|
সামাজিক আন্দোলনই পারে প্রজন্মকে রক্ষা করতে: র্যাব-১৫ এর মাদকবিরোধী সভায় বক্তারা
রফিক মাহমুদ, কক্সবাজার
|
|
![]() সামাজিক আন্দোলনই পারে প্রজন্মকে রক্ষা করতে: র্যাব-১৫ এর মাদকবিরোধী সভায় বক্তারা বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১টার এ সভায় জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, তরুণসমাজ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন—“মাদক শুধু একজন মানুষের জীবন ধ্বংস করে না, মাদক একজনের জীবন থেকে শুরু হয়ে একটি পূর্ণ পরিবার, একটি সমাজ এবং শেষ পর্যন্ত একটি জাতির ভবিষ্যৎ পর্যন্ত ধ্বংসের ঝুঁকি তৈরি করে। যেই তরুণ একবার মাদকের পথে হাঁটে তার স্বপ্ন, প্রতিভা, শিক্ষা, কর্মজীবন সব নষ্ট হয়ে যায়। এই তরুণরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। তাই তাদেরকে সঠিক পথে রাখা, সচেতন করা আমাদের সবার দায়িত্ব। প্রশাসন একা পারবে না পরিবার, সমাজ, শিক্ষক, পাড়াপড়শি সবাই মিলে সামাজিক ঘৃণা তৈরি করতে পারলেই মাদককে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলা সম্ভব।” এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে শতভাগ দূরে থাকার শপথ বাক্য পাঠ করান। সভাপতির বক্তব্যে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. কামরুল হাসান বলেন—“মাদকবিরোধী লড়াই কেবল বাহিনীর লড়াই নয় এটি একটি সামাজিক যুদ্ধ। পরিবারই একজন সন্তানকে সবচেয়ে আগে দেখতে পায়। পরিবার যদি দায়িত্ব নিয়ে নজরদারি করে, সন্তানকে মাদকের ছোঁয়া থেকে দূরে রাখে তাহলে অনেক বড় ক্ষতি আগেই ঠেকানো যায়। কেউ যদি আস্তে আস্তে আসক্ত হয়ে পড়ে তাকে লুকিয়ে রাখা কোনো সমাধান নয়। সরাসরি র্যাব-১৫ এর সাথে যোগাযোগ করবেন। পুনর্বাসন খরচসহ প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা র্যাবই করবে। আমাদের লক্ষ্য শুধু অপরাধী ধরা নয়, নষ্ট হওয়ার আগেই একজন তরুণকে রক্ষা করা।” বক্তব্য রাখেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন—সমাজ ও পরিবারে কঠোর অবস্থান তৈরি না হলে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। পাড়া-মহল্লায় নজরদারি ও সামাজিক প্রতিবাদই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি। বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রাজজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম। তিনি বলেন—মাদক মামলায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রমাণ শক্তিশালী হলে আসামি কখনও সাময়িকভাবে বাঁচতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে শাস্তি পেতেই হয়। অনুষ্ঠানে তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা ফুটবল দলের অধিনায়ক মোবারক হোসেন এবং জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আব্দুল মালেক। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিল্পী মালেক বলেন—“তোমরা যে ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখো, মাদক সেই স্বপ্নকে ভিত থেকেই নষ্ট করে দেয়। মাদক মানে স্বপ্নহত্যা। জীবনের কষ্ট, দুঃখ, হতাশা কোনো কিছুই এমন নয় যে তার সমাধান মাদক। তোমরা শক্ত থাকো, নিজেদের সম্মান বজায় রাখো, মাদক থেকে শতভাগ দূরে থাকবে।” বক্তব্য দেন ‘নোঙ্গর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম। তিনি বলেন—“একজন তরুণকে বাঁচানো মানেই একটি পরিবারকে বাঁচানো। মাদক একজন মানুষকে শেষ করে দেয়, তাই মাদক থেকে শতভাগ দূরে না থাকলে ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকে না। চিকিৎসা ও পুনর্বাসন আছে। কিন্তু সবচেয়ে শক্ত প্রতিরোধ হচ্ছে সচেতনতা। তাই আজ থেকেই ঘরে ঘরে মাদককে না বলার আওয়াজ তুলতে হবে।” স্বাগত বক্তব্য রাখেন পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবুল হাসেম। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ৬৪ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক, উখিয়া সার্কেল এডিশনাল এসপি, ৮ এপিবিএন এর এডিশনাল এসপি, সিভিল সার্জন অফিস প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ইউএনও সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মী। অনুষ্ঠানের শেষভাগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও ক্রীড়া সামগ্রী তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান এবং র্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. কামরুল হাসান। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
