সেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে- বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক শহরের ভেতরে আটকা পড়েছেন এবং তারা বের হতে পারছে না। এমনকি পানি কিংবা খাবারও পাচ্ছে না।

ফাশারের দীর্ঘ অবরোধের ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা পরিষেবার তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে আক্রমণ এবং লুটপাটের পর।

সুদানিজ ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, আরএসএফ এখনো হাজার হাজার বেসামরিক লোককে শহরের ভেতরে আটকে রেখেছে এবং তাদেরকে শহর ছেড়ে যেতে বাধা দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা মানুষের ব্যবহৃত যানবাহনও জব্দ করেছে এবং পালিয়ে আসা কিছু লোককে হুমকির মুখে শহরে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। 

মানবিক সংস্থাগুলো ফাশারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং শহরে আটকা পড়াদের ন্যূনতম সাহায্য দেওয়ার জন্য লড়াই করছে। বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, তাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। মানবিক করিডোর এখনো খোলা হয়নি এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপের কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়নি।

এমন অবস্থায় ফাশারের নরক থেকে নিজেদের বাঁচাতে এবং পালাতে সক্ষম হলেও কয়েক ডজন পরিবার বাস্তুচ্যুতি এবং গৃহহীনতার কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এক ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছে, আগামী দিনে বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহ ঢেউ আসবে, যেখানে বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গা পাবে না।

ফাশার শহর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সন্ত্রাসীরা গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের মতোই এ শহরের মানুষের শেষ আশার জায়গা যেমন- ত্রাণ কেন্দ্র, রান্নাঘর, বাজার ও হাসপাতাল ইত্যাদি ধ্বংস করে দিয়েছে।

ফাশার শহরের ক্ষুধার্ত বাসিন্দা

ফাশার থেকে পালাতে সক্ষম এক সাংবাদিক বলেছেন, ফাশার শহরের সাহায্য সংস্থাগুলো গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং জনগণকে কোনোভাবেই সাহায্য করতে পারছে না। এই শহরের বাসিন্দারা প্রচণ্ড ক্ষুধার জ্বালায় গাছের পাতা খাচ্ছে এবং পান করার মতো পানিও পাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব গণমাধ্যমের নীরবতার সুযোগে জঙ্গিরা গুদামগুলোর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে, গবাদি পশু ও ঘরবাড়ি লুট করে এবং সমস্ত পরিষেবা সুবিধা, পানির কূপ, হাসপাতালসহ বাজারঘাট সব ধ্বংস করে দিয়েছে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status