ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
আদালতের বারান্দায় বিদেশিনীর ২০ বছর
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Monday, 2 September, 2024, 2:56 PM

আদালতের বারান্দায় বিদেশিনীর ২০ বছর

আদালতের বারান্দায় বিদেশিনীর ২০ বছর

দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ওকিয়াং। এমবিএ পাস করে ১৯৯৬ সালে ৩৬ বছর বয়সে ভালোবাসার মানুষ বো সান পার্ককে নিয়ে আসেন ঢাকায়। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে যৌথভাবে গাজীপুরে গড়ে তোলেন থ হাঙ্গ প্যাকেজিং (বিডি) লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান। ওকিয়াং সেই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং বো সান পার্ক হন চেয়ারম্যান।

সব কিছু বেশ ভালোই চলছিল। স্বপ্ন ছিল, তারা এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হবেন। ২০০৩ সালে দু’জন বিয়েবন্ধনেও আবদ্ধ হন। কিন্তু বিধি বাম। হঠাৎ তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। এর মধ্যে ২০০৪ সালে ওকিয়াং বৃদ্ধ মাকে দেখতে কোরিয়া যান। তখনই ঘটে অঘটন। ফিরে এসে জানতে পারেন, সই জাল করে তাঁকে প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। ওকিয়াংয়ের সব শেয়ার লিখে নিয়েছেন স্বামী বো সান পার্ক। অধিকার ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নেন ওকিয়াং। বো সান পার্ক ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে একে একে করা হয় ১৪টি মামলা। এর পর থেকে ২০ বছর ধরে উচ্চ আদালত ও ঢাকা জজ আদালতপাড়ায় বিচরণ এই বিদেশিনীর।

এর মধ্যে সই জাল করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছর বো সান পার্ক ও তাঁর সহযোগীকে এক বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার আদালত। তবে সাজা স্থগিত চেয়ে আপিল হয়েছে, যা বর্তমানে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। কোম্পানি আইনে করা আরেকটি মামলায়ও পক্ষে রায় পেয়েছেন ওকিয়াং। এর বিরুদ্ধেও আসামিপক্ষের করা আপিল উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায়। 
নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসা, কোম্পানি গড়া, বিয়ে এবং মামলার বৃত্তান্ত নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্ট এলাকায় সমকালের সঙ্গে কথা হয় ওকিয়াংয়ের। তিনি বলেন, এসব ইতিহাস শুনে লাভ নেই। কপালে যা ছিল, তা-ই হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা জজ আদালত এবং গাজীপুর আদালতে তাঁর ১৪টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। অপরদিকে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে বো সান পার্কের করা সাতটি ‘মিথ্যা মামলা’ও বিচারাধীন। একে অপরের বিরুদ্ধে এসব মামলা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে করতে আদালতের বারান্দায় পার হয়ে গেছে তাঁর ২০ বছর। তবুও শেষ হয়নি এ দুর্বিষহ পথচলা। এর মধ্যে ২০১০ সালে ভেঙেছে তাদের সংসার। এখন ঢাকার দুই প্রান্তে তাদের বসবাস।

আলাপচারিতায় জানা যায়, আর্থিক সংকট থাকায় বর্তমানে নিজেই মামলা পরিচালনা করছেন ওকিয়াং। এক সময় বড় বড় আইনজীবী তাঁর মামলা পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে উচ্চ আদালতে তাঁর মামলা দেখভাল করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একরামুল হক টুটুল। তিনি সমকালকে বলেন, কোরিয়ার ধনী পরিবারে ওকিয়াংয়ের জন্ম। ২০ বছর ধরে বিভিন্ন আদালতে ঘুরছেন তিনি। মামলার ব্যয় বহন করতে কোরিয়াতে দুটি বাড়ি ও কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তিও বিক্রি করেছেন। এখন বৃদ্ধ মা-বোন কোরিয়া থেকে টাকা পাঠান। সেই টাকা দিয়ে কোনোমতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ওকিয়াং।

অ্যাডভোকেট টুটুল বলেন, ওকিয়াং ও বো সান পার্ক দু’জনেই কোরিয়ার নাগরিক। প্রতিহিংসাবশত অযথা একজন আরেকজনকে হয়রানি করছেন। ওকিয়াংয়ের যে সই জাল করা হয়েছে– ইতোমধ্যে আদালতে প্রমাণিত। সুতরাং তিনি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার ফিরে পেয়েছেন।

৬৪ বছর বয়সী ওকিয়াংয়ের মতে, বাংলাদেশে মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক দীর্ঘসূত্রতা। তাঁর দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে কোনো মামলা নিষ্পত্তিতে সাত বছরের বেশি লাগে না। অথচ এখানে ২০০৪সালের মামলাও শেষ হয়নি। মামলায় লম্বা তারিখ পড়ে। অধস্তন আদালতে একটি মামলা হলে তা স্থগিত করতে উচ্চ আদালতে কমপক্ষে তিনটা মামলা করা হয়।

মামলার কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ওকিয়াং। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এর প্রতিকার পেতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে সাতটি মিথ্যা মামলা করেছে। এসব মামলায় আদালত থেকে খালাস পেলেও বারবার উচ্চ আদালত স্থগিত করায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশে আইনজীবীর ফি’র চেয়ে আদালতে অন্যান্য খরচ বেশি; এ মন্তব্য করে ওকিয়াং বলেন, এ দেশের মানুষ অনেক ভালো। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তি করার পদ্ধতি অনেক খারাপ। এর পরও মায়ায় জড়িয়ে গেছি এ দেশের মানুষের। বাকি জীবনটা এখানেই কাটিয়ে দিতে চাই।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status