দশ ইস্যুতে আন্দোলনে ঐক্যমত বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 3 August, 2022, 3:40 PM
সরকার পরিবর্তনে বৃহত্তর আন্দোলনের প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে যুগপৎভাবে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ। বুধবার দুপুরে গণঅধিকার পরিষদে দলটির নেতাদের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারকে সরাতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে গণঅধিকার পরিষদ। এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ ঐকমত্য হয়েছে। আমরা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়েছি। গণঅধিকার পরিষদের নেতারা আমাদের সঙ্গে প্রায় সব বিষয়েই একমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আমরা এ বিষয় একমত হয়েছি যে, এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে না। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। জয়ী হলে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
এসময় বিএনপি মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই। আমরা বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছি। প্রায় ১০টা বিষয় ওঠে এসেছে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান ফ্যাসিবাদ সরকারকে যুগপৎ আন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে। এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একমত।
আপনারা জানেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করছে তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার।
বিএনপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের যে ১০টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তা হলো: ১. ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার হঠাতে যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম।
২. অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন, ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটগ্রহণ।
৩. রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার।
৪. বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা।
৫. বাক, ব্যক্তি ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার অধিকারসহ নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত সব অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
৬. খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দি ও ধর্মীয় নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। ভিন্নমতের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন, পীড়ন, গুম, খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা মামলা বন্ধে পদক্ষেপ।
৭. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সব গণবিরোধী ও নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করা।
৮. বর্তমান সরকারের গত ১৩ বছরের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা।
৯. মেগা প্রকল্প ও কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার আওতায় আনা এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইন করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (বাপেক্স) শক্তিশালী স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা।
১০. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন,বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বসহ জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সংলাপে অংশ গ্রহণ নেন। অন্য দুজন হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন।