পাহাড়ের ক্রীড়াঙ্গনে স্বপ্নের সোপান: রাঙ্গামাটি বিকেএসপি নিয়ে আশা, ক্ষোভ ও জমি-সংকট
মোঃ কামরুল ইসলাম, রাংগামাটি
|
![]() পাহাড়ের ক্রীড়াঙ্গনে স্বপ্নের সোপান: রাঙ্গামাটি বিকেএসপি নিয়ে আশা, ক্ষোভ ও জমি-সংকট পার্বত্য প্রতিভার হাতছানি কেন প্রয়োজন বিকেএসপি, ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে তীরন্দাজির মতো খেলাগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়মিতভাবে জাতীয় স্তরে প্রতিভাবান খেলোয়াড় উপহার দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলের তরুণদের শারীরিক সক্ষমতা ও প্রাকৃতিক ক্রীড়াপ্রবণতা দেশের ক্রীড়া মানোন্নয়নে এক অফুরন্ত উৎস। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং উচ্চমানের প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক সম্ভাবনাই অঙ্কুরে বিনাশ হয়। এই প্রেক্ষাপটে, রাঙ্গামাটিতে বিকেএসপি’র আঞ্চলিক শাখা স্থাপনের সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়েরা। তাদের মতে, এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং পাহাড়ের খেলাধুলায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এখান থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জমির খোঁজে কমিটি, স্থানীয়দের ক্ষোভের আগুন বিকেএসপি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সম্প্রতি রাঙ্গামাটি সফরে আসে। জেলা সদর, কাপ্তাই ও কাউখালী উপজেলায় বিভিন্ন প্রস্তাবিত জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে এই পরিদর্শন প্রক্রিয়াতেই বিতর্কের সূত্রপাত। বিশেষ করে, কাউখালী উপজেলার ৯৮ নম্বর কচুখালী মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) চিংকিউ রোয়াজা কর্তৃক দান হিসাবে এক একরসহ মোট ৪৯ একর পাঁচ শতক জমি অধিগ্রহণের যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল, কমিটি সেটি পরিদর্শন না করেই ফিরে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। হেডম্যান সহকারী বিপন চাকমা ও প্রবীণ শিক্ষক অমরেন্দ্র রোয়াজা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন আচরণকে চরম বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দাবি, প্রস্তাবিত এই জমিটি কাউখালী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরে, সমতল ও নিচু পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত, যা পাহাড় কাটা বা উচ্ছেদের ঝুঁকি ছাড়াই অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক চিঠি দিয়ে জমিটি পরিদর্শনের অনুরোধ জানালেও কমিটি অফিসিয়াল বার্তা ও সিদ্ধান্তহীনতা। এই বিতর্ক নিয়ে জেলা প্রশাসনও রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায়। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ মারুফ জানিয়েছেন, কাউখালীর কচুখালী মৌজার প্রস্তাবিত জমিটির বিষয়ে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পরিদর্শনে আসা কমিটির সদস্যরা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে কেবল কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গা পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে নির্দেশনা পেলে বাকি জায়গাগুলোও পরিদর্শন করা হবে। অর্থাৎ, কোথায় হবে স্বপ্নের বিকেএসপি, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আশার উল্টো পিঠ: ভূমি হারানোর শঙ্কা বিকেএসপি স্থাপনের খবরে যেমন একদল তরুণ আশার আলো দেখছে, তেমনি আরেকদিকে ভূমি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছে স্থানীয় একটি জনগোষ্ঠী। রাঙ্গামাটি সদরের ঝগড়াবিল এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার স্থানীয়দের মধ্যে এই উদ্বেগ বেশি। তাদের আশঙ্কা, বিকেএসপি কেন্দ্র স্থাপনের নামে তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হতে পারে। বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠকদের অভিমত, সরকারের উচিত হবে স্থানীয়দের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এমনভাবে জমি নির্বাচন করা, যাতে ক্রীড়া উন্নয়নের এই মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের পাশাপাশি কোনো স্থানীয় জনগোষ্ঠী উদ্বাস্তু না হয়। পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য এই ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। রাঙ্গামাটিতে বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন নিঃসন্দেহে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে দ্রুত জমি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং স্থানীয়দের ক্ষোভ ও উদ্বেগকে আমলে নিয়ে একটি সুদূরপ্রসারী ও জনবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। যত দ্রুত এই সিদ্ধান্তহীনতা কাটবে, তত তাড়াতাড়ি পাহাড়ের তরুণ ক্রীড়াবিদরা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পাবে। এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ ক্রীড়া প্রতিভার জন্য বিকেএসপির ভিত্তি স্থাপন হোক স্বচ্ছতা ও স্থানীয় জন-আস্থার প্রতীক। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |