ক্যানটিনে ঢুকে আবরার ফাহাদের লাশ দেখে আঁতকে উঠলাম
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() ক্যানটিনে ঢুকে আবরার ফাহাদের লাশ দেখে আঁতকে উঠলাম বুয়েটে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর প্রতিনিধি নেই। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকেরাই বুয়েটের বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহের কাজটি করে থাকেন। আমার সহপাঠীকে ফোন করা ওই ব্যাচমেট বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমারও পূর্বপরিচয় ছিল। হত্যার ঘটনা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। সহপাঠীর সঙ্গে কথা শেষ করে এফ রহমান হল থেকে বেরিয়ে অল্প দূরত্বে থাকা বুয়েটের শেরেবাংলা হলের উদ্দেশে রওনা হলাম। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সামনে পৌঁছে কাউকে দেখতে পেলাম না। আমিই সম্ভবত সেখানে পৌঁছানো বুয়েটের বাইরের প্রথম ব্যক্তি, গণমাধ্যমকর্মী তো অবশ্যই। হলের প্রবেশফটক ভেতর থেকে আটকানো ছিল। ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের কথাবার্তার শব্দ শুনছিলাম। হলে ঢোকার চেষ্টা করব কি করব না, এ নিয়ে দ্বিধা কাজ করছিল। হলের বাইরে দাঁড়িয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকদের কয়েকজনকে ফোন করলাম। কিন্তু ততক্ষণে তাঁদের বেশির ভাগই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দু-একজনকে ফোনে পেলাম। ঘটনা শুনে কিছুক্ষণ পরই তাঁরা শেরেবাংলার হলের সামনে এলেন। এরই মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ঘটনা সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। একে একে পুলিশের সদস্যসহ আরও অনেকে খবর পেয়ে শেরেবাংলা হলের সামনে এলেন। আবরার ফাহাদের নিথর দেহ, মারধরের চিহ্ন দৃশ্যমান ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় ভোর সাড়ে পাঁচটা। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ শেরেবাংলা হলে প্রবেশ করে। প্রায় একই সঙ্গে আমিও অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে হলে ঢুকি। ফটকের নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞেস করে জানলাম, এক শিক্ষার্থীর মরদেহ হলের ক্যানটিনে রাখা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে গেলাম সেই ক্যানটিনে। ট্রাউজার ও শার্ট পরা আবরার ফাহাদের লাশ দেখে আঁতকে উঠলাম। তাঁর নিথর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্নগুলো তখনো দৃশ্যমান। আশপাশের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, রাত আটটার (৬ অক্টোবর) দিকে আবরার ফাহাদসহ দ্বিতীয় বর্ষের সাত–আটজন শিক্ষার্থীকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত–আটজন নেতা। তাঁরা আবরার ফাহাদের মুঠোফোন চেক করে ছাত্রশিবির-সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খোঁজেন। একপর্যায়ে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে তাঁকে পেটাতে শুরু করেন তাঁরা। পরে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীও ওই কক্ষে গিয়ে আবরার ফাহাদকে আরেক দফায় পেটান। এতে তাঁর মৃত্যু হলে রাতে সহপাঠীদের ডেকে লাশ হলের সিঁড়ির নিচে রাখতে বলা হয়। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী একদল নেতা-কর্মী আবরারকে হত্যা করেছেন। ছাত্রলীগের নেতারা হলটির সিসিটিভি ফুটেজ লোপাটেরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থী ও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা আমার পূর্বপরিচিত ছিলেন। শেরেবাংলা হলে তাঁকে পেলাম। তাঁর সঙ্গে এবং আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে আবরার হত্যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। সকাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের আরও সাংবাদিক বুয়েট ক্যাম্পাস ও শেরেবাংলা হলে ভিড় করেছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের সংবাদ সংগ্রহ করতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের সংখ্যাও বাড়ছিল তখন। সকাল পৌনে আটটার দিকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কয়েকজন প্রতিবেদকের সঙ্গে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে (ঘটনাস্থল) গেলাম। তখন সেখানে কেউ ছিল না। কক্ষটি ছিল এলোমেলো। সিলিং ফ্যান চলছিল। আর কক্ষের এখানে-সেখানে পড়ে ছিল সিগারেটের ফিল্টার। পাশের কক্ষে (২০১০ নম্বর) এক শিক্ষার্থীকে পেলাম। জানতে চাইলে তিনি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই আমাকে বললেন, আগের রাতে তাঁর কক্ষের আশপাশে কিছু ঘটেনি, তিনি কোনো শব্দ পাননি। অথচ পরে জানা যায়, তিনি নিজেও আবরার ফাহাদকে পেটানোর ঘটনায় জড়িত ছিলেন। আবরার ফাহাদকে হত্যা মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন নামের বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন এই সহসভাপতির ব্যাপক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা সেই অসত্য কথা এখনো আমার কানে বাজে। আবরার ফাহাদ থাকতেন শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। আমি সকাল সোয়া আটটার দিকে সেই কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ পেয়েছিলাম। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে এক শিক্ষার্থী দরজা সামান্য খোলেন। কিন্তু পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন না। নিজের নাম না বললেও ওই শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য দিলেন। আবরার সাধারণত কী করতেন, কেমন মেজাজের ছিলেন, সে বিষয়ে বললেন। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু বললেন না। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার কাছে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্রলীগ নেতারা আবরার ফাহাদকে শিবির বলে সন্দেহ করেছিলেন। তাঁর শেষ পোস্টে ভারতকে মোংলা বন্দর ব্যবহার ও দেশটিতে গ্যাস রপ্তানি বিষয় নিয়ে সমালোচনা ছিল। এর জেরেই তাঁকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, আটক আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের খবর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগে শেরেবাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করেন একদল শিক্ষার্থী। হল প্রশাসন ও পুলিশকে তাঁরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে বলেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের নাম জানতে চান। কিন্তু পুলিশ কারও নাম বলছিল না। সকাল ৯টার দিক থেকে হলের ভেতর থেকে একজন একজন করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আটক করে হেফাজতে নিচ্ছিল পুলিশ। অন্যদিকে শেরেবাংলা হলে ও বুয়েট ক্যাম্পাসে চলছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ওই দিন দুপুরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল বুয়েট ক্যাম্পাসে যায়। