|
লকার থেকে উদ্ধার করা সোনা শেখ হাসিনার হলফনামায় দেখানো হয়েছিল কি?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() লকার থেকে উদ্ধার করা সোনা শেখ হাসিনার হলফনামায় দেখানো হয়েছিল কি? দুদক আজ বুধবার বলেছে, অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদের নামে থাকা একটি লকারে ৪২২ ভরির কিছু বেশি সোনা পাওয়া যায়। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে থাকা একটি লকারে পাওয়া গেছে ৪১০ ভরি সোনা। পূবালী ব্যাংকেও শেখ হাসিনার নামে একটি লকার থাকার কথা জানিয়েছে দুদক। সেখানে পাওয়া গেছে একটি ছোট চটের ব্যাগ। সেটি খালি ছিল। দুদক বলছে, লকারের রক্ষিত চিরকুট ও বর্ণনা অনুযায়ী স্বর্ণালংকারগুলো শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানা ও তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বলে ধারণা করা যাচ্ছে। সংস্থাটি সোনার মালিকানা সুনির্দিষ্ট করে আইনগত দায় নিরূপণ করবে বলে জানিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এই সোনা কি শেখ হাসিনার হলফনামায় দেখানো হয়েছিল? ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে শেখ হাসিনা হলফনামা জমা দিয়েছিলেন। তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন গোপালগঞ্জ–৩ আসন থেকে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনার হলফনামাটি এখনো আছে। তাতে দেখা যায়, তিনি নিজের নামে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন। সোনা ও মূল্যবান ধাতুর অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছিলেন ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সেখানে সোনার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ও হলফনামায় সোনা ও মূল্যবান ধাতুর মূল্য বাবদ ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেখিয়েছিলেন। আয়, সম্পদসহ আট ধরনের তথ্য হলফনামায় দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই। দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের হলফনামায় শেখ হাসিনার সম্পদের মধ্যে সোনা ও মূল্যবান ধাতুর মূল্যে কোনো হেরফের নেই। শেখ হাসিনার আয়কর বিবরণীতেও সোনা ও মূল্যবান ধাতুর শুধু মূল্য দেখানো হয়েছে, পরিমাণ নয়। যদিও আয়কর বিবরণীতে পরিমাণ ও দাম দুটোই দেখানোর জন্য ফরমে বলা হয়েছে। সবমিলিয়ে বলা দুষ্কর যে ৮৩২ ভরির মধ্যে শেখ হাসিনার অংশ কত এবং তার পুরোটা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল কি না। কারণ, তিনি হলফনামায় সোনার পরিমাণ উল্লেখ করেননি এবং তা অর্জনের সময়ও জানাননি। বর্তমান বাজারমূল্যে ৮৩২ ভরি সোনার দাম ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো। এই দাম হিসাব করা হয়েছে সোনার মান ২২ ক্যারেট ধরে। বর্তমানে ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিপ্রতি ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। অতীতে দেশে সোনার দাম অনেক কম ছিল। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) হিসাবে, ১৯৭২ সালে দেশে এক ভরি সোনার দাম ছিল ১৬০ টাকা। তা বেড়ে ১৯৭৭ সালে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়। ১৯৯০ সালে সোনার ভরি ছিল ৬ হাজার ২০০ টাকা। ২০০০ সালে তা কমে হয় ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। যদিও এর পর থেকে দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। লকারে কি অন্য কারও সম্পদ রাখা যায় মূল্যবান সামগ্রী রাখার জন্য ব্যাংকগুলো লকার ভাড়া দিয়ে থাকে। ভাড়ার হার ব্যাংকভেদে ভিন্ন। একটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তারা বড় লকার বছরে ৮ হাজার টাকা, মাঝারি লকার ৬ হাজার টাকা এবং ছোট লকার ৪ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছে। দেশের সুপরিচিত একটি ব্যাংকের লকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, লকারে কী রাখবেন, তা নির্ভর করে গ্রাহকের ওপর। লকারের দুটি চাবি থাকে। একটি ব্যাংকের কাছে, আরেকটি গ্রাহকের কাছে। গ্রাহক লকার খুলতে চাইলে দুটো চাবিই লাগে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক লকার খুলে দিয়ে চলে যায়। এরপর গ্রাহক তাঁর মূল্যবান সামগ্রী রাখেন কিংবা নিয়ে যান। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রাহক কখন লকার খুলতে এলেন, কখন গেলেন, তা ব্যাংকের লগ বইতে সংরক্ষণ করা হয়। লকারে কি অন্য কারও সম্পদ রাখা যায়, এ প্রশ্নের জবাবে এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লকারের ভাড়াগ্রহীতা লকারে কার সম্পদ রাখবেন, সেটা তাঁর বিষয়। তবে আয়কর কর্মকর্তারা ধরে নেন, যে ব্যক্তি ভাড়া নিয়েছেন, লকারে রাখা সম্পদ তাঁরই। এনবিআরের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি দাবি করেন যে সম্পদ তাঁর নয়, অন্য কারও, তাহলে সেই প্রমাণ তাঁকে দেখাতে হবে। আবার যে ব্যক্তির সম্পদ হিসেবে বলা হচ্ছে, সেই ব্যক্তির আয়কর বিবরণীতে তা উল্লেখ আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখে এনবিআর। ফলে মর্জিমতো দাবি করার সুযোগ নেই। এখন আইনি প্রক্রিয়া কী এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, শেখ হাসিনার লকার থেকে উদ্ধার করা সোনা তাঁর আয়কর বিবরণীতে না থাকলে নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে কিংবা তাঁর আইনি প্রতিনিধিকে শুনানিতে ডাকার কথা। সেখানেই এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। অবশ্য শুনানিতে শেখ হাসিনার উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন। ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। এ মামলায় তিনি নিজে আইনজীবী নিয়োগ দেননি। রাষ্ট্র দিয়েছে। বরং শেখ হাসিনার সমর্থকেরা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ব্যাংকের লকারে থাকা সোনা শেখ হাসিনার নয় বলেও দাবি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটা সরকারের সাজানো গল্প। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আজ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, লকারে পাওয়া সোনা বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
