রাকিবের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে শাস্তি হতে পারে নাসির হোসেনের
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 28 April, 2025, 8:14 PM
রাকিবের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে শাস্তি হতে পারে নাসির হোসেনের
অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যভিচার ও মানহানির অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে আদালতে করা মামলার কার্যক্রম চলছে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের করা মামলায় আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল সোমবার (২৭ এপ্রিল)। কিন্তু মামলাটি শুনতে বিব্রত প্রকাশ করে অন্য আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান।
আইনজীবীরা জানান, বিচারক মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছেন। সিএমএম মামলাটি অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন। পরে সেখানেও মামলার শুনানি হতে পারে। কিংবা বিচারক সেটিকে অন্য আদালতেও পাঠাতে পারেন।
যে শাস্তি হতে পারে নাসির হোসেনের:
ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে তার কী শাস্তি হতে পারে সেই প্রশ্নে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান গণমাধ্যমকে জানান, আইনে এই মামলার বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির কথা বলা আছে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ৪৯৪ ধারার আন্ডারে ৭ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে। ৪৯৭ ধারার আন্ডারে ৫ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। ৪৯৮ ধারায় ৩ বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। এবং ৪৬৮ ও ৭১ ধারার অধীনে যথাক্রমে ৭ ও ৩ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন, তবে মামলার কোনো ধারাগুলোতে আদালত কী শাস্তি দেবেন সেটা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে আদালত নির্ধারণ করবেন।
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আমরা আদালতের ন্যায় বিচারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আমরা এই মামলায় ৪ বছর ধরে লড়াই করছি। আমাদের বিশ্বাস আমরা আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।
আদালতে কী হলো আজ:
সোমবার মামলাটিতে নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা দুজনেই আদালতে হাজির হন। তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু আদালতে দুটি আবেদন করেন। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি আবেদন করেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়াতে বলেন নাসির হোসেন ব্যভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আদালতে বিচার চলছে। বিচার শেষে আদালত রায়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কি না এবং ব্যভিচারের সম্পর্ক করেছেন কি না।
একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন। এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি এখন আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।
দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা একটা ব্যস্ত আদালত। এ মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার, এত সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় প্রভাব পড়ে। আমি আসলে বিব্রতবোধ করছি। মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দিই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন?
তখন আইনজীবীরা বলেন, এতে তাদের আপত্তি নেই। তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। সিএমএম মামলাটি অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
আগে কী হয়েছিল:
২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একই আদালত ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ মার্চ মহানগর দায়রা আদালতে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করেন তাদের আইনজীবী কাজী নজিব্যুল্লাহ হিরু। অন্যদিকে সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের রিভিশন অবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ মামলাটির বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। একইসঙ্গে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তার মামলার দায় থেকে অব্যাহতি থাকবেন বলে আদেশ দেন।
এর আগে রাকিব হাসানের করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন।
অভিযোগে বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন; যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তাম্মিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন নাসির। তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী কন্যা মারাত্মভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।