|
ইরানে শাসন পরিবর্তনে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন কতটা বাস্তব
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() ইরানে শাসন পরিবর্তনে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন কতটা বাস্তব ইরান ও ইসরায়েলের শত্রুতা নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরেই দুই দেশ স্থল, সমুদ্র, আকাশপথ ও সাইবারজগতে আক্রমণ করাসহ একে অপরের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আসছে। এসব সংঘাত তাদের সম্পর্ককে আরও বৈরিতার দিকেই ঠেলে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন ইসরায়েল প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক এ হামলার দৃশ্যত লক্ষ্য ছিল, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত ও সম্ভাব্য পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা নস্যাৎ করা। তবে হামলার বিস্তার, লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন ও ইসরায়েলি রাজনীতিকদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এটি শুধু সামরিক লক্ষ্য নয়। তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, ইরানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটিতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ তৈরি করা। অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকারের মত, একই লক্ষ্য তেল আবিবের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রেরও। কিন্তু ইরানে বাইরের চাপে সরকার পরিবর্তনের ইতিহাস মোটেও সুখকর নয়। ১৯৫৩ সালে মার্কিন ও ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এরপরও ইরান চরমভাবে পশ্চিমা শক্তির প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব দেখিয়েছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ শক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব সহজে নড়ানো যাবে না। ইসরায়েলের হামলার সময় পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, সেনা কমান্ডের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে দেশের ভেতরে ও আঞ্চলিক মিত্রদের আস্থা নষ্ট করতে চেয়েছে; যেন এটি বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি’র কর্মকর্তা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে কাজ করা মাইকেল সিং বলেন, ‘ইসরায়েল আশা করছে, এ হামলার ফল হবে ইরানে সরকার পরিবর্তন। তারা চায়, দেশটির জনগণও নিজেরাই উঠে দাঁড়াক।’ হামলার প্রথম দফায় বেসামরিক প্রাণহানি সীমিত রাখা হয়েছে, যা ইসরায়েলের বৃহত্তর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে। ইরানে হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির জনগণের উদ্দেশে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে “ইসলামিক শাসন” আপনাদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছে। এটি আমাদের রাষ্ট্রকেও ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে। আমরা যখন আমাদের লক্ষ্য অর্জন করছি, তখন আপনাদের স্বাধীনতার পথও পরিষ্কার করছি। আপনাদের এখন উঠে দাঁড়ানোর সময়, নিজেদের কণ্ঠস্বর শোনান।’ তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেন, ইরানে দীর্ঘমেয়াদি ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকার উৎখাতের জন্য গণসমর্থন জোগাড় করতে বড় বাধা হতে পারে। মাইকেল সিং বলেন, কেউ জানে না, ইরানে বিরোধী শক্তির সংহতি গঠনে কোন ধরনের পরিস্থিতির প্রয়োজন। ইসরায়েলের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ও অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলায় ইরানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন হামলা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাস বলেছে, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের বিশ্বাস, কোনো দেশের জনগণই তাদের জাতীয় রাজনীতির স্বরূপ ও নিজেদের সরকার নির্ধারণ করবে। ইরানের ভবিষ্যৎও রয়েছে শুধু ইরানিদের হাতে।’ ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান বিশ্লেষক ও বর্তমানে দেশটির ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক সিমা শাইন বলেন, ‘ইসরায়েল সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া একা ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। এরপরও দেশটির এ কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ইরানি সরকারকে দুর্বল করাও তার লক্ষ্য। এ জন্য উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের নিশানা করা হয়েছে।’ ‘কিন্তু এমন পরিবর্তনের সঙ্গে ঝুঁকি থাকবে,’ বলেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক মার্কিন ডেপুটি ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা জোনাথান প্যানিকফ। আটলান্টিক কাউন্সিলে বর্তমানে কর্মরত প্যানিকফ বলেন, ‘যদি ইসরায়েল ইরানের নেতৃত্বকে সরাতে সক্ষম হয়, তবে নতুন যে নেতা আসবেন, তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের পথে আরও কঠোর নীতি নেবেন না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ ইসরায়েলের হামলার সময় পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, সেনা কমান্ডের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে দেশের ভেতরে ও আঞ্চলিক মিত্রদের আস্থা নষ্ট করতে চেয়েছে; যেন এটি বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। ‘বছরের পর বছর, ইসরায়েলের অনেকেই জোর দিয়ে বলছেন যে ইরানে শাসন পরিবর্তন একটি নতুন ও উত্তম দিনের সূচনা করবে। বর্তমান “ধর্মনির্ভর শাসনের” চেয়ে আর কিছু খারাপ হতে পারে না,’ বলেন প্যানিকফ। ‘কিন্তু ইতিহাস আমাদের দেখায়, তা (ইরানে বাইরের চাপে সরকার বদল) সব সময় আরও খারাপ পরিণতিই ডেকে আনতে পারে।’ অতীতে সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ইরানে ইসলামি বিপ্লবের দুই দশকের কিছু আগে ১৯৫৩ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছিল। ইরানের তেল খাত জাতীয়করণের চেষ্টা করেছিলেন মোসাদ্দেক। তাঁর এ উদ্যোগ দেশের ভেতরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও পশ্চিমা দেশগুলোকে রোষের মুখে ফেলেছিল। আগে ইরানি তেলশিল্প নিয়ন্ত্রণ করত ব্রিটিশ মালিকানাধীন ‘অ্যাংলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি’ (এখন বিপি)। প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করতে সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একত্রে ‘অপারেশন অ্যাজ্যাক্স’ নামে এক গুপ্ত অভিযান চালায়। এ–সংক্রান্ত পরিকল্পনায় বিক্ষোভে অর্থায়ন, স্থানীয় সংবাদপত্রে অপপ্রচার চালানো এবং ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির প্রতি অনুগত সামরিক কর্মকর্তাদের সহায়তা করার বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯ আগস্ট ১৯৫৩ মোসাদ্দেক ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৯৫৩ সালের পর শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ইরান শাসন করতে থাকেন। তবে ক্রমেই নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বাছবিচারহীন গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ ও নির্যাতন-নিপীড়ন হয়ে ওঠে সাধারণ ঘটনা। সেই সঙ্গে সম্পদের বৈষম্য বেড়ে যায়। ইরানের ধর্মীয় নেতারা এবং জনগণের বড় অংশও শাহ থেকে দূরে সরে যায়। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে জনগণের অসন্তোষ চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায়। দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে। পরে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে জনরোষের মুখে তিনি ইরান ছেড়ে পালান। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে ইসলামি বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। রাজতন্ত্রের (শাহর শাসন) পতন ঘটে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান গঠিত হয়। এ ইতিহাস থেকে স্পষ্ট, ষড়যন্ত্র আর গুপ্ত চেষ্টায় মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একসময় সফল হয়েছে ঠিক, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিদেশি শক্তি দিয়ে বা প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে ইরানে সরাসরি সরকারের পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে শক্তিশালী ধর্মীয় ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান উপস্থিতিতে। ইরানে স্বদেশি বিরোধ ও জনগণের প্রতিক্রিয়া ইরানের জনগণের মধ্যে সরকারবিরোধী প্রতিক্রিয়া বেশ পুরোনো। বিশেষ করে যুবসমাজ ও শহুরে বণিকশ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ করা যায়। তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক দমন মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেন, বাইরের হামলা বা বিদেশি চাপ দিয়ে এ অসন্তোষকে কার্যকরভাবে সরকার পরিবর্তনে রূপ দেওয়া একরকম অসম্ভব। কেননা নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শক্ত নিয়ন্ত্রণ জনগণকে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো থেকে বিরত রাখতে সক্ষম, তা ছাড়া বর্তমান শাসকদের প্রতি জনসমর্থনও নেহাত কম নয়। সাম্প্রতিক হামলার পর ইরানের সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট। কিছু মানুষ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে বিদেশি আগ্রাসন হিসেবে দেখছেন। আবার কিছু মানুষ, বিশেষ করে তরুণেরা মনে করছেন, এটি সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। আঞ্চলিক প্রভাব ও মিত্ররাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রভাব শুধু দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যও ভেঙে দিতে পারে। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যেমন সিরিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ তাদের কৌশলগত অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব কমানো এবং পারমাণবিক হুমকি প্রতিহত করা। চূড়ান্ত লক্ষ্য, হয়তো সরকার পরিবর্তন। অবশ্য এ চেষ্টা আরও বড় সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর মাধ্যমে আক্রমণ বেড়ে গেলে উত্তেজনা আরও তীব্র হবে। ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোও সতর্ক। তারা ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থেকে সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে, যেমন তেলের বাজারে উদ্বেগ ও নিজস্ব নিরাপত্তাঝুঁকি দেখা দিতে পারে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনা আগেই বলা হয়েছে, ইতিহাস থেকে দেখা যায়, বিদেশি আগ্রাসনে বা সরকারের দুর্বলতার সুযোগে ইরানে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবর্তন আনা প্রায় অসম্ভব। মোসাদ্দেককে উৎখাত করে শাহকে ক্ষমতায় বসানো এবং পরে গণ-বিক্ষোভের মুখে শাহর পলায়ন ও ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইরানে বিদেশি হস্তক্ষেপ বিপরীত ফলই ডেকে এনেছে। এ ছাড়া ইরানের প্রভাবশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা বাহিনী ও সামাজিক কাঠামো বিদেশি আগ্রাসন প্রতিহত করতে সব সময় প্রস্তুত। তাই ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সেখানে সরাসরি সরকারের পরিবর্তন ঘটানো খুবই কঠিন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে ১৯৫৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ইরান শাসন করতে থাকেন। তবে ক্রমেই নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বাছবিচারহীন গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ ও নির্যাতন-নিপীড়ন হয়ে ওঠে সাধারণ ঘটনা। সেই সঙ্গে সম্পদের বৈষম্য বেড়ে যায়। ইরানের ধর্মীয় নেতারা এবং জনগণের বড় অংশও শাহ থেকে দূরে সরে যায়। তবু কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ইরানের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, অর্থনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা একত্র হলে দীর্ঘ মেয়াদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। এটি অবশ্য তৎক্ষণাৎ ঘটবে না; বরং ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সংস্কার ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে হতে পারে। শেষমেশ ইরানে যদি আয়াতুল্লাহদের পতন ঘটেই, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, সে প্রশ্ন ওঠে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব ইরানকে পশ্চিমা মিত্র শাহর শাসন থেকে ধর্মনির্ভর শাসনে রূপান্তরিত করেছিল, যা প্রায় এক রাতের মধ্যে দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র থেকে শত্রুতে পরিণত করেছিল। আজ ইরান এক গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী দেশ। যার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিন্যাসকে প্রভাবিত করে এবং বিশ্বব্যাপী ফলাফল ফেলে। তাই আয়াতুল্লাহ খামেনির পর ইরানের ভবিষ্যতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খামেনি চলে গেলে, কিছু সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ দেখা যায়। ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির সর্বব্যাপী আদর্শ একনায়ক সুলভ কর্তৃত্বে পরিণত হতে পারে, যা সোভিয়েত-উত্তর রাশিয়ার স্বাক্ষর। আবার মাও সে–তুংয়ের মৃত্যুর পর চীনের মতো ইরান কঠোর আদর্শের বদলে বাস্তব জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। উত্তর কোরিয়ার মতো দীর্ঘদিন ধরে দমন ও বিচ্ছিন্নতায়ও জোর দিতে পারে। গ্রহণ করতে পারে পাকিস্তানের মতো সামরিক আধিপত্যবাদও। সর্বোপরি, সম্ভাবনা কম হলেও ইরান একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের দিকে ঝুঁকতে পারে; যা শুধু ইরানিদের জীবনই নয়, প্রভাবিত করবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতাকেও। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
