ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
রোববার ১২ অক্টোবর ২০২৫ ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি কখনও নোবেল জিতবে? যা বলছেন বিজ্ঞানীরা
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 11 October, 2025, 7:24 PM

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি কখনও নোবেল জিতবে? যা বলছেন বিজ্ঞানীরা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি কখনও নোবেল জিতবে? যা বলছেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানের বিশাল জগতে নীরবে এক বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)। গত কয়েক বছরে এই প্রযুক্তি আর শুধু তথ্য বিশ্লেষণ বা জটিল হিসাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পরীক্ষানিরীক্ষার নকশা তৈরি থেকে শুরু করে একেবারে নতুন বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস বা অনুমান তৈরি করা—সব ক্ষেত্রেই এআই তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চলেছে। এই অবিশ্বাস্য অগ্রগতি দেখে অনেক বিজ্ঞানী এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই এআই বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।

এই সম্ভাবনার কথাই প্রথম তুলে ধরেন জীববিজ্ঞানী এবং সনি এআই-এর প্রধান হিরোকি কিটানো। ২০১৬ সালে তিনি বিশ্বের গবেষকদের সামনে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, যার নাম 'নোবেল টুরিং চ্যালেঞ্জ'। এর মূল লক্ষ্য হলো এমন একটি এআই সিস্টেম তৈরি করা, যা নিজে থেকে এমন কিছু আবিষ্কার করবে যা নোবেল পুরস্কার জেতার যোগ্য। অর্থাৎ, একটি যন্ত্র তখনই এই খেলায় জিতবে, যখন তার আবিষ্কার মানুষের সেরা আবিষ্কারগুলোর সমতুল্য হবে।

এই স্বপ্নের শেষ সীমা ধরা হয়েছে ২০৫০ সাল। পরিকল্পনা হলো, এই সময়ের মধ্যে এমন এক এআই বিজ্ঞানী তৈরি করা হবে, যা কোনো মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজে থেকে সমস্যা খুঁজে বের করবে, সেই অনুযায়ী পরীক্ষানিরীক্ষার পরিকল্পনা করবে, তথ্য বিশ্লেষণ করবে এবং শেষ পর্যন্ত নোবেলের মতো যুগান্তকারী কোনো আবিষ্কার করে দেখাবে।

তবে হয়তো আমাদের ২০৫০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রস কিং, যিনি এই চ্যালেঞ্জের একজন আয়োজক, মনে করেন এমন ঘটনা ঘটতে পারে আরও অনেক আগেই। তার কথায়, "আমি প্রায় নিশ্চিত যে এআই একদিন নোবেল পুরস্কার জেতার মতো যোগ্য আবিষ্কার করবে। প্রশ্ন শুধু এটাই, তাতে ১০ বছর লাগবে, নাকি ৫০ বছর।"

তবে এই আশা নিয়ে সবাই একমত নন। অনেক বিজ্ঞানীর মনেই প্রশ্ন, বর্তমান এআই তো মানুষের তৈরি করা জ্ঞানভান্ডার থেকেই শব্দ আর ধারণা ধার করে শেখে। তাহলে কীভাবে এটি এমন কোনো ধারণা দেবে যা সম্পূর্ণ নতুন এবং মানুষের জ্ঞানের বাইরে?

নোবেল পুরস্কার জেতার জন্য কী লাগে?

নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, এই পুরস্কার তাদের দেওয়া হয়, যারা "মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ" বয়ে এনেছেন। নোবেল কমিটির মতে, একটি আবিষ্কারকে তিনটি মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়: মানবজাতির জন্য উপকারী হওয়া, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হওয়া, এবং এটি বিজ্ঞানের নতুন নতুন দরজা খুলে দেওয়া।

যদিও নোবেলের নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র জীবিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই পুরস্কার পেতে পারে, এআই কিন্তু ইতিমধ্যেই কমিটির নজরে এসেছে। ২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়া হয় সেই সব গবেষকদের, যারা কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক (এআই-এর ভিত্তি) তৈরি করেছিলেন। একই বছর, রসায়নে পুরস্কার পান গুগলের তৈরি করা এআই সিস্টেম 'আলফাফোল্ড'-এর পেছনের বিজ্ঞানীরা, যা প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, পুরস্কারগুলো এআই সিস্টেমকে নয়, বরং এআই সিস্টেমের পেছনের মানুষদের দেওয়া হয়েছে।

এআই কি সত্যিই নিজে থেকে গবেষণা করতে পারে?

একটি এআই-কে যদি তার আবিষ্কারের জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে হয়, তবে পুরো গবেষণাটি হতে হবে প্রায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। অর্থাৎ, এআই-কে নিজে থেকে প্রশ্ন তৈরি করতে হবে, পরীক্ষা চালাতে হবে এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করতে হবে—মানুষের ভূমিকা থাকবে সামান্যই।

আশ্চর্যজনকভাবে, এআই ইতিমধ্যেই এই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, এআই পশুর ভাষা বুঝতে পারে, মহাবিশ্বে প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে নতুন অনুমান তৈরি করতে পারে, এমনকি মারাত্মক ধূলিঝড়ের পূর্বাভাসও দিতে পারে।

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা 'কোসায়েন্টিস্ট' নামে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন, যা রোবট চালিত ল্যাবে বসে নিজে থেকেই জটিল রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনা করে এবং তা সম্পন্নও করে।

ভবিষ্যতের এআই: যে নিজের ভাবনা নিয়েও ভাবতে পারবে!

তবে বড় বাধা এখনো অনেক। সমালোচকরা বলছেন, বর্তমান এআই সিস্টেমগুলো নির্দিষ্ট বিষয়ে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারলেও, এর পেছনের মূল বিজ্ঞানটা তারা শিখতে পারে না। যেমন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এআই গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারলেও, এর পেছনের পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো (যেমন নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র) শিখতে পারেনি।

কম্পিউটার বিজ্ঞানী সুব্বারাও কামভাপতি বলেন, এখানেই মানব গবেষকদের গুরুত্ব। একজন বিজ্ঞানী তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বাস্তব জগৎকে যেভাবে বোঝেন, এআই শুধু ডেটাসেটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তা শেখে।

তবে বিজ্ঞানীরা এমন এআই তৈরির চেষ্টা করছেন যা নিজের চিন্তাভাবনা নিয়েও ভাবতে পারবে (মেটা-রিজনিং)। এই ক্ষমতা অর্জন করলে এআই বুঝতে পারবে কোন পরীক্ষাটি সেরা ফল দেবে এবং নতুন তথ্য পেলে নিজের তত্ত্বগুলোকেও সে নিজেই সংশোধন করতে পারবে।

বিজ্ঞানের জগতে এআই-এর উত্থান নিয়ে উদ্বেগও কম নয়। কারো কারো মতে, এআই-এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে গবেষণায় ভুলভ্রান্তি বাড়ছে। একটি বড় ভয় হলো, এআই যদি সব সহজ পথ দেখিয়ে দেয়, তবে বিজ্ঞানীরা নতুন ও ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভাবতে ভুলে যাবেন। ফলে "উৎপাদন বাড়বে, কিন্তু জ্ঞান কমবে"।

সবচেয়ে বড় উদ্বেগটি হলো তরুণ বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গবেষণার কঠিন কিন্তু জরুরি কাজগুলো যদি এআই করে দেয়, তাহলে নবীন গবেষকরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ হারাবেন। এর ফলে ভবিষ্যতে হয়তো নোবেল পুরস্কার জেতার মতো দক্ষ বিজ্ঞানীই তৈরি হবে না।

শেষ পর্যন্ত এআই বিজ্ঞানের জগতে আশীর্বাদ না অভিশাপ হয়ে আসবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এআই নোবেল জিতবে কি না, এই একটি প্রশ্নই এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status