ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
আয়া থেকে শতকোটি টাকার মালিক কে এই মুক্তা রানী?
মোঃ মামুন অর-রশীদ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ: Sunday, 25 August, 2024, 8:16 PM
সর্বশেষ আপডেট: Sunday, 1 September, 2024, 3:31 PM

আয়া থেকে শতকোটি টাকার মালিক কে এই মুক্তা রানী?

আয়া থেকে শতকোটি টাকার মালিক কে এই মুক্তা রানী?

অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন। এক সময় এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের একান্ত কর্মচারী নজরুল ইসলাম স্বপনের(ন্যাংড়া স্বপন)  সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। একদিকে ন্যাংড়া স্বপন, অপরদিকে  চাচাতো ভাই দুলালের মাধ্যমে আয়া পদে চাকরী শুরু করেন সিভিল সার্জন অফিসে। চাকুরীরত থাকা অবস্থায় ন্যাংড়া স্বপনের হাত ধরে সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে ।

 একদিকে মুক্তা সেনকে মন্ত্রীর মক্ষিরানী হিসাবে উপহার দেওয়ার সুবাদে ন্যাংড়া স্বপন যেমন লাভবান হয়েছেন, ঠিক তেমনি মুক্তারানিকেও আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চার বছর চাকরী করে ছেড়ে দেন সেই চাকরী। মুক্তা রায় থেকে হয়ে ওঠেন মন্ত্রী-এমপির ২য় বউ খ্যাত মুক্তা সেন। মুক্তা সেনের শুরুটা বাংলা সিনেমাকেও হার মানিয়েছে এবং রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, মুক্তারানীর সাথে এমপির সম্পর্ক হওয়ার কারণে প্রথম স্ত্রী অঞ্জলি সেন গলায় ফাঁস দিতে গিয়েছিলেন। যা খুবই দুঃখজনক। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তা সেন। কোর্টে মুহুরি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তার স্বামী।কিন্তু অল্প বয়সে স্বামী নির্মল রায়ের মৃত্যুর পর মুক্তারানি দিশেহারা হয়ে যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পরে দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আয়া পদে চাকরী নিয়েছিলেন তিনি। পরে আয়া পদ থেকে চাকরী ছেড়ে নজর দেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতালের কেনাকাটা, খাবার, আউটসোর্সিং-এ নিয়োগ বাণিজ্য করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া শুরু। তারপর থেকে হাসপাতালের সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হয়ে ওঠেন হাসপাতালের রাণী মুক্তা সেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, রেন্ট এ-কার সেন্টার এর শো-রুম, ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের ইসলামবাগে দুই তলা বাড়ি, শান্তিনগরে দুই জায়গায় প্লট আকারে ৫ শতক করে জমি, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলএসডি গোডাউনের পাশে ১০ শতক জমি, পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের পাশে ৩ পিএম চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাদুপাড়ায় বাড়ি- জমি ও সয়াবিন তেলের কারখানা, চন্ডিপুরে জমি সহ বাড়ি, মিল-চাতাল ও পুকুর ২ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা অগ্রীম, আবাদি জমি রয়েছে ২০ বিঘা। সদরের গড়েয়া বাসস্ট্যান্ডে ৮ শতক জমির উপরে বাড়ি। এ ছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্য, জমি দখলসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি ও বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নওগাঁর অটো রাইস মিল কয়েক কোটি টাকায় কিনেছেন এই মুক্তা সেন।

চলতি বছরে মুক্তা সেনের দুই ছেলে তূর্য ও মাধুর্য এন্টারপ্রাইজ নামে পূবালী ব্যাংক হিসাব নম্বরে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩৮ লাখ ২০৯৯ টাকা। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রমেশ চন্দ্র সেন আটক হওয়ার পর দিন সব টাকা তুলে নিয়ে বর্তমানে রয়েছে ৬ হাজার ৪১৭ টাকা। এ ছাড়াও জনতা, অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকেও তাদের হিসাব নম্বরে দু বছরে লেনদেন রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

নিজের আখের গুছিয়ে ক্ষান্ত হননি এই মুক্তা সেন। ভাইদের রাজনীতিতে যুক্ত করে ঠিকাদারি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া। আর ভাতিজা ভাতিজিদের সরকারি চাকরীও নিয়ে দিয়েছেন এই মুক্তা সেন।

হত্যা মামলায় ভারতে পলাতক থাকা বড় ভাই নারায়ণ ঠাকুরকে এসে যুক্ত করান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। মন্ত্রীর প্রভাব আর রাজনৈতিক দাপটে তারা হয়ে ওঠেন আরো প্রভাবশালী। তার খালাতো ভাই দুলালকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খালাতো বোনের ছেলে নিপুণকে হাসপাতালের ঠিকাদারি, বোনের মেয়ে মৌ কে স্কুলের শিক্ষিকা, আরেক বোনের ছেলে জয় কে ফোর্স সহ রাজস্ব ও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরী দিয়েছেন তার দুই শতাধিক আত্মীয় স্বজনকে।

মুক্তা রায়ের খালাতো ভাই ফণি রায় বলেন, সবাই আমাকে বলে মন্ত্রী আর এমপি নাকি ভগ্নিপতি। আমি বলছি বিয়ে তো খেলাম না। তবে মুক্তার পারিবারিক অবস্থা খারাপ ছিল। শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতো। পরে নিজে বাড়ি কিনেছে। আমাদের আত্নীয় স্বজনের চাকরী নিয়ে দিয়েছে। এলাকায় কিছু জমি কিনেছে।

আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা সবাই তাকে এমপির ২য় বউ হিসেবে চিনতাম। এলাকায় জমি, তার ভাই ও বোনদের সেই সাথে আত্মীয় স্বজনদের চাকরী দিয়েছেন। তাদের বংশের সবার চাকুরী হয়েছে। এলাকার স্কুল গুলোতে অনেককে চাকুরি দিয়েছে। তার বিনিময়ে টাকা নিয়েছে আবার কারো কাছে জমি নিয়েছে। পাশেই মিল চাতাল পুকুর ২ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনার জন্য ৩০ লাখ গত মাসে অগ্রিম দিয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে মুক্তা রায় আয়া পদে যোগদান করেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি সেচ্ছায় চাকরী ছেড়ে দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক বলেন, আয় বহির্ভূত সম্পদ উপার্জনের কোন সুযোগ নেই। কেউ এসবে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কয়েক বছর আগেও যার নুন আন্তে পান্তা ফুরিয়ে যেত সেই মুক্তা এখন শত কোটি টাকার মালিক।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status