কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে মানববন্ধন
সালেক হোসেন রনি, কিশোরগঞ্জ
|
![]() কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে মানববন্ধন অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক হলেন, জেলা শহরের মেডিল্যাব হেলথ সেন্টার লিমিটেডের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমন ও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ মো. আবু তাহের মিয়া। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শিশু অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক প্রাচুর্য হাসান অর্চি, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন ইদু, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক শেখ সেলিম কবির, কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক আতিয়া হোসেন ও শিশুটির চাচা, জাতীয় যুব জোট কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি শারফুদ্দিন সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সালেক হোসেন রনি, বিশ্বজিৎ রায় সুমন, খায়রুল বাসার প্রিন্স, ইফতেখার আলম পারভেজ, মাসুদ রানা, শাহজাহান সাজু । এ ছাড়া মানববন্ধনে নিহত শিশুটির বাবা সারোয়ার জাহান উপল, মা আফসারা মুনা, দাদা হোসেন সারোয়ার লিটন, আইনজীবী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকার শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। প্রাচুর্য হাসান অর্চি বলেন, ‘আফফান, তোমার মৃত্যুর দায় কে নেবে? এই শিরোনামে আজকের এই মানববন্ধন। সংগীত শিল্পী নচিকেতার গানের সুরে বলতে চাই, ডাক্তার মানে সে তো মানুষ নয়। আমাদের চোখে সে তো ভগবান। কসাই আর ডাক্তার এক নয়। তিনি বলেন, আমাদের আজকে এই মূহুর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ কিংবা ঘরে থাকার কথা ছিল। অথচ কি আশ্চার্য এই খড় রোদে দাড়িয়ে তথাকথিত ডাক্তারদের ভুলের মাশুল হিসেবে জীবন দেওয়ার পাশাপাশি আজকে আমাদের অধিকারের কথা আমাদেরকেই বলতে হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অর্চি আরও বলেন, আমাদের কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। এই বয়সে এত বড় কষ্ট সইতে পারার কথা নয়। বলতে দ্বিধা নেই, সারা শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক গজিয়ে উঠছে। কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ দেখভাল করার কেউ নেই। গত এক বছরে শহরের নানান ক্লিনিকে এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা যথেষ্ট। এই তালিকা নিঃসন্দেহে দীর্ঘ হবে। নানামুখী চাপে এই সব ঘটনা ধামাধাপা পড়ে যায় বলে শুনেছি। এইরকম ঘটনা ঘটতে থাকলে অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় এনে শান্তি নিশ্চিত করতে না পারলে, আজ আমার, কাল কিন্তু অবশ্যই আপনার। তাই এই শহরের সব বিবেকবান মানুষকে এই যৌক্তিক লড়াইয়ের পাশে থাকার জন্য শিশু অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আহ্বান করছে। শিশু অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক বলেন, আজকের এই মানববন্ধন থেকে সিভিল সার্জন সাহেবকে বলতে চাই, আমরা আপনার কাছে যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি, তা আমলে নিয়ে অধিকতর দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিধি মোতাবেক খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব আনুষ্ঠানিকভাবে সত্য প্রকাশ করুন। অন্যথায় আমাদের কোমলনতি শিশুদের দীর্ঘশ্বাস ও কান্নার আগুনে আপনি এবং আপনারা পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আজকের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিনন্দন ও আগামী দিনে আমাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, শিশুর পরিবারে পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত অভিযোগটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডিজি হেলথে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। ডিজি হেলথের পক্ষ থেকে এখনও কোনো তদন্ত আসেনি। গত ২৪ এপ্রিল আফফানকে প্রথমে জেলার মেডিল্যাব হেলথ সেন্টার লিমিটেডে নেন তার মা-বাবা। পরে মেডিল্যাব হেলথ সেন্টারের চিকিৎসক মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমনের কাছে নেওয়া হয়। আফফানকে দেখার পর কয়েকটি পরীক্ষা করাতে বলেন তিনি। গত ২৫ এপ্রিল চিকিৎসক মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমন ও এনেসথেসিয়া চিকিৎসক আবু তাহের মিঞা পরীক্ষার রিপোর্টগুলো দেখে টনসিল ও অ্যাডিনয়েড অপারেশনের পরামর্শ দেন। ওই দিন রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকেই আফফানের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, দিতে হয় অক্সিজেন সাপোর্ট। পরে আফফানকে ঢাকার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, আফফান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এই অবস্থায় অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। ইউনিভার্সেল মেডিকেলে ২১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৭ মে সন্ধ্যায় মারা যায় আফফান। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |