ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
বগুড়ার শেরপুর পৌর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে ৭তলা ভবন
দীপক কুমার সরকার, বগুড়া
প্রকাশ: Sunday, 5 January, 2025, 5:14 PM

বগুড়ার শেরপুর পৌর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে ৭তলা ভবন

বগুড়ার শেরপুর পৌর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে ৭তলা ভবন

নাকে-মুখে থাকেনা কোন মাস্ক বা জীবাণু আটকানো কোন বস্তু। শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা অপসারণের কাজ করে  থাকেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা। পরিচয়ের দিক দিয়ে এরা সুইপার বা বাঁশফোড়। সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভা যেখানেই দুর্গন্ধময় ময়লা-আবর্জনা, সেখানেই ছুটে যান এ সম্প্রদায়ের লোকেরা। এদের পরিস্কার করা দুগর্ন্ধযুক্ত পয়ঃনিস্কাশন ও ময়লা আর্বজনার হাত থেকে রেহাই পেয়ে আমরা সভ্য সমাজের মানুষেরা বসবাস করে আসছি অনেকটাই সুগন্ধি নিয়ে। অথচ পৌরবাসীর বর্জ্য পরিষ্কারে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া শত-শত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জীবন কাটে ময়লা-আবর্জনা বা নর্দমাযুক্ত আবাসের মাঝেই। এদের মধ্যে অনেকের নেই  কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই। ফলে ফুটপাথ, খোলা আকাশ নিচে কিংবা সরকারি-বেসরকারি পরিত্যক্ত কক্ষের মধ্যে গাদাগাদি করে কাটে তাদের জীবন। নোংরা স্যাত স্যাতে পরিবেশে বসবাস করায় অধিকাংশ পরিচ্ছন্নকর্মীদের দেহে বাসা বেঁধেছে অ্যাজমা, বক্ষব্যাধি, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ। দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কিংবা অল্প বেতনে পৌরসভায় কাজ করেন এরা। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে টানাটানি করে বেঁচে থাকার জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত তারা। সামাজিকভাবে অবহেলিত হওয়ায় এদের ভবিষ্যৎ প্রজম্মগুলোর প্রতি শিক্ষা- স্বাস্থ্য সচেতনা, চিত্তবিনোদনের অভাব থেকেই যাচ্ছে। অথচ সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি এসব হরিজনরা সুন্দর ও স্বচ্ছ দেশ বিনির্মানের অংশীদার। এদের পুরোনো কুসংস্কার ও ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন করে আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নসাধন করলেই এরা খুঁজে পাবে উন্নত জীবনযাপনের পথ। এর সফলতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী(বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত)শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মুজিববর্ষে ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছিল। ওই উপহারের ধারাবাহিকতায় আবাসন সংকটে থাকা হরিজনরাও এসব ফ্ল্যাট পাচ্ছেন । 

এ লক্ষে বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার কার্যালয়ের পূর্ব পার্শ্বে করতোয়া নদীর তীরে বসবাসরত হরিজন কলোনিতে নির্মাণ হতে যাচ্ছে সাত তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন। ৭ হাজার ৫০ বর্গফুটের নির্মিতব্য ভবনটিতে ৩৬টি ফ্ল্যাট (ইউনিট) থাকবে। ১টি কিচেন, ১টি টয়লেট ও ২টি বেডরুম সহ প্রতি ইউনিট হবে ১১’শ ৭৫ বর্গফুটের। এছাড়াও ভবনটিতে লিফটের ব্যবস্থা সহ আধুনিক সব ধরনের সুবিধা থাকবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র পৌরসভা ক্লিনার্স রেসিডেন্টশিয়াল বিল্ডিং কন্সট্রাকশন প্রজেক্ট (পিসিআরবিসিপি) প্রকল্পের অধীনে এ ভবনটি নির্মাণ করছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রকল্পধীন এ ভবনের নির্মাণকল্পে প্রাক্কলিত মূল্য ১১ কোটি ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার ০১২ টাকা। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী একাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরফলে এ পুরো বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান ঢাকার মোহাম্মদপুরের মেসার্স জেসিকা এন্টারপ্রাইজ।

তবে ভবনটি নির্মিত হলে হরিজনদের দীর্ঘদিনের আবাসন সংকট নিরসন হবে। এছাড়াও পরবর্তীতে সেখানে হরিজনদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা হিসেবে কমিউনিটি সেন্টার ও শিশুদের জন্য বিনোদনমুখী পার্কসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মী হরিজন সম্প্রদায়ের আনন্দ কুমার জানান, আমরা বাসাবাড়ি থেকে ডাস্টবিন ও ডাস্টবিন থেকে মূল ভাগাড়ে আবর্জনা নিয়ে যাই। সারাক্ষণ ময়লা আবর্জনা নিয়েই আমাদের কাজ। অথচ আমরাই থাকি ময়লা আর আবর্জনার মধ্যে, রাস্তার ফুটপাথে কিংবা কোনো বিচ্ছিন্নস্থানে। আমরা অল্প বেতনে কাজ করি। কাজ করলে টাকা দেয়, অন্যথায় না খেয়ে থাকতে হয়। সব সময় ময়লা আবর্জনা নিয়ে থাকায় আমাদের মধ্যে অনেকেই নান রোগব্যাধিতে ভুগছেন। আমাদেরকে কেউ বাসাও ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। সমাজে এখনো পরিচ্ছন্নকর্মীদেরকে অবহেলা ও খারাপ চোখে দেখেন। তবে সরকার ‘হামাদেরকে য্যা একটা বিল্ডিং দিচ্ছে বলে শুনচি, যুদি হামরা ওই বিল্ডিং-এ থাকপার পারি, তাইলে অনেক শান্তিত ঘুমাইবার পামু।’ তবে হামরা ঘর পামু কিনা! জানমু কেমনে-এমন মন্তব্যও করেন কয়েকজন হরিজন।

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্যাম বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সারা দেশে সুষম উন্নয়ন করছে বর্তমান সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।’ আবাসন সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল হরিজন সম্প্রদায়ের। ভবনটি নির্মাণ হলে তাদের আবাসন সংকট আর থাকবে না। তারাও পরিবার নিয়ে উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শেরপুর, বগুড়ার উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. জুলহাস হোসেন বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা সনাক্ত করে পরিস্কারের কাজ চলছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন ‘শেরপুর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটি নির্মাণ করছে। প্রায় ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ভবনে লিফটসহ আধুনিক সব সুবিধা থাকবে। ‘ভবনটিতে ৩৬টি পরিবার বসবাস করতে পারবে।’ পৌর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে। জানুয়ারি মাসেই কাজ শুরু করা হবে। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদি। 

এ প্রসঙ্গে শেরপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশিক খান বলেন, শেরপুর পৌরসভার অর্ন্তভুক্ত হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দকৃত আবাসন ভবনটির নির্মাণকাজ অচিরেই শুরু হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ পৌরসভায় কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ। কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status