ফের বন্যার শঙ্কা সিলেটে, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 1 July, 2024, 8:33 PM
ফের বন্যার শঙ্কা সিলেটে, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ
পূর্বাভাসকে সত্যি প্রমাণ করতে যেন সিলেটে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারি বৃষ্টির তীব্রতা। আজ সোমবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। যেখানে আজ সকাল ৬টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয় ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। বৃষ্টিপাত বাড়ার সঙ্গে পাহাড়ি ঢল মিলে দ্রুত বেড়ে চলেছে নদীর পানি।
৪ পয়েন্টে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে তিন উপজেলা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট জানিয়েছে, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এর মধ্যে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয় ৬৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার। মাঝে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয় ১২ দশমিক ৪ মিলিমিটার। অথচ এর আগে ভোর ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায়য় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. শাহ্ সজিব হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতেও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট আইএমডির তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৪০ মিলিমিটার। এর মধ্যে আজ সকাল ৯টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩১৩ মিলিমিটার। আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে করে সিলেট জুড়ে ফের বন্যার শঙ্কা তীব্র হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট জানিয়েছে, নতুন করে তিন পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম সিলেটে এখন চার পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ২৮ মিলিমিটার ওপর দিয়ে এবং আগে থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে চলা ফেঞ্চুগঞ্জে একই নদীর পানি কিছুটা বেড়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাকি ৭ পয়েন্টেও নদীর পানি আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
নদীর পানি বাড়তে থাকায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা এরই মধ্যে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়েছে। বাড়ছে পানি। মানুষের বাসাবাড়ি, বাজার ডুবতে শুরু করেছে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, ‘ফের বন্যার শঙ্কায় উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে এবং পরিস্থিতির অবনতি হলে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ায় গোয়াইনঘাটে তৃতীয় দফা বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছি। পাশাপাশি পরিস্থিতির অবনতি হলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেজন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি উদ্ধার কাজের জন্য ৪৭টি নৌকাও প্রস্তুত রেখেছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এরইমধ্যে তিন পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এটি অব্যাহত থাকলে সিলেট জুড়ে তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।’