|
চট্টগ্রামের যে এলাকা পাহারা দেয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা, পুলিশ-প্রশাসন ঢুকলেই হামলা
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() চট্টগ্রামের যে এলাকা পাহারা দেয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা, পুলিশ-প্রশাসন ঢুকলেই হামলা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই এলাকাটির নাম জঙ্গল সলিমপুর। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এটি হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা। সরকারি খাসজমি হওয়ায় এলাকাটিতে কারাগার, আইটি পার্ক নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে বেহাত হওয়া সরকারি জায়গাগুলো পুনরুদ্ধার করতে না পারায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর এই এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ, খুনোখুনির ঘটনা ঘটে চলছে। সম্প্রতি এলাকায় দখল-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসীদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি হয়। এতে একজন নিহত হন। পরদিন সেখানে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। চট্টগ্রাম নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি। এর বিপরীতে লিংক রোডের উত্তর পাশে ৩ হাজার ১০০ একর জায়গায় জঙ্গল সলিমপুরের অবস্থান। সীতাকুণ্ডে এটির অবস্থান হলেও এটি অনেকটা নগরের ভেতরেই। এর পূর্ব দিকে রয়েছে হাটহাজারী উপজেলা এবং দক্ষিণে বায়েজীদ থানা। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, লিংক রোড এলাকার আশপাশে প্রতি শতক জায়গা ৯ থেকে ১০ লাখ টাকায় বেচাকেনা চলছে। সেই হিসাবে ৩ হাজার ১০০ একর খাসজমির মূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া জঙ্গল সলিমপুরে গাছসহ বিভিন্ন সরকারি সম্পদ রয়েছে। এসব সরকারি সম্পদ পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা দখল করে রেখেছেন। যেভাবে দখল শুরু, নিয়ন্ত্রণে যারা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নব্বই দশকে সন্ত্রাসী আলী আক্কাস জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে বসতি শুরু করেন। দখল ধরে রাখতে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ে হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে যেতে পারতেন না। এই সুযোগে নিম্ন আয়ের লোকজনের কাছে পাহাড়ি খাস জায়গা বিক্রি শুরু করে আক্কাসের বাহিনী। শুরুতে দুই শতক জায়গা বিক্রি হতো ২০ হাজার টাকায়। নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এসব জায়গা কেনাবেচা চলে আসছে। প্লট গ্রহীতাদের ছিন্নমূল সমবায় সমিতি নামক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যুৎ, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা সেবা দেওয়ার কথা বলে নিয়মিত চাঁদা আদায় শুরু হয়। জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হয় একাধিক লোহার গেট। পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ গেট অতিক্রম করতে পারতেন না। প্লট বিক্রির টাকা ও পাহাড় দখল নিয়ে এক সময় বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান আক্কাস। এর কিছুদিন পর আক্কাসের সহযোগী কাজী মশিউর রহমান, ইয়াসিন মিয়া, গফুর মেম্বার ও গাজী সাদেক আলাদা আলাদা দল তৈরি করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইয়াসিন সীতাকুণ্ডের এস এম আল মামুনের আশ্রয়ে ছিলেন। আল মামুন সীতাকুণ্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা। ইয়াসিন এলাকার আলীনগর বহুমুখী সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন কাজী মশিউর, গাজী সাদেক। যারা প্লট কিনেছেন তারাই এ দুই সমিতির সদস্য। বর্তমানে এ দুটি সমিতিতে প্রায় ৩০ হাজার সদস্য রয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি সলিমপুরে খুন হন ইউনিয়ন শ্রমিক দলের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি মীর আরমান। তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়। গত ১৪ মাসে এলাকাটিতে চারজন খুন হয়েছেন। পুলিশ বলছে, সব কটি খুনের পেছনে রয়েছে পাহাড়ি এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বজায় রাখা। এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ইয়াসিনকে সরিয়ে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের দখল নিতে গত বছরের ৫ আগস্টের পর হামলা চালান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) রোকন উদ্দিনের বাহিনী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কাজী মশিউর, গাজী সাদেক ও গোলাম গফুর। কিন্তু ইয়াসিন বাহিনীর সঙ্গে তাঁরা পেরে উঠছেন না। কাজী মশিউররা রয়েছেন জঙ্গল সলিমপুরের সলিমপুর অংশে আর ইয়াসিন রয়েছেন আলীনগরে। এখন কাজী মশিউররা রোকনকে সঙ্গে নিয়ে আলীনগর দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ৪ অক্টোবর ভোরে নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর দখলের চেষ্টা করেন রোকনের লোকজন। এ সময় তাঁর অনুসারী খলিলুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আহত হন অন্তত আরও ২৫ জন। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সম্প্রতি আলীনগরের পাহাড় দখলে নিতে