ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যায় ১০ লেনে উন্নিত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Wednesday, 8 October, 2025, 2:28 PM

৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যায় ১০ লেনে উন্নিত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যায় ১০ লেনে উন্নিত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নিত হওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত। ছয় লেনের টোলভিত্তিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে এবং দুই পাশে দুই লেনের সার্ভিস রোডসহ ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ১০ লেনে উন্নীত করতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। সরকার এখন এই বিশাল ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি), বহুপাক্ষিক ঋণ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের বিভিন্ন মডেল পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

উল্লেখ্য,দেশের প্রধান অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। দেশের মোট আমদানি–রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবাহিত হয় এই সড়কে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের সুষ্ঠু যোগাযোগ এই সড়কের উপর নির্ভরশীল। এই মহাসড়ককে দেশের লাইফ লাইন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৯ সালে এই সড়ক দিয়ে দৈনিক যানবাহন চলাচলের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা ৭০–৮০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। শিল্পকারখানার উৎপাদন, কাঁচামাল পরিবহন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মহাসড়কটিকে ১০ লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। প্রকল্পটিকে আধুনিক ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে প্রকল্পটিকে দেখছে পরিকল্পনাকারীরা।

২০১৬ সালে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হতে ব্যয় হয়েছিল সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এবার ব্যয় ধরা হয়েছে সেই অংকের প্রায় ১৬ গুণ। প্রধানত জমি উন্নয়ন, উড়াল ইন্টারচেঞ্জ ও মাল্টি–লেভেল ক্রসিংয়ের মতো আধুনিক অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় খরচ এত বেশি হবে বলে সওজ সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ২৫০ কিলোমিটার অংশের ডান পাশে রাস্তা সম্প্রসারণ করার মতো অন্তত ৯০ শতাংশ জমির মালিকানা সওজের থাকলেও ভূমি উন্নয়ন, পুনর্বাসন, সেতু নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক টোল সিস্টেম, নজরদারি ক্যামেরা, সড়ক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, মালবাহী যানবাহনের স্টেশন এবং জরুরি লেন যোগ হওয়ায় ব্যয় কমানোর সুযোগ খুব একটা নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। প্রকল্পে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, নরসিংদীসহ কয়েকটি জায়গায় ছোট–বড় প্রায় ২৮টি সেতু ও কালভার্ট পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এডিবির নকশায় বলা হয়েছে, এটি হবে পূর্ণাঙ্গ শুল্ক মহাসড়ক। অর্থাৎ ব্যবহারকারীকে টোল দিয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং সার্ভিস রোড হয়ে সাধারণ যানবাহন বিচ্ছিন্নভাবে চলাচল করবে। মহাসড়কের কোথাও থাকবে না এলোমেলো ইউটার্ন বা সরাসরি প্রবেশপথ। থাকবে ছয়টি মাল্টি–লেভেল ফ্লাইওভার ক্রসিং, ২০টির বেশি উড়াল ইন্টারচেঞ্জ, তিন মিটার প্রশস্ত জরুরি লেন এবং আধুনিক মাল্টি–লেয়ার মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম। ভয়াবহ যানজটের স্থান কাঁচপুর, সাইনবোর্ড, মেঘনা ও ভৈরব সেতু এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুতগতির করিডর তৈরি করা হবে। সওজ ইতিমধ্যে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল, পণ্য পরিবহন, দুর্ঘটনা ও গড় গতি নিয়ে একটি বেসলাইন জরিপ করেছে, যেখানে দেখা গেছে যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ৮৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ শ্রমঘণ্টা ও জ্বালানি অপচয় হচ্ছে।

প্রকল্পে প্রণয়নে সংশ্লিষ্টরা দপ্তরে চিঠি চলাচলির মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী। যার ধারাবাহিকতায় সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল  ঢাকা–চট্টগ্রাম রুট দেশের অর্থনীতির প্রধান ধমনির বিষয়টিকে আমলে নেয়। তাই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো নিশ্চিত করতে এ ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জানগেছে, মহাসড়কের অন্তত একটি অংশ পিপিপি মডেলে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, যেখানে স্থানীয় ও বিদেশি ডেভেলপাররা অর্থ বিনিয়োগ করে দফায় দফায় টোল আদায়ের সুযোগ পেতে পারে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের কয়েকটি অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতা, টোল আদায় নিয়ে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে চার লেন প্রকল্পটি সময় ও ব্যয় উভয় দিকে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। এবার সুশাসন, ই–টেন্ডারিং, প্রকৃত কস্ট অডিট এবং ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে ব্যয় বহু গুণে বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ককে হাইওয়ে স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত করা হলে দেশের জিডিপিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ থেকে ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ হতে পারে বলে মনে করেন পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থার একাধিক বিশ্লেষক। তারা মনে করেন, কঙবাজার গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মীরসরাই শিল্পাঞ্চল তথা চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগের কথা মাথায় রাখলে এখনই মহাসড়ক প্রসারণ ছাড়া বিকল্প নেই।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, পুরো উন্নয়ন পরিকল্পনা চূড়ান্ত হতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে। প্রস্তাব পর্যালোচনায় পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি জমি উন্নয়ন ও প্রকল্পের প্রাথমিক কার্যক্রমে সম্ভাব্য ঋণের উৎস হিসেবে এডিবি, এআইআইবি ও জাইকার মধ্যে প্রাথমিক সমন্বয় চলছে। অর্থের সংস্থান হওয়ার সাথে সাথে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status