ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮ কার্তিক ১৪৩১
বাংলাদেশি ক্রেতারা কি প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়াই কেনাকাটার জন্য প্রস্তুত?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 21 October, 2024, 5:22 PM
সর্বশেষ আপডেট: Monday, 21 October, 2024, 5:24 PM

বাংলাদেশি ক্রেতারা কি প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়াই কেনাকাটার জন্য প্রস্তুত?

বাংলাদেশি ক্রেতারা কি প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়াই কেনাকাটার জন্য প্রস্তুত?

গুলশান ইউনিমার্ট কঠোরভাবে পরিবেশবান্ধব নীতিটি মেনে চলছে। সেখানে পাটের ব্যাগের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তারা শুধু ক্রেতাদের নিজস্ব ব্যাগ আনার অনুমতি দিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সেটি পরিবেশবান্ধব উপকরণ থেকে তৈরি হতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণরূপে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার থেকে সরে এসেছে। ফলে অধিকাংশ গ্রাহককে দোকান থেকে পাটের ব্যাগ কিনতে হচ্ছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ সুপারমার্কেট চেইন স্বপ্ন'র দারুসসালাম আউটলেট। প্রতিদিনের মতোই বেশ স্বাভাবিকভাবে চলছিল বিক্রয় কার্যক্রম।

স্বপ্ন'র একজন নিয়মিত ও বিশ্বস্ত ক্রেতা প্রায় ৯ হাজার টাকার মুদি জিনিসপত্র কিনেছেন। এক্ষেত্রে তাকে জিনিসপত্র বহনের জন্য একটি পাটের ব্যাগ দেওয়া হয়। যার মূল্য ১৪ টাকা। তখন তিনি এই অতিরিক্ত টাকা দিতে অসম্মতি জানান।

ওই গ্রাহক বলেন, 'এটি 'নো প্লাস্টিক' নীতির আড়ালে গ্রাহকদের কাছ থেকে আরও বেশি অর্থ আদায়ের একটি অন্যায্য কৌশল।'

তার ক্ষোভ অন্য লোকেদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এমন পরিস্থিতি তৈরির ১৫ মিনিটের মধ্যে আউটলেট ম্যানেজার ও বেশ কয়েকজন স্টাফ তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। 

শেষ পর্যন্ত ওই গ্রাহক এতটাই বিরক্ত হন যে তিনি তার পুরো অর্ডারটি বাতিল করেন। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক এক পদক্ষেপে বাংলাদেশের সমস্ত সুপারস্টোরে পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিন জাতীয় শপিং ব্যাগ ব্যবহারের উপর ১ অক্টোবর থেকে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সুপারশপগুলো এই নীতির অধীনে বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

যদিও আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বেশিরভাগ দেশের সুপারস্টোরগুলিতে গ্রাহক নিজেই ব্যাগ নিয়ে আসার রীতি রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এখনও এর খুব একটা প্রচলন নেই। এক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত নিয়মটি চালু হওয়ার পর থেকে গত ১০ দিনে আমরা দেশব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছি।

বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্রথম প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু আইনটি শেষ পর্যন্ত অনেকটাই অকার্যকর থেকে যায়। যদিও আইন, প্রবিধান ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে প্রবর্তিত ও সংশোধিত হয়েছে তবে দুর্বল বাস্তবায়ন, অপর্যাপ্ত মনিটরিং ও ব্যাপক অব্যবস্থাপনা এর সাফল্যের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।

এক্ষেত্রে স্বপ্ন'র সিইও সাব্বির নাসির বলেন, "এটি শপিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ। এবং আমরা এটি অনেক আগে থেকেই প্রত্যাশা করেছিলাম। গ্রাহকরা এই সিস্টেমের সাথে পরিচিত না হওয়ার কারণে প্রাথমিক পর্যায়টি কিছুটা ইতস্তত করছে। তবে আশা করি ধীরে ধীরে সবাই এর সাথে মানিয়ে নেবে।"

স্বপ্নে আকারের উপর ভিত্তি করে কাগজের ব্যাগ ও পাটের ব্যাগ ৬ টাকা ও ১৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। একইসাথে গ্রাহকেরা চাইলে পণ্য নেওয়ার জন্য নিজস্ব ব্যাগ আনতে পারে।

তবে মিনা বাজার মিরপুর ১ আউটলেটের ক্যাশিয়ার জেসমিন আরা জানান, তারা গ্রাহকদের নিকট নতুন পরিবেশ-বান্ধব নীতিটি তুলে ধরতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি বলেন, "আমাদের অনেক ক্রেতা এই নীতি সম্পর্কে জানেন না। তাই চেকআউটের সময় আমাদের এটি আলাদাকরে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। তাদের বিষয়টি সম্পর্কে জানাতে আলাদাভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি সময়ের সাথে সাথে মানুষ এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন আমাদের প্রতিবার এটি ব্যাখ্যা করতে হবে না।"

জেসমিন জানান, কিছু গ্রাহক আবার পাটের ব্যাগ কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এই গ্রাহকদের জন্য তারা অবশিষ্ট কার্টুন কিংবা নেট ব্যাগ দিয়ে থাকেন।

জেসমিন বলেন, "আমরা আমাদের স্টক থেকে বিনামূল্যে কার্টুন দিচ্ছি। কিন্তু মুদি জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য এগুলো সবচেয়ে ভালো বিকল্প নয়। যাইহোক, এটি একেবারেই গ্রাহকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে।"

এক্ষেত্রে ফ্রিজিং করা আইটেমগুলো অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য বাদামি কাগজের ব্যাগে মোড়ানো হয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ গ্রাহকই এই সমস্ত পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না।
ছবি: কানিজ সুপ্রিয়া

সপ্ন'র ক্রেতা বিনা আক্তার বলেন, "আপনি যদি হিমায়িত আইটেমগুলি কেনার পরে সরাসরি বাড়িতে যান, তবে বাদামি কাগজের ব্যাগগুলি ঠিকঠাকই কাজ করে। কিন্তু একটু বেশি দূরত্বে গেলে কিংবা হিমায়িত পণ্যগুলি সংরক্ষণ করতে আরও সময়ের প্রয়োজন হলে এই কাগজের ব্যাগগুলি গলে যাওয়া থেকে যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারে না।"

স্বপ্ন'র সিইও সাব্বির নাসির চ্যালেঞ্জের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, "আমরা এই সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য আরও ভালো বিকল্প খুঁজছি৷" 

মিরপুর টোলারবাগের ব্যাংকার আমিন উল্লাহ বলেন, "সুপারস্টোরগুলো এমনিতেই সাধারণ মুদি দোকানের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। কারণ এখানে আমাদের অতিরিক্ত ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনি যখন অনেক কিছু কিনছেন, তখন অতিরিক্ত ব্যাগের জন্য অর্থ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ছোটখাটো কিছুর জন্য; যেমন ১০০ টাকার কেনাকাটার জন্য একটি ব্যাগে ১০ টাকা খরচ করা অতিরিক্ত বলে মনে হয়।"

আমিন তার মেয়ের জন্য জুস কিনতে মীনা বাজারে এসেছিলেন। সেক্ষেত্রে একটি পাটের ব্যাগ কেনার পরিবর্তে তিনি হাতে করেই সেটি নিয়ে যান। 

মিরপুর ১-এর প্রিন্স বাজারে অর্গানিক আইটেমগুলির জন্য বাদামি কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। একইসাথে বিনামূল্যে কার্টুন ও নেট ব্যাগও দেওয়া হয়। আকারের উপর নির্ভর করে পাটের ব্যাগের দাম ৭ থেকে ১২ টাকা হয়। তবে স্টোরটিতে এখনও কিছু পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছিল।

