বাংলাদেশে টালমাটাল পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পে কতটা সুবিধা করতে পারবে ভারত?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Thursday, 12 September, 2024, 7:21 PM
বাংলাদেশে টালমাটাল পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পে কতটা সুবিধা করতে পারবে ভারত?
টেক্সটাইল শিল্পে এশিয়া অঞ্চলে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে উৎপাদিত টি-শার্ট এবং ট্রাউজার বৈশ্বিক বাজার দখল করেছে। তবে এক্ষেত্রে সবচেড়ে বড় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশ। কোনো দেশই এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ধারে কাছে নেই। ১৯৭৮ সালে যৌথভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ফার্মকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশকে পোশাক রপ্তানিতে একটি পাওয়ার হাউসে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ৪০ লাখ মানুষ কাজ করে। যার বড় একটা অংশ নারী শ্রমিক। এই খাত দেশের মোট জিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখে।
গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। এ তালিকায় প্রথম রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে পোশাক শিল্পের চাকা থমকে যায়। পরবর্তীতে আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন হলেও এ খাতে অস্থিরতা রয়ে গেছে। বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার কারণে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণেও কমেছে উৎপাদন। এ অবস্থায় ভারতের পোশাক শিল্প লাভবান হতে পারবে? এমন প্রশ্ন অনেকের। এ বিষয়টি এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করেছে ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্ট।
দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে পোশাক শিল্পে উৎপাদনও কমেছে। এ অবস্থায় চলতি বছর পোশাক শিল্পে রপ্তানি ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে।
এমন অবস্থায় কিছু সুযোগের অপেক্ষায় ভারত। কারণ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তুলা উৎপাদানকারী দেশ। এসব তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করে তারা। তবে ভারতে অনেক তুলা উৎপাদন হলেও তৈরি পোশাক খাতের দিক দিয়ে দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।
ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে তারা নতুন করে ৫৪ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়েছে। নয়াদিল্লির বাইরের আরেকটি গ্রুপ জানিয়েছে গত আগস্টে তারা স্প্যানিশ ফ্যাশন ফার্ম জারার কাছ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি অর্ডার পেয়েছে।
তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এখনই টেক্কা দেয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই বলে জানিয়েছেন শিল্প বিশ্লেষক মেহেদি মাহবুব। তিনি বলেছেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে সেটি চলে যাবে। ইতোমধ্যে শ্রমিকরা কারখানায় ফিরেছেন এবং উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া পোশাক খাতে যেসব প্রতিযোগী আছে তাদের চেয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন দিকে এগিয়ে আছে। যারমধ্যে অন্যতম হলো কম মজুরিসম্পন্ন শ্রমিক। এমনকি বাংলাদেশের পোশাককেই ইউরোপের বাজারগুলো প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
আরেক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে পোশাক শিল্পে পাল্লা দেয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই। কারণ ভারত পোশাক শিল্পের মতো শ্রমিক নির্ভর খাতে গুরুত্ব দেয়নি। তারা ইলেকট্রনিকের মতো মূলধন নির্ভর খাতের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতের পোশাক রপ্তানির মূল্য কমেছে ১৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।