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছিলেন এই মিছিলের উদ্যোক্তা। এতে যোগ দিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তৎকালীন ভিপি (সহসভাপতি) নুরুল হকও। তাঁরা মিছিল নিয়ে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন তাঁরা বুয়েটের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা-মহানগরেও বিক্ষোভ হয়। আর আবরার ফাহাদ হত্যার এক দিন পর ৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় লজ্জা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আগে বুয়েটের ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং একটি তদন্ত কমিটি করে তারা। পরে ১০ অক্টোবর কালো ব্যাজ ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকমিছিল করে ছাত্রলীগ। এই মিছিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। বিচারের দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছিলেন আপসহীন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে বুয়েটের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। হত্যার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে প্রথমে ৮ দফা ও পরে সংশোধিত ১০ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন চালিয়ে যান তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১১ অক্টোবর ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৬ অক্টোবর গণশপথের মধ্য দিয়ে তাঁরা মাঠপর্যায়ের আন্দোলন তুলে নেন। তবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলতে থাকে। ১৩ নভেম্বর পুলিশ আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিলে ১৪ নভেম্বর ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তিন দফা দাবি পূরণের শর্ত দেন শিক্ষার্থীরা। সেই দাবিগুলো মানতে ১৮ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ সময় চান বুয়েটের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। দাবিগুলো মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট শিক্ষার্থীরা ৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ২৮ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দেন। ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ ডিসেম্বর—এই আড়াই মাসের বেশি সময় কার্যত অচল ছিল বুয়েট। ওই আড়াই মাসের বেশি সময় নিয়মিত বা দু-এক দিন পরই বুয়েট ক্যাম্পাসে যেতাম। বুয়েটের ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা হতো। হত্যার বিচারের দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ আপসহীন অবস্থানে ছিলেন। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা নেতিবাচক মন্তব্য এলেও তাঁরা দমে যাননি। আবার যেকোনো ঘটনাকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে ব্যবহারের যে প্রবণতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থাকে, সে ব্যাপারেও তাঁরা সজাগ ছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল আবরারের খুনিদের বিচার এবং নির্যাতনমুক্ত ক্যাম্পাস। সেটা নিশ্চিত করেই তাঁরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরেছিলেন। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীরে মারধরের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত মারধরের কারণে শরীরের ভেতরে গভীর জখম হয়েছে। এ কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে মারধর ছিল প্রায় নিয়মিত ঘটনা। এসব ঘটনায় জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ধরনের ঘটনায় কারও শাস্তি তো হতোই না, বরং অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা হল প্রশাসনও এ কাজে সহযোগিতা করত। আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে শিবির সন্দেহে মারধরের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো একটা সামাজিক আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ছাত্রলীগের ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় আবরার ফাহাদকে হত্যার পরদিন (৭ অক্টোবর) তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে পুলিশ মোট ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়, যাঁদের সবাই বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবরার ফাহাদের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছিল। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীরে মারধরের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত মারধরের কারণে শরীরের ভেতরে গভীর জখম হয়েছে। এ কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৬ মার্চ হাইকোর্ট এ রায় বহাল রাখেন। আবরার ফাহাদ হত্যায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তিনজন আসামি আগে থেকেই পলাতক। তাঁরা হলেন মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। আর কত অপেক্ষা, প্রশ্ন ভাইয়ের আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর বুয়েট, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হবেন। তাই ভর্তি হন বুয়েটে। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আবরারদের বাড়ি। বাবা বরকত উল্লাহ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ (বর্তমানে বুয়েটের শিক্ষার্থী) তখন ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। অক্টোবরে ছুটিতে দুই ভাই একসঙ্গে কুষ্টিয়া গিয়েছিলেন। পড়াশোনার জন্য আবরার আগেই ফিরে এসেছিলেন আবাসিক হলে। সেটাই ছিল তাঁর শেষ বাড়ি যাওয়া। আবরার ফাইয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের এখন একমাত্র চাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার থাকতেই আবরার হত্যা মামলার সব প্রক্রিয়া শেষ করে রায় কার্যকর করা। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতে রায় হয়ে গেছে। হাইকোর্টের রায় হয়েছে গত ১৫ মার্চ। এখন মামলাটি আপিলের জন্য অপেক্ষমাণ। এই সরকার থাকতেই আপিলের প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে শুরু করা হোক। ছয় বছর হয়ে গেছে। আর কত অপেক্ষা করব বিচারের জন্য!’ |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |