নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ, দিশেহারা মানুষ
নুর-আমিন,খানসামা
|
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে দ্রব্যমূল্য। পণ্যের দাম মানুষকে স্বস্তি দিতে পারেনি। বরং স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে। বিগত সরকারের আমলের সেই সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো আলামতও মেলেনি এখনো। এরই মধ্যে ডিম-মুরগির সিন্ডিকেটের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। সরকারের অগ্রাধিকারে থাকলেও বাজারব্যবস্থায় এখনো নিয়ন্ত্রণ আসেনি। তথ্য-উপাত্ত বলছে, কোনো কোনো পণ্যের দাম মাসের ব্যবধানে ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণ মানুষ না পারছে বলতে, না পারছে সইতে—এমন এক অবস্থা। ত্যক্ত-বিরক্ত ভোক্তা রাগে-ক্ষোভে বিক্রেতাকে দু-এক কথা শুনিয়ে দিলেও দামের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেই বাড়ি ফিরছে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে থাকে, তখন তাদের জীবনে ধীরে ধীরে নেমে আসে নানা ধরনের অসুবিধা ও অশান্তি। বর্তমানের সংকটময় মুহূর্তে এ ধরনের অসুবিধায় দিন পার করছে দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যারা লজ্জায় না পারছে কাউকে কিছু বলতে, না পারছে কারও কাছে হাত পাততে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবন যেন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্ত মানুষরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিয়মিত আয়ে সংসার চলে না তাদের। রিকশাচালক, দোকানের কর্মী, শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা সংসারের বোঝা বহন করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেকে। তারা বলেছেন, অবস্থা এমন হয়েছে, না পারছি নিজেরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে না পারছি কারো কাছে হাত পাততে। খাদ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে চাপে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। প্রতিদিন খাবার কমিয়ে দিয়ে, একটু সস্তার বাজার খুঁজে কেনাকাটা করে কোনোরকমে পরিবার সামলাচ্ছে এই মানুষেরা। উপজেলার পাকের হাটে বাজার করতে আসা সুবাস চন্দ্র নামে এক স্কুলশিক্ষকের সাথে দেখা হয় সকালের সময়ের। এসময় তিনি জানান, নিত্যপণ্যের সাথে প্রায় সারাবছরই সবজির দাম থাকে চড়া। শীতের সবজি বাজারে উঠলেও তা এখনো দাম কমেনি। তিনি বলেন, সবজির যে দাম তাতে অন্য বাজারে কুলিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও বড়-বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেই এভাবে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখি রেখেছে। এই বিষয়ে বেলাল, শফিকুল, জয়ন্ত, নাজমুলসহ মাসিক ১৫-১৮ হাজার টাকা বেতন পান এমন অন্তত ১০ জন ইপিজেড শ্রমিক বলেন, বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে মাসে প্রায় ৫ হাজার টাকা লেগে যায় সবজি কিনতে। বাকি টাকা দিয়ে কীভাবে পুরো মাসের মাছ, মাংস, রান্নার তেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মশলাসহ অন্যান্য পণ্য কিনবো? এর বাইরেও তো প্রতি মাসেই টুকটাক কিছু অন্য খরচ থাকে। ফলে সীমিত আয়ে কিছুতেই সংসারের খরচ মেলাতে পারছি না। পান, সিগারেট, চা কিছুই খাই না। তবু মাস শেষে হাতে কোনো টাকা থাকে না। এমনকি মাঝেমধ্যেই সহকর্মীদের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হয়। ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষরা কেউ ভালো নেই। খরচের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ খাবারে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন, কেউ বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে চাপ সামলাতে গিয়ে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |