ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কোনো দলই যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, বিষয়টি এখন অনেকটাই স্পষ্ট। এখন পর্যন্ত যে ফলগুলো এসেছে, তার থেকে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি হয়তো ২৪০টির মতো আসন পেতে পারে। আর কংগ্রেস পেতে পারে ১০০ এর কাছাকাছি।
তবে জোটের হিসাব করলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেতে পারে ২৯০টির মতো আসন। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ২৩৪ থেকে ২৪০টির মতো। ফলে জোটবদ্ধভাবে এনডিএ–এর সরকার গঠনের সম্ভাবনাই বেশি।
এই জোটের কারণেই দেশটির রাজনীতিতে এই মুহুর্তে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন তেলেগু দেশাম পার্টির (টিডিপি) চন্দ্রবাবু নাইডু ও জনতা দল ইউনাইটেড বা জেডির (ইউ) নীতিশ কুমার। এর মধ্যে জনতা দল ইউনাইটেড বা জেডির (ইউ) নীতিশ কুমার বিজেপির এনডিএ জোটে এসেছেন বেশিদিন হয়নি। তেলেগু দাশাম পার্টির (টিডিপি) চন্দ্রবাবু নাইডুও এই জোটে আছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা যদি বিগড়ে যান তাহলে সব সমীকরণ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।
ভারতের নির্বাচনে যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাতে বাংলাদেশের লাভ বা ক্ষতি কি? গত অন্তত এক দশকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দুই দেশের অনেকগুলো বিষয় হৃদ্যতাপূর্ণভাবেই সমাধান হয়েছে। তবে অমীমাংসিত কোনো বিষয় যে নেই এমনটাও নয়। বিশেষ করে গঙ্গা ও তিস্তার পানি চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন আছে। আবার কংগ্রেসের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন সরকার আসার পরে ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে কি কোনো পরিবর্তন আসছে?
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনের মতে, ভারতে যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক বাংলাদেশ-নীতিতে খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এক্ষেত্রে খুব বড় নীতিগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিষয় তেমন নেই। বাংলাদেশের সাথে যে সম্পর্ক এখানে ভারতের জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। যদি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটও ক্ষমতায় আসে সেখানেও বাংলাদেশের জন্য তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’
সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বিজেপিই হয়তো সরকার গঠন করবে। তবে বিজেপিতে এখন বিকল্প নেতৃত্ব নেই। কাজেই এনডিএ জোটের যে দলগুলো আছে, তারা নিজেদের স্বার্থেই বিজেপিকে আঁকড়ে থাকবে। বিজেপি হয়তো কিছুটা দুর্বল হবে, তবে মোদি শক্তভাবেই হয়তো টিকে থাকবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাসও মনে করেন, ভারতের নতুন সরকার গঠন হলে তাতে দেশটির বাংলাদেশ-নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক বলেন, ‘পরিবর্তন কতটা আসবে সেটা দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। এখন পর্যন্ত যে ফল, তাতে নিঃসন্দেহে ক্ষমতাসীন জোট এগিয়ে আছে। জোট হিসেবে হয়তো তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে। বিগত এক দশকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বেশ কিছু সম্পর্ক এমনভাবে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে যে, নেতৃত্বে পরিবর্তন আসলেও সম্পর্কে তেমন পরিবর্তন আসার কথা নয়। যিনিই ক্ষমতায় আসুক, তিনি এটাকে আরও দৃঢ় করতে চাইবেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই দেশের সরকারই হয়তো চাইবে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।’
অধ্যাপক নিলয় রঞ্জন বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ভারত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার আছে। সুতরাং ভারতে স্থিতিশীল সরকার থাকা বাংলাদেশের জন্য কাম্য। এখন পর্যন্ত যে ফল, তাতে হয়ত স্থিতিশীল সরকারই হতে যাচ্ছে। আশা করি এতে দুই দেশের সরকারের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’