এ সম্পর্কে প্রিন্স বাজারের সেলসপারসন তাহসিন তাবাসসুম তৃষা বলেন, "আমাদের কাছে পলিপ্রোপিলিন ব্যাগের একটি বড় স্টক ছিল। আমরা সেগুলি এমন গ্রাহকদের দিচ্ছি যারা পাটের ব্যাগ কিনতে অসম্মতি জানাচ্ছে। একবার আমাদের এই স্টক ফুরিয়ে গেলে আমরা তাদের আর এগুলো দেব না।"

তাহসিন জানান, তাদের পক্ষ থেকে বেশ উদ্যোগী হয়ে একাধিক টেক্সট বার্তার মাধ্যমে গ্রাহকদের সরকার গৃহীত নতুন নীতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

তাহসিন বলেন, "অন্যান্য সাধারণ ক্রেতাদের তুলনায় আমাদের ক্রেতারা নীতিটির সাথে বেশি পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।"

আমরা মিরপুরের কিছু ছোট সুপারশপও পরিদর্শন করেছি। সেখানে তারা নতুন নীতি সম্পর্কে অনেকটাই উদাসীন বলে মনে হয়েছে। এমনকি তাদের কিছু বিক্রয়কর্মীরও এটি সম্পর্কে জানেন না।

মিরপুর ৬০ ফিট রোডের ডানিয়াল মার্টে নেট ও পলিপ্রোপিলিন উভয় ব্যাগই ব্যবহার করা হচ্ছিল। একইসাথে তারা ক্রেতাদের নিজস্ব ব্যাগ নিয়ে আসার সুযোগও রেখেছেন। তবে তারা এখনো পাটের ব্যাগ সরবরাহ বা বিক্রি শুরু করেনি।

অন্যদিকে গুলশান ইউনিমার্ট কঠোরভাবে পরিবেশবান্ধব নীতিটি মেনে চলছে। সেখানে পাটের ব্যাগের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তারা শুধু ক্রেতাদের নিজস্ব ব্যাগ আনার অনুমতি দিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সেটি পরিবেশবান্ধব উপকরণ থেকে তৈরি হতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণরূপে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার থেকে সরে এসেছে। ফলে অধিকাংশ গ্রাহককে দোকান থেকে পাটের ব্যাগ কিনতে হচ্ছে।

গুলশান ইউনিমার্টে পাটের ব্যাগের দাম অন্যান্য সুপারস্টোরের তুলনায় অনেক বেশি। সেখানে সবচেয়ে সস্তা পাটের ব্যাগের দাম ২৯ টাকা। মাঝারি ব্যাগের দাম ১৪৫ টাকা ও সবচেয়ে বড় ব্যাগের দাম ৪৩০ টাকা। দামের এই পার্থক্যটি নিয়মিত ক্রেতাদের মধ্যে কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু স্টোরটি স্থায়ীভাবে পরিবেশগত নীতিটি কার্যকর করতে বেশ দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

রাজধানীজুড়ে বেশিরভাগ গ্রাহকই নতুন এই সিস্টেমের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করছেন। এক্ষেত্রে কেউ কেউ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ করেছেন।

গুলশান অঞ্চলের ব্যবসায়ী ইনতেকাব ইসলাম বলেন, "বিদেশে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আমি সবসময় নিজেই ব্যাগ নিয়ে আসার নীতির প্রশংসা করেছি। এই প্রথা আমাদের দেশে বহুদিন ধরেই চলছিল। আমি খুশি যে, সুপার শপগুলি এটি গ্রহণ করছে। আমাদের লাইফস্টাইল ঘরানার দোকানগুলিতেও এই নীতির বাস্তবায়ন করা উচিত।" 

ঢাকাজুড়ে বিভিন্ন সুপারশপ পরিদর্শন শেষে বলা যায়, পরিবেশবান্ধব ব্যাগের নীতির প্রবর্তনের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিছু গ্রাহক এতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যরা এটিকে টেকসই বিবেচনায় ইতিবাচক পরিবর্তন হিসাবে দেখছেন। এক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন সিস্টেমটি পুরো দেশে আরও ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।"

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status