দিনাজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য এমপি শিবলী সাদিক সহ ৬৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
আর কে ওসমান আলী, নবাবগঞ্জ
প্রকাশ: Tuesday, 27 August, 2024, 6:53 PM
দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবলী সাদিকের নামে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত সোমবার দুপুর ২টার দিকে রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি শিবলী সাদিকসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে নবাবগঞ্জ থানায় মামলাটি করেছেন। নিজের ছেলে ও ছেলের দুই বন্ধুকে হত্যার অভিযোগে তিনি মামলাটি করেন।
গত সোমবার হওয়া হত্যা মামলার বাদী রবিউল ইসলাম নবাবগঞ্জ উপজেলার উত্তর শ্যামপুর গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক।মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ছাড়াও তার ছোট ভাই সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাজওয়ার মোহাম্মাদ ফাহিম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান মানিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আইনুল হক চৌধুরী, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারুল বেগম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক আবুল বাশার সবুজ, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর ইসলাম সবুজ, বর্তমান সভাপতি রুবেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শামীম মিয়া ও ছাত্রলীগ নেতা জামাল বাদশা সহ মোট ৬৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে উপজেলার ২ নং বিনোদনগর নগর ইউনিয়নের কাঁচদহ সেতুর উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজ দূরে করতোয়া নদীতে সাবেক এই সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের একটি বালু মহল ছিল। ঐ বালু মহলে বাদীর ছেলে রিমন ইসলাম সহ তার বন্ধুরা উপজেলার নারায়নপুর মাটিখোড়া গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে কিবরিয়া (৩০) এবং কাচদহ গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে ছাব্বির রহমান (২৩) বালুর ট্রাক্টরের ছিলিপ প্রদান ও হিসাবের দায়িত্বে ছিলেন। ঐ বালু মহলের বালুর ট্রাক্টরের ছিলিপের হিসাব নিয়ে রিমন ইসলাম ও তার বন্ধুদের সাথে মামলার ২নং আসামী শাহিনুর ইসলাম সবুজ সহ একাধিক আসামির সাথে তর্ক বিতর্ক হয়। এ সময় শাহিনুর ইসলাম ওই তিনজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। পরে বিষয়টি রিমন ইসলাম তাঁর বাবাকে জানান।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের ৩০ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বির কাঁচদহ বালুমহাল থেকে একটি মোটরসাইকেল যোগে নবাবগঞ্জ বারুনী মেলায় ঘুরতে যায়। মেলা শেষে রাতে ওই তিনজন কাঁচদহ বালুমহালের উদ্দেশে মোটরসাইকেল যোগে রওনা দেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নে নবাবগঞ্জ-কাঁচদহ পাকা সড়কে কৃষ্ণপুর এলাকায় পৌঁছলে শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে আসামি জিয়াউর রহমান, তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী তাঁদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে শাহিনুর রহমান কুড়াল দিয়ে রিমনের মাথায় কোপ দেন। এ সময় কিবরিয়া চিৎকার দিলে ৩ নং আসামি জিয়াউর রহমান হাসিয়া দিয়ে কিবরিয়ার গলা ও বুকে কোপ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, একপর্যায়ে মামলার আসামি তাজওয়ার ফাহিম, আজিজুল হক, জামিনুর রহমান, সায়েম সবুজ, মো. শামসুজ্জামান, সানোয়ার হোসেন মণ্ডল ও সাদেক আলী হাসিয়া, কুড়াল ও লোহার রড দিয়ে সাব্বির রহমানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকেন। রিমন, কিবরিয়া ও সাব্বিরের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আসামিরা তাঁদের লাশ রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিহতের পরিবার ওই তিনজনের লাশ শনাক্ত করেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেন। এজন্য ওই সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তখন মামলা করার সাহস পাননি। সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের পরিকল্পনায় আসামিরা ওই তিনজনকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাওহীদুল ইসলাম বলেন- এ ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এমপি সহ ৬৪ জনার বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে এবং আসামীদের গ্রেফতার করার অভিযান চলছে।