“ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর ‘প্রধান কারিগর’ জামুকা”
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() “ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর ‘প্রধান কারিগর’ জামুকা” বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর বলেছেন, “ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর যাত্রাটা কবে শুরু হয়েছে? যেদিন জামুকার জন্ম হয়েছে। জামুকা হল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সরকারি বৈধতা দেওয়ার প্রধান কারিগর।বাংলাদেশ ভ্রমণ “অর্থের বিনিময়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দালাল বানিয়ে তাদের মাধ্যমে অর্থ নেওয়া হয়েছে। জামুকা হল মুক্তিযোদ্ধা ভুয়া বানানোর প্রধান কারিগর। জামুকা তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে এই ধরনের প্রশ্ন ছিল না।” শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের’ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের আওতায় ২০০২ সালে জামুকা চালু হয়। আইনটি প্রণীত হয় ওই বছরের ৩ জুন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তখন ক্ষমতায়। ওই আইনের মাধ্যমে জামুকাকে মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং তাদের তালিকা নিয়ন্ত্রণে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। বিগত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০ বছর পর ২০২২ সালে আইনটি ‘পরিমার্জনপূর্বক যুগোপযোগী’ করে নতুনভাবে প্রণয়ন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩ জুন মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে। তাতে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা সহযোগী’ নামে দুটো আলাদা ভাগ করা হয়। পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর এসে মুক্তিযোদ্ধার সঠিক সংখ্যা ও শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, এটি কোনো ‘কাল্পনিক কাহিনী নয়’।বাংলাদেশ ভ্রমণ “১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তখনকার অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট অব বাংলাদেশ, তিনি একটি চিঠি লিখছেন যে, ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার ভরণপোষণ, যাতায়াত খরচ এবং অন্যান্য খরচাদি বহন করার মত টাকা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নাই। টাকা সংগ্রহ করতে হবে। “৮০ হাজার, এখন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কতজন আছে? প্রায় আড়াই লাখ। তার মানে প্রতি তিনজনে দুইজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমরা এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার রাজত্বে বসবাস করছি।” মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতদিন যে ইতিহাস ও বয়ান লেখা আছে, সেটি ‘সঠিক নয় এবং বিভ্রান্তিতে ভরা’ বলে মন্তব্য করেন নঈম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, “যুদ্ধ একটা খেলনা নয়। জীবন নেওয়া ও দেওয়ার বিষয়। আমরা অস্ত্র নিয়ে অস্ত্র মোকাবিলা করেছি। কখনো আমরা মরেছি, কখনও তাদের হত্যা করেছি।বাংলাদেশ ভ্রমণ “এটা জীবন নেওয়া ও দেওয়ার খেলা ছিল। এটা পল্টনের ভাষণ নয়, এটা সোহরাওয়ার্দীর ভাষণ নয়। এটা ছিল রণাঙ্গন। কিন্তু গণযুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছে, গণশহীদ হয়েছে তার কোনো তথ্য নাই।” নঈম জাহাঙ্গী বলেন, “একটা জাতি মিথ্যা তথ্যের উপর দাঁড়াতে পারে না। একাত্তরে কতজন গণশহীদ হয়েছিল তার সঠিক তথ্য নাই। এটা মুখস্ত বিদ্যা নয়। এটা হাজার বছরের কোনো কাল্পনিক কাহিনী নয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কতজন মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে, তার কোনো সঠিক তথ্য নাই।” “৮০-৯০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাকে কারা, কোন স্বার্থে আড়াই লাখ বানিয়েছে,”– এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “তাদেরকে আমরা চিনি না? আমরা মুক্তিযোদ্ধারা টাকার বিনিময়ে বানিয়েছি, আত্মীয়তার কারণে বানিয়েছি। রাজনৈতিক কারণে, সামাজিক কারণে বানিয়েছি।”অ্যাক্টিভওয়্যার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বলেন, তিনি দায়িত্বে থাকলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বহিষ্কার’ করবেন। “আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা দেবেন না। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অবশ্যই রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন তাদের দিয়ে হবে। “প্রকৃত না ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা! লজ্জাস্কর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছি। এ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে। আমরা মুক্ত হতে চাই ভুয়াদের কবল থেকে। ভুয়ারা আছে বলেই যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজের ইচ্ছামতো বয়ান তৈরি করে।” জামুকা কী করবে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কী করবে–সেদিকে না তাকানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সাধারণভাবে আপনাদের আহ্বান জানাব যে, রণাঙ্গণে যারা আপনাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করবেন। এটার মধ্যে সংজ্ঞার কোনো বিষয় নাই। আমি যাদেরকে জানি, যাদের চিনি, তাদেরকে নিয়ে একটা তালিকা তৈরি করা হবে। “আমার ধারণা, আমরা যারা বেঁচে আছি, আমার ধারণা, আমরা ৯০ ভাগ সফলভাবে একটা তালিকা তৈরি করতে পারব। আগামী সম্মেলনের পরে আমাদের প্রধান কাজটিই হবে এটি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মুক্তিযোদ্ধারাই তৈরি করবে, জামুকা বা মন্ত্রণালয় নয়।” ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৫৪টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন নঈম জাহাঙ্গী। তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। কেন হয়েছে? তারাতো (আন্দোলনকারী) আপনাদেরই সন্তান। আমাদেরই সন্তানরা যখন আবার সংগ্রাম করে, আমরা তাদের পাশে দাড়াই না কেন?” তার ভাষ্য, ‘যুদ্ধ জয়ের গৌরব, প্রাপ্তি ও অহংকার’ জনগণের প্রাপ্য হলেও জনগণ সকল প্রাপ্তি থেকে ‘বঞ্চিত হয়েছে’। জনগণ ‘কলুর বলদের মত’ খেটে গেছে। “৫৫ বছর ধরে তাদের উৎপাদন ভোগ করেছে ক্ষমতায় যাওয়া গোষ্ঠী। পাকিস্তান ও ব্রিটিশদের তাড়ানো হলেও যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা কলোনির মত আচরণ করেছে।” ১৯৭২ সালের পর থেকে কত টাকা লুট হয়েছে, কত মানুষকে হত্যা হয়েছে, কত ‘মিথ্যা বয়ান’ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, সেসব তদন্তে একটি কমিশন করার দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |