ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২ আশ্বিন ১৪৩১
বেয়াদব 'দেশ' আজও মানুষ হয়নি
আবদুল হাই শিকদার
প্রকাশ: Monday, 8 July, 2024, 10:23 PM
সর্বশেষ আপডেট: Tuesday, 9 July, 2024, 2:44 AM

বেয়াদব 'দেশ' আজও মানুষ হয়নি

বেয়াদব 'দেশ' আজও মানুষ হয়নি

সম্প্রতি ভারতের 'দেশ'  পত্রিকা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি যে অসম্মান দেখিয়েছে , সে বিষয়ে কিছু বলার জন্য অনেকেই আমাকে অনুরোধ করেছেন । সেজন্যই নিচের খসড়া ।

ক.
৯২/৯৩ এর ঘটনা । ভারতের এই দেশের এক বিশেষ সংখ্যায় , নিরোদ সি চৌধুরীর তার লেখায়  'তথাকথিত স্বাধীন বাংলাদেশ' বলে আমাদের মাতৃভূমি নিয়ে উপহাস করেছিলেন ।

বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে খুব আহত করেছিল । তিনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ।

আমাদের আমতা আমতা করা দেখে বললেন , নিরোদ চৌধুরী বড় লেখক না ছোট বুদ্ধিজীবী এটা এখন বিচার্য নয় ।তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে অপমান করেছেন , তিনি বাংলাদেশের জনগণকে অসম্মান করেছেন ।এটা ধৃষ্টতা ,এর জবাব দেয়া আমাদের কর্তব্য ।

বাংলাদেশে দেশ নিষিদ্ধ হলো । চোরাই পথে আসার ছিদ্রগুলোও সংকুচিত হলো । এক ঘাড় ধাক্কায় দেশ সাপ্তাহিক থেকে পাক্ষিকে পতিত হলো । সেই পতন থেকে আজও মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি দেশ।

কারণ এই অকৃতজ্ঞ পত্রিকাটির দপদপানি ছিল বাংলাদেশের মার্কেটের উপর নির্ভর করে ।

খ.
৯৬ এ শেখ হাসিনার সরকার নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিলে আবার বাংলাদেশে প্রবেশের মওকা পেয়ে যায় আনন্দবাজার গোষ্ঠীর এই ট্রয়ের ঘোড়া ।

কিছুদিন ভদ্রতা বজায় রেখে ফের শুরু করে তাদের নোংরামী ।

বাংলাদেশের জনগণকে অপদস্ত করার ভারতীয় কৌশলের যারা এদেশীয় কুশীলব , তাদের নানা শ্রী ও পুরষ্কারে ভূষিত করার কাজটি এই পত্রিকা পরিবার করে থাকে ।শিল্প সাহিত্য ক্ষেত্রে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ লোকজন তৈরী করাও তাদের এজেন্ডা ।

তাদের স্পর্ধা এখন এতোটাই যে তারা কাজী নজরুল ইসলামকেও অপমান করতে দ্বিধা করছে না ।

জেনে বুঝে , উদ্দেশ্যমূলকভাবে , সুচিন্তিত পরিকল্পনার অংশ হিসাবে , একটা উটকো ফেৎনা তৈরীর বদ মতলবে নজরুলের মতো এমন মহিমাময় শিল্প স্রষ্টাকে কবি জীবনানন্দের পায়ের নিচে বসিয়ে দিয়েছে ।

ওরা খুব ভালো করে জানে নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি । নজরুল বাংলাদেশের চিরসংগ্রামী চেতনার প্রতীক।

তিনি বাংলাভাষার জাতীয় সাহিত্যের নির্মাতা । জাতীয় সংস্কৃতির মূল কারিগর ।

গ.
জীবনের জন্য যেমন দরকার আলো বাতাস খাদ্য ও পানি , বাংলাদেশের জন্যও সেই রকম প্রয়োজনীয় নজরুল ।  তিনি আমাদের সাহিত্যের অধিক সাহিত্য ।জীবনের অধিক জীবন ।

কারণ , বাংলাদেশ , বাংলাদেশের মানুষ , বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং নজরুল এক ও অবিভাজ্য সত্তা ।
এর বিভাজন হয়না ।

ভারত ফারাক্ক দিয়ে গঙ্গার যতো পানি আটকে রেখেছে , তার চাইতেও লক্ষ গুণ আবেগ ও ভালোবাসা বাংলাদেশের হৃদয়ে জমা আছে নজরুলের জন্য ।

অনেক বড় বড় প্রতিভা থাকা সত্বেও ইরানের জন্য যেমন ফেরদৌসী , ব্রিটিশদের জন্য যেমন শেক্সপিয়র , আমেরিকার জন্য যেমন হুইটম্যান , পাকিস্তানের জন্য যেমন ইকবাল , ভারতের জাতীয় কবি যেমন রবীন্দ্রনাথ ( তাঁর অপরিহার্যতা মাথায় রেখেই বলছি ) তেমনি আমাদের জন্য নজরুল ।এমন কী তাদের সবার চেয়ে বেশী ।আমরা একটা আক্রান্ত ভূভাগে আছি।এই সংকটে জাতির বড় অবলম্বন তো তিনিই ।

— পাঠক আবেগতাড়িত না হয়ে আমি কী বলছি বোঝার চেষ্টা করুন ।

ঘ.
বাংলাদেশের ধর্ম , বর্ণ,  গোত্র , ছোট বড় জাতি , উপজাতি নির্বিশেষে দৈশিক ও বৈশ্বিক সব ক্ষেত্রে সকল মানুষের জন্য সমান আতিথ্য নজরুল ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না ।

আমাদের জাতির আশা আকাঙ্খা স্বপ্ন সংগ্রামের তিনি সবচেয়ে প্রবল প্রতিনিধি , নায়ক ।

সাম্প্রদায়িকতা , শোষণ বন্চনা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ গঠনের জন্য, মনোজগৎকে উদ্দীপ্ত ও সন্জীবিত রাখার জন্য নজরুলই তো উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় ।

আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সাহিত্য সঙ্গীত তথা জাতীয় সংস্কৃতির সব কিছু  যে বিপুল সৌন্দর্য , ঔদার্য ও সামগ্রিকতা নিয়ে নজরুলে উদ্ভাসিত তার কি তুলনা হয় ?

বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞান , শ্রমজীবীর ঘামের সঙ্গে মরমীবাদ , ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার যে জ্যোতির্ময় মিশ্রন নজরুলে , তা এক রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কোথায়ও নেই ।

ঙ .
তারপরও দেশ এই অন্যায অন্যায্য কর্মটি করেছে । এই কাজটি হলো আধিপত্যবাদী চরিত্রের নগ্ন ইতরামী।
এখানে সাহিত্যের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে , উপনিবেশবাদের উচ্ছিষ্টপীড়িত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হামলে পড়েছে নজরুলের উপর ।

নজরুলকে অসম্মান করে তারা এক ঢিলে তিন পাখি মারতে চেয়েছে , নজরুলকে জনগণের হৃদয়ের সম্মানের আসন থেকে উৎখাত করা , বাংলাদেশের অস্তিত্বকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মানসিক পাটাতনকে দুর্বল করা ও আমাদের জনগণের গৌরবের দুর্গ গুড়িয়ে দিয়ে হীনম্মন্যতায় পর্যবসিত করা ।

ফলে ভারতীয় শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার পথে আরও এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে ।

আর এখানে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে জীবনানন্দ দাশের মতো নিরাপরাধ , নির্বিবাদী ও নির্জনতা প্রিয় আমাদেরই এক প্রিয় কবিকে । ধূর্তামী আর  কাকে বলে!

বাংলা কবিতাকে শ্মশানে নেয়ার আয়োজক দেশের এই হারামীগিরির নিন্দা করবো কোন ভাষায়?

চ.
এই দেশআলাদের উৎসভূমি কোথায় ? এদের শ্রেণী চরিত্র কী ?

১৯৭১ সালে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল সহজ ভাষায় তাদের আমরা রাজাকার বলি ।দেশআলারাও আসলে রাজাকার । ১৭৫৭ সালে এরা এরা ক্লাইভের দালালী করেছে ।মীরজাফর জগৎশেঠের সহগামী হয়েছে ।পলাশী বিপর্যয়ের আনন্দে কলকাতায় বিজয় মিছিল করেছে ।

১৮৫৭ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে নির্লজ্জ দালালী করেছে ।ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে ন্যাংটা হয়ে কলম চালিয়েছে ,সংহতি সমাবেশ করেছে।স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করেছে।ফাঁসি দাবী করেছে ।

সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে সমাজজীবনের সম্প্রীতি সমঝোতার মূলোৎপাটন করেছে।
সমাজবিজ্ঞানী বিনয় ঘোষের মতে এরা হলো নাবিক , বণিক ও লম্পট শ্রেণীভূক্ত ।

ভারতের বিশিষ্টজনদের কথায় এরা বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থক গদি মিডিয়া ।
আগে দালালী করতো ব্রিটিশদের, জমিদার মহাজনদের, এখন গু খায় 'র' এর, কাজ করে বিজেপির।

নজরুলের শ্রেষ্ঠত্বের কিছু নতিজা
১. কবিতায় নজরুল যতো ছন্দ নিয়ে কাজ করেছেন , অতো কাজ আর কারো  দ্বারা সম্ভব হয়নি ।
২. বিষয় বৈচিত্র্যে , স্বাদে , গন্ধে ,আঙ্গিকে , তাৎপর্যে তার বহুমুখীনতা তুলনাহীন
৩. সাম্রাজ্যবাদ , ঔপনিবেশবাদ , আধিপত্যবাদ , সাম্প্রদায়িকতা , পরাধীনতা , শোষণ বন্চনা বিরোধী সংগ্রামে নজরুলের ভূমিকা অবিস্মরণীয় ।এখানে তাঁর ভূমিকা অগ্রনায়কের ।
আধুনিকতার নামে উপনিবেশিক ভূষিমাল খেয়ে আত্মহারা তিরিশের দশকের কেরানী কবিদের অবস্থান এক্ষেত্রে কোথায় ?
৪. মানুষ , মানবতা , স্বাধীনতার জন্য নজরুলের চাইতে বেশী কাব্য সফলতা বিশ্ব ইতিহাসে আর আছে কি ?
৫. নজরুল বাংলাভাষার গণমুখী সাংবাদিকতার পথিকৃত ।তার আগে সাংবাদিকতা ছিল আজকের মতোই পদলেহী।
তার ধূমকেতু ও লাঙ্গলের মতো পত্রিকা আর কি কখনো করা গেছে  ?
এই ধূমকেতুতেই ১৯২২ সালে আমাদের জাতীয় ইতিহাসে তিনিই প্রথম উপমহাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জেল জুলুম সহ অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন ।এটা সেই সময় যখন গান্ধি ও জিন্নাহ সাহেবরা পর্যন্ত স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করতে ভয়ে কাঁপতেন ।
— সে সময় মহা মহা 'ইউরোপীয় মাদকাসক্ত চাকরীজীবী' কবিদের কোথায় দেখা গেছে ?
৬. রবীন্দ্রনাথের নাম মাথায় রেখেই বলবো নজরুল উপমহাদেশের সঙ্গীতের সেরা প্রতিভা ।
তিনি আধুনিক বাংলা গানের জনক ।
পৃথিবীতে ছিল না , এরকম ১৮টি নতুন রাগের তিনি স্রষ্টা । তাও মাত্র ১০ বছরে।
আলাউদ্দিন খান , বেটোফেন কিংবা রবিশংকর মতো মহৎ সঙ্গীতজ্ঞরা যা পুরো জীবন ব্যয় করে করেছেন । অথবা করতে পারেননি ।
অন্যদের গান যেখানে সাদা কালো টেলিভিশন নজরুলের গান সেখানে রঙিন টেলিভিশন ।
বিষয় বৈচিত্র্যে , উপমা , উৎপ্রেক্ষা , চিত্রকল্প , কাব্যিকতাসহ যা বহুমাত্রিক ।
সংখ্যার কথা বাদ দিলাম ।
— এইখানে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অন্যদের কী কাজ  ?
নজরুলের গান নিয়েও আমাদের ভূমিকা রক্ষণাত্মক ।কিন্তু কেন ?
৭. হীরালাল সেন ও নজরুল আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের পথিকৃত ।
নজরুল বাংলা ভাষার প্রথম কবি যিনি ক্যামেরা ছাড়া চলচ্চিত্রের সকল শাখায় উজ্জ্বল অবদান রেখেছেন ।এক ডজনের বেশী সিনেমার তিনি কারিগর।
এখানে প্রেমেন মিত্র , শৈলজা ছাড়া বাকি ভাইয়েরা কই ?
৮. নজরুল অপেরাধর্মী নাটকের পথিকৃত ।
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৮০ টির মতো নাটক তিনি রেখে গেছেন ।
আমাদের নাট্যাঙ্গনের লোকজন কখনই নজরুল নাটকগুলো ছুঁয়েও দেখেনি ।
কারণ তাহলে তো আধিপত্যবাদের পৃষ্ঠপোষকতা জুটবে না ।
৯. ঔপন্যাসিক নজরুল আজও অনাদৃতই রয়ে গেছে ।জানতে ইচ্ছে করে , মৃত্যুক্ষুধার মতো উপন্যাস বাংলা ভাষায় আদৌ আছে কি ?
১০. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলাভাষার জনসম্পৃক্ততা ও সহজ স্বাভাবিকতার গতি রোধ করে , দেশের ৮০% মানুষের অধিকারকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে , যে কৃত্রিম ভাষা তৈরী করে বিদ্বেষের বিষবৃক্ষ রোপন করেছিল , তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল বিদ্রোহের নায়ক তো নজরুল ।
নজরুলের ভাষা বিদ্রোহের উপর পর্যাপ্ত আলো ফেললেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
কিন্তু সে কাজগুলো করা হয়নি ।কেন হয়নি ?
— এখানে আবেগ নয় তথ্য উপাত্ত দিয়ে কথা বলতে হবে।
১১. নজরুল শুধু কবি নন , সঙ্গীতজ্ঞ নন , আমাদের সাংস্কৃতিক পিতা নন , তিনি আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতীক।
অন্য অনেককে বাদ দিয়ে হয়তো চলা যাবে কিন্তু নজরুলকে বাদ দেয়া অসম্ভব।
এই কথা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বুঝে ছিলেন সেই ১৯২৯ সালে , যখন নজরুলের বয়স মাত্র ৩০ ।
১২. কারো সাথে তুলনা করা করে কাউকে ছোটো করা উচিৎ না ।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের মাথার উপরকার তারকাখচিত আকাশ ।
নজরুল আমার  সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা সুখদু:খের রক্তমাংসের মাটির পৃথিবী ।মেহনতি মুক্তিকামী গণমানুষের আত্মা ।
জসীমউদদীন আমাদের নকশী কাঁথার মাঠ ।
জীবনানন্দ আমাদের রূপসী বাংলার নিঝুম নিসর্গ ।
জীবনানন্দ দাশ গভীরতাগ্রাহী একতারা ।
নজরুল আমাদের প্রাণের হাজার তারের বীনা ।
এভাবে বিষয়টা 'দেশ' কখনোই দেখবে না । কারণ আধিপত্যবাদের স্বভাবই হলো , বাংলাদেশকে অপমান করার জন্য ক্রমাগত নতুন ফ্রন্ট অপেন করা ।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status