|
সরকারি স্কুলের কক্ষেই প্রধান শিক্ষকের সংসার!
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() সরকারি স্কুলের কক্ষেই প্রধান শিক্ষকের সংসার! শুধু তা-ই নয়, তার দায়িত্বহীনতার কারণে বিদ্যালয়ের মাঠ এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে ১৯৪৬ সালে সহর উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয়করণ হয়। প্রায় ৯ একর কৃষিজ ও কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা সম্পদের এ প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে। গত ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ইমরান আলী। এরপর প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম প্রধান গত ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণের পর থেকে সহকারী শিক্ষক ইমরান আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির কৃষিজ ও বাণিজ্যিক জমি ভবন থেকে আদায় করা অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা না করে প্রতিষ্ঠানের বিএম শাখার( বেসরকারি) একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করে নিজের একক স্বাক্ষরে উত্তোলন করেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যয় পরিচালনা বিধির ২ এর ৪ এবং ৫ নং উপধারায় ৩ সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এ প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত কোনো কমিটি করা হয়নি। এই কারণে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলীর একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়টি পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। শুধু তাই নয়, ইমরান আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হলেও নিজে নিজেকে ভারমুক্তি করে সরাসরি প্রধান শিক্ষক দাবি করছেন। প্রধান শিক্ষকদের অনার বোর্ডেও ভারপ্রাপ্ত শব্দটি লিখেননি তিনি। যা নিয়ে চলছে নানান সমালোচনা। বিদ্যালয়টির একটি পুরাতন ভবন সংস্কার করতে ঠিকাদার নিয়োগ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সেই সংস্কার কাজে ঠিকাদারকে বাগিয়ে বিদ্যালয়ের একটি রুমে করেছেন নিজের আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে রুমটি সাজিয়ে নিয়ে বসবাস করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী। সরকারি ভবন বা আবাসনে বসবাস করলে বিধিমত বাড়িভাড়া কর্তন করার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সাম্প্রতিক সময় ১৬৭ জন শিক্ষার্থীর ৮ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়েও জন প্রতি প্রায় ৫৫ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, গতবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের সময় জোরপূর্বক জনপ্রতি দুই হাজার টাকা কোচিং ফি আদায় করা হয় এ স্কুলে। সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে দেখা যায়, বিশাল মাঠ মাড়িয়ে শ্রেণি কক্ষে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেই মাঠে অবাধে বিচরণ করছে গরু ছাগল। বিদ্যালয়ের মাঠটি যেন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। গবাদি পশুর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে মাঠে খেলাধুলা তো দূরের কথা চলাচল করাও কষ্টকর। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা চলতে গিয়ে পা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিদ্যালয়ের পূর্ব পকেট গেটের পাশেই দেখা গেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বঘোষিত সেই বাসস্থান। ওই মাঠে চলাচল করা হাতীবান্ধা ২ নম্বর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী আহেদ আলী বলেন, এ মাঠটি দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে আসছে। যার চার দিকে প্রাচীর দেওয়া থাকলেও দুটি পকেট গেট দিয়ে এসব গরু ছাগল ঢুকে পড়ে। এসব বন্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলেন, গৌরবের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন কর্তৃপক্ষের দায়ত্বহীনতায় দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে। গরু ছাগলের বিষ্ঠা মাড়িয়ে ক্লাসে যেতে হয়। গোবরের গন্ধে মাঠে খেলাধুলা তো দূরের কথা, চলাচলেও দুর্ভোগ পেতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শাহি মোহাম্মদ আকতারুদোজা বলেন, সহকর্মীদের কাছে শুনি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। তার এমন আচরণ থেকে মুক্তি পাননি নারী শিক্ষকও। যদিও আমার সঙ্গে কখনও এমনটা করেননি। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান হয়ে নিজেকে ভারমুক্ত পরিচয় দিচ্ছেন ইমরান আলী। অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যায় নিরীক্ষণের ব্যবস্থার কথা বললেও তিনি কর্ণপাত করেন না। পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র ফি পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কোনো হিসাব কাউকে দেন না। বিদ্যালয়ের একটি রুম তিনি দখল করে বসবাস করছেন। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী বলেন, দূর থেকে এসেছি। একটি রুম মুসাফির হিসেবে ব্যবহার করতেই পারি! এটা কোনো অপরাধ নয়। আবাসিক নয়, বাড়ি ভাড়া কেন কর্তন হবে। আর আয়-ব্যয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি আগামী ডিসেম্বরে গঠন করা হবে। মন্ত্রণালয় কোনো কোড বা নির্দেশনা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের আয় একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করা হচ্ছে। তবে হিসাব নম্বর জানতে চাইলে তিনি দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি এক টাকাও আত্মসাৎ করার ইচ্ছে আমার নেই। মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক রোকসানা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের রুমে বসবাস করার সুযোগ নেই। আমি নতুন যোগদান করেছি তাই বিষয়গুলো জানা নেই। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
