কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের কড়াইবরিশাল খেয়াঘাট এলাকায় পুলিশের নৌকার সামনে আবারও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ছয় থেকে সাতজন গরু ব্যবসায়ীর কয়েক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। এ সময় ডাকাতদের হামলায় তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের সামনেই ডাকাতি, নির্বিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভুক্তভোগীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে রাজীবপুর থেকে আসা দুটি নৌকায় কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটের কাছে সশস্ত্র ডাকাতরা হানা দেয়। গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ডাকাত দল যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আতঙ্কিত যাত্রীরা চিৎকার করলে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন, তবে ততক্ষণে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
এদিকে, ঘটনার সময় খেয়াঘাটে পুলিশের একটি নৌকা ছিল। কিন্তু আশেপাশে থাকা তিনজন পুলিশ সদস্য ডাকাতদের ধরতে কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ডাকাতদের কবলে পড়া নৌকার মাঝি মোসলেম উদ্দিন বলেন, "গরু ব্যবসায়ীদের নৌকা ডাকাতি করতে এসে ডাকাতরা আমার নৌকাও লুট করেছে। ১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত দল দুটি নৌকা থেকে সব লুট করেছে। আমার কাছে তিন যাত্রীর ৫৭ হাজার টাকা ছিল, আমাকে আঘাত করে সেই টাকা নিয়ে গেছে। গুলি ছোড়ার সময় কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী প্রাণ বাঁচাতে পানিতে লাফ দিয়েছেন।"
কড়াইবরিশাল এলাকার যাত্রী ইসহাক বলেন, "দুটি নৌকায় থাকা যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা লুট করেছে ডাকাতরা। পরে দেখি, অনেকে আতঙ্কে পানিতে লাফ দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে থাকা টাকা পানিতে ভিজে গেছে।"
স্থানীয় বাসিন্দা আজম মিয়া বলেন, "গুলির শব্দ ও যাত্রীদের চিৎকার শুনে আমরা দ্রুত নৌকা নিয়ে এগিয়ে যাই। ডাকাতদের ধাওয়া করলেও তারা এরই মধ্যে পালিয়ে যায়। অথচ ঘাটে থাকা পুলিশের নৌকা থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।"
এক মাসের ব্যবধানে তৃতীয় ডাকাতি, আতঙ্কে যাত্রীরা
এ ঘটনার আগে গত ২৯ জানুয়ারি একই এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে একটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরও আগে ২১ ডিসেম্বর চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের ২০০ বিঘার চরের কাছে একদল সশস্ত্র ডাকাত পিস্তল ও দেশি অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নেয়।
নদীপথে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন শত শত মানুষকে এ পথে যাতায়াত করতে হয়, কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে তারা এখন চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাহেদ খান বলেন, "ঘটনাস্থল দুর্গম এলাকায়। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে বলা যাবে। তবে ডাকাতির ঘটনা সত্য।" যাত্রী ও স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যায় এবং নদীপথ নিরাপদ থাকে।