কথায় আছে, ‘শখের দাম লাখ টাকা’। তবে কখনো কখনো শখ পালন করতে গিয়ে আত্মঘাতীও হয়ে উঠেন অনেকে। তেমনি একজন রাজশাহীর শহরের চন্দ্রিমা থানার চকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মুক্তার হোসেন (৫৩)। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক। সম্প্রতি কাঁচের বাল্ব খেয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকায় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মুক্তারের। এ সময় নিজের কাঁচের বাল্ব খাওয়ার সৌখিনতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
মো. মুক্তার হোসেন বলেন, কাঁচ খাওয়া আমার শখ ও সাধনা। ৩০ বছর আগে ঢাকার মিরপুরের শাহ আলীর দরকারে আমার পীর মুর্শিদ ওয়াজ ভান্ডারীর কাছ থেকে কাঁচ খাওয়া শিখেছিলাম। আমার মুর্শিদ নিয়মিত কাঁচের বাল্ব খেতেন। এটার দেখার পর আমিও শিখতে চাই। সেখানে তিন বছর ধরে সাধনা করার পর আমি কাঁচের বাল্ব খাওয়া শিখেছি। এরপর নিয়মিতভাবে টানা ২৫ বছর ধরে কাঁচের বাল্ব খেয়েছি। গত ৫ বছর ধরে আর খাই না।
তিনি আরো বলেন, আমার কাঁচের বাল্ব খাওয়ার বিষয়টি আমি গোপন রেখেছি। এটা আমার গোপন সাধনা। কিন্তু এক বন্ধু এক বছর বিষয়টি জেনে ফেলে। এরপর থেকে আমাকে বারবার বলছিল, তোমার কাঁচ খাওয়া দেখব। এ কারণে তার সামনে কাঁচের বাল্ব খেয়েছি। সে ভিডিও করে ওইটা ফেসবুকে দিয়ে দিয়েছে। এ কারণে এলাকার মানুষ জেনে গেছে।
রিকশাচালক মুক্তার আলী বলেন, কাঁচের বাল্ব খেয়ে এখন পর্যন্ত আমার শারীরিক কোনো সমস্যা হয়নি। আমি অনেক সাধনার পর কাঁচ খাওয়ার কৌশল রপ্ত করেছি। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও সখের বসে এটা খায়। খেতেও ভালো লাগে। আমি সাধারণত নষ্ট হওয়া ৬০ থেকে ১০০ ওয়াটের বাল্বগুলো খাই। এর চেয়ে মোটা কাঁচ খেতে পারি না। কারণ দাঁত দিয়ে এটা ভাঙা যায় না।
মুক্তার জানান, তিনি পীরের মুরিদ। রাজশাহী নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার হযরত শাহ ওলি আহম্মেদ (রহ.)’র মুরিদ তিনি। মাজার শরিফে নিয়মিত আসেন তিনি। কাঁচ খাওয়া দেখে রাজু আহম্মেদ নামে আরেক যুবক কাঁচ খাওয়ার শিক্ষা নিতে মুক্তার হোসেনের পেছনে ছুটছেন।
রাজু আহম্মেদ বলেন, আমিও পীরের মুরিদ। মানুষ সব পারে। তার কাঁচ খাওয়া দেখে আমিও উৎসাহী হয়েছি। আমিও কাঁচ খাওয়া শিখতে চাই।
এদিকে, মুক্তার হোসেনের এই কাঁচ খাওয়া নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই এটির কঠোর সমালোচনা করে ‘হিরোইজম’ প্রদর্শন করে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন। তবে অনেকে তার এই সাধনাকে মূল্যায়নের দাবিও জানাচ্ছেন।
ভদ্রা জামালপুর আওয়ামী লীগের মহল্লা কমিটির নেতা রাশেদুজ্জামান রাইস বলেন, এটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এতে তার শারীরিক সমস্যা হয় না বলেই জানাচ্ছেন। তেমনি যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার সাধনাকে মূল্যায়ন করাও যেতে পারে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, কাঁচের বাল্ব কোনো খাদ্য নয়। আর এটা খাওয়া যায় না। এটা আসলে মানসিক রোগ। রক্তশূণ্যতা, অটিজমসহ নানা কারণে এ রোগ হয়। উনি হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে এটি খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু এটা তার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে। এ মুর্হূতে তার চিকিৎসা প্রয়োজন।