ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৯ কার্তিক ১৪৩২
খুলনায় বেপরোয়া হুমা বাহিনী
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Sunday, 2 November, 2025, 7:18 PM

খুলনায় বেপরোয়া হুমা বাহিনী

খুলনায় বেপরোয়া হুমা বাহিনী

একের পর এক হত্যা, প্রকাশ্যে চলে গুলি ও অস্ত্রের মহড়া মুলনা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে মহেশ্বরপাশা এলাকা। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে একের পর এক রক্ত করছে। সাড়ে তিন মাসে মহেশ্বরপাশা এলাকায় তিনটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া কুপিয়ে জখম এবং প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু। এসব ঘটনায় আসছে সন্ত্রাসী হুমায়ুন কবির প্রমার নাম। তার তৎপরতায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতজ বিরাজ করছে।

পুলিশের কাছে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, দৌলতপুর খানায় মাহেশ্বরপাশা বণিকপাড়ার বাসিন্দা মতনের শেখের ছেলে হুমায়ুন কাবির হুমা (৩৭)। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা, একটি অস্ত্র ও দুটি চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে। গত বছরের ৮ অক্টোবর বাগেরহাটের রামপালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। চলতি বছরের ২৪ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে হয়ে উঠেছেন

পদ্মা নদীতে স্পিডবোট নিয়ে নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দেয় কাকন বাহিনীর সদস্যরা। সম্প্রতি তাদের মহড়ার ঘটনা ড্রোন দিয়ে ভিডিও করে প্রশাসনকে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা
খুলনায় বেপরোয়া হুমা বাহিনী  বেপরোয়া। স্থানীয়রা বলছেন, এ বছরের বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সন্ত্রাসী নাসিম, আরামান, হোসেন ঢালী, শাহরিয়ার পাস্তুসহ কয়েকজন। প্রায় ১০ মাস জেল খাটনা পর গত জুলাইয়ে জামিনে বের হন জমা।

অন্য সন্ত্রাসীরা জেলে থাকার সুযোগে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মঙ্গড়া দিচ্ছে তার বাহিনীর লোকজন। সর্বশেষ ২০ আক্টোবর দুটি বাড়িতে ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায়ও মমা বাহিনীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে অভিযান চালিয়ে ওসমান ও সেলিম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা যমার লোক।

একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও অস্ত্রবাজির ঘটনায় আতঙ্কে এলাকাবাসী। মহেশ্বরপাশা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মাঝে মাঝে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। প্রকাশ্যে এসব ঘটলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কেউ। গত ২৬ অক্টোবর একজনের বাড়িতে গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় হুমা বাহিনী জড়িত বলে সন্দেহ ভুক্তভোগীর। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে জমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তারপরও বাড়িতে ৯ রাউন্ড গুলি করেছে। ওরা বলতেছে, ওরা ছাড়া কেউ এলাকায় থাকতে পারবে না।'

একের পর সন্ত্রাসী তৎপরতায় উদ্বিগ্ন মহেস্করপাশায় সাধারণ মানুষ ভয়ে গণমাধ্যমে বয়না দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, "আমরা কিছু বললে যখন তখন এসে হামলা চালানো হতে পারে।

হত্যাকাণ্ডে হুমা বাহিনীর নাম গত ১১ জুলাই দুপুরে মহেশ্বরগাশ্য পশ্চিমপাড়ার বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয় সাবেক খুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে। এ ঘটনায় প্রমার সহযোগী কাজী রায়হান, আসিফ মোল্লাসহ চারজনকে মেস্তার করে পুলিশ। মামলার তদন্তে সন্ত্রাসী আরমানের সঙ্গে মাহবুবের সথ্য, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের একটি বাড়ি দখল ও মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মমার সঙ্গে দ্বন্দের প্রসঙ্গ উঠে আসে। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা মীর আতাহার আলী জানান, কাজী রায়হান, আসিফ ও জমা একসঙ্গে বাগেরহাট কারাগারে ছিলেন।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ জুন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পকেট গেটেনা সামনে সানেক ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা আরিফ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামার অনুসারী আসিফ মোল্লা ও রায়হানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় জমাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমসি) এক উকতিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাহাবুব হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ ও রায়হান জানান, আরিফ হোসেনকেও তারা গুলি করেছে। অবশ্য বিষয়টি তারা আদালতে বা তদন্তকালে স্বীকার করেননি।

এ ছাড়া ৩ আগই মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় যের ব্যবসায়ী আলামিন হাওলাদারকে। ১ অক্টোবর মহেশ্বরপাশায় নিজ যারে খুন হন তানভীর হাসান শুভ। এসব ঘটনায় দৌলতপুর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে পৃথক মামলা হয়েছে। জড়িত কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি।

কেএমন্ত্রির উত্তবামিশনার টেষর। অথচুর ইসলাম বলেন, জাহাবুব, আনাফিন ও কষ্ট হত্যার তিনটি ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।

দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন বাকিরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।
ঘন্দ্বে জড়িয়ে বিভক্ত সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ কার্মকর্তারা জানান, খুলনা মহানগর পুলিশের নৌলতপুর, আড়ংঘাটা ও খানজাহান আলী থানার সীমান্তে মহেশ্বরপাশা এলাকা। এর পাশেই রূপসা সেতু বাইপাস সড়ক এবং ডুমুরিয়া উপজেলা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য সড়ক দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সহজ। অপরাধ ঘটিয়ে এসব সড়ক দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা।

তারা আরও জানান, নকাঈয়ের দশকের মহেশ্বরপাশা, আড়ংঘাটা ও দেয়ানা এলাকায় পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির উত্থান ঘটে। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই সময় গ্রেপ্তার হওয়া

সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। কেউ কেউ পালিয়ে ছিল ভারতে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তারা ধীরে ধীরে এলাকায় যিরাতে থাকে। কয়েকজন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। এলাকায় ফিরে চাদাবাজি, দখল, সন্ত্রাসী কর্মকারে জড়িয়ে পড়ে তারা।

সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এলাকার প্রবীণ কয়েকজন জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এলাকায় ফেরেন পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা শেখ শাহীনুল হক ওরফে বড় শাহীন। তার ছত্রছায়ায় এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে উঠতি সন্ত্রাসী জেসেন ঢালী, আরমান হোসেন ও হুমায়ুন করির হমা। একপর্যায়ে নিজেদের মধ্যে জন্মে জড়িয়ে বিষক্ত হয়ে পড়ে তারা। ধনা নিজেই আলাদা বাহিনী তৈরি করে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ১৫ মার্চ খুন হন বড় শাহীন। 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিলেঢালা তৎপরতা' দৌলতপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, চার মাসে তিনটি খুন হলো, অথচ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের ঢিলেঢালা তৎপরতার কারণে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

থানা জামায়াতে ইসলামের আমির মোশাররফ আনসারী বলেন, নির্দিষ্ট এলাকায় একের পর এক খুন-সন্ত্রাস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতাই মূল দায়ী। পুলিশ বেন তাদের মেম্বার করতে পারছে না- আমরা এর জবাব চাই।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, সন্ত্রাতি অনেক সন্ত্রাসীর রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হয়নি, দ্রুত জামিন হচ্ছে- বিষয়টি উদ্বেগজনক।

কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, হত্যাকান্ডে প্রশিক্ষিত ও পেশাদার লোক জড়িত। ঘটনা ঘটিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তারপরও। বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজনকে মেস্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। সবার সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status