ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩ মাঘ ১৪৩১
হোটেল কক্ষ থেকে বের হওয়া সেই যুবক ‘লাপাত্তা’
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Tuesday, 22 August, 2023, 11:21 AM
সর্বশেষ আপডেট: Tuesday, 22 August, 2023, 12:49 PM

হোটেল কক্ষ থেকে বের হওয়া সেই যুবক ‘লাপাত্তা’

হোটেল কক্ষ থেকে বের হওয়া সেই যুবক ‘লাপাত্তা’

কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে খুন হয়েছেন সাইফ উদ্দিন আহমেদ (৪৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা। হাত বেঁধে মাথা ও পায়ে ছুরিকাঘাত করে  তাকে করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তার সঙ্গে হোটেলে ওঠা এক যুবক লাপাত্তা রয়েছেন।

বুকিংয়ের পর তার সঙ্গে হোটেলকক্ষে যাওয়া ওই যুবক রাত ৮টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে সাইফ উদ্দিনের বাইকটি নিয়ে চলে যান। তার চলে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।


হোটেলকক্ষে মরদেহ পাওয়া গেলেও নিহতের ব্যবহৃত মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও মোটরসাইকেলটির সন্ধান পায়নি পুলিশ। সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে শহরের হলিডে মোড়ের হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সাইফের হাতবাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঘোনারপাড়ার সাবেক আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি এলাকার কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের গত কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিলেন। তিনি তিন ছেলের জনক।


হোটেল সূত্র জানায়, রোববার বিকেল ৫টায় সাইফ উদ্দিন ও সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক যুবক হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। এরপর রাতেই হোটেল থেকে বেরিয়ে সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান ওই যুবক।

সোমবার সকালে নিহতের বন্ধু বৈরাম মোহাম্মদ ইলিয়াছ তাকে হোটেলে খুঁজতে আসেন। তাকে নিয়ে হোটেল ম্যানেজার সাইফ উদ্দিনের ভাড়া নেওয়া কক্ষে গিয়ে হুকবিহীন দরজা আটকানো পান। দরজা ঠেলে কক্ষে ঢুকতেই রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।


হোটেল ম্যানেজার রেজাউল বলেন, নিহত সাইফ উদ্দিন ও তার বন্ধুরা প্রায়ই এ হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিতেন। এই কারণে সাইফ উদ্দিন হোটেলের সবার পরিচিত। কাজেই রোববার যখন তিনিসহ আরেকজন মাস্ক পরিহিত যুবক কক্ষ ভাড়া নিতে আসেন তখন আমরা শুধু নিহতের নামই খাতায় নথিভুক্ত করি।

তিনি আরও বলেন, রোববার কক্ষ ভাড়া নেওয়ার কয়েকঘণ্টা পরেই সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে আসা অপরজন অর্ধভেজা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় হোটেল থেকে বের হন। তিনি যাওয়ার সময় সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছেন। যার ফুটেজ আমাদের সিসিটিভিতে সংরক্ষিত আছে।


নিহত সাইফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত শহরের কলাতলীর বৈরাম মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আমরা (সাইফসহ) প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে বের হই। কিন্তু রোববার সাইফের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। রাতে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় নিহতের স্ত্রী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আমি রাতে বিভিন্ন জায়গায় খবর নিই। সকালে সানমুন হোটেল আসি। এখানে এসে তার রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পাই।

নিহতের আরেক বন্ধু কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ আলী ছোটন বলেন, সাইফের মরদেহ উদ্ধারের পর আমরা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখি। সেই ফুটেজে সাইফের সঙ্গে যাকে দেখা গেছে তার শারীরিক গঠন নিহতের দূর সম্পর্কের শ্যালক কায়সার হামিদ নয়নের মতো লাগছে।

তিনি আরও বলেন, সাইফের মরদেহ উদ্ধারের পর নয়ন ফেসবুকে হত্যাকারীর বিচার চেয়ে পোস্ট করলেও তাকে আমরা কয়েক দফা কল করে ঘটনাস্থলে ডেকেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি। পরে শুনেছি পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়েছে।

অন্যদিকে, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে ইংরেজিতে ‘কেএইচ নয়ন’ নামে ফেসবুক আইডির পোস্টে লেখা হয়, ‘আমি নয়ন, নিজেও একজন আইন বিভাগের ছাত্র। আইনের একজন ছাত্র হিসেবে আমি শিখেছি, আদালত থাকতে আমি আইন কখনো নিজের হাতে তুলে নেবো না। ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করা হোক এবং সবাই সিসিটিভি ফুটেজ ভালো করে দেখেন আমার সঙ্গে চেহারার মিল আছে কি না। আমি এই হত্যাকাণ্ড বা এই ঘটনায় কোনোভাবে সম্পৃক্ত নই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে আমি নিজেই আমার সাজা প্রার্থনা করছি। আর যারা আসল বিষয়টাকে ঢাকার জন্য মিথ্যা নিউজ প্রচার করছে তাদের কাছে অনুরোধ চোখ থাকতেও অন্ধ না হয়ে আরেকটু ভালো করে দেখুন ফুটেজটা। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশিকিছু বলার মতো মানসিক শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি।’

এরপর বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে কায়সার হামিদ নয়নের (‘কেএইচ নয়ন’) ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রতিবেদকের কথা হয়। তখন তিনি সদর থানায় অবস্থান করছেন জানিয়ে বলেন, আমি আনসার ভিডিপির ২১ দিনের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছি। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা প্রশিক্ষণে সোমবার সকালেও অংশ নিই। হঠাৎ এক সহপাঠীর মাধ্যমে সাইফউদ্দিন ভাই খুন হওয়ার বিষয়টি জানার পর ছুটি নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সিসিটিভিতে দেখা যুবক আমার মতো বলে প্রচার পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আমাকে ডাকলে আমি থানায় এসেছি। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে। কেউ কেউ চলে গেলেও আমি এবং সাইফ ভাইয়ের বন্ধু ইলিয়াছ এখনো (বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) থানা থেকে বের হতে পারিনি।

নিহতের ছোট ভাই মহিউদ্দিন বলেন, আমার বড় ভাইয়ের মরদেহ বিছানায় পড়ে থাকলেও তার সঙ্গে হোটেলে ওঠা যুবকের কোনো খবর নেই। এছাড়া আমার ভাইয়ের মোবাইল, মোটরসাইকেলের সন্ধান এখনো পাইনি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাউকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে কি না তা বলার সময় এখনো হয়নি। ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, কেন এই হত্যাকাণ্ড এসব জানতে পুলিশ কাজ করছে। সব আয়ত্তে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানানো হবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, নিহতের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে হাত দুটি বাঁধা ছিল। তার শরীরে তিনটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সঙ্গে থাকাদের শনাক্ত করতে কাজ করতে পুলিশ। আশা করছি, খুব শিগগির এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এদিকে, সাইফ উদ্দিনের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ। কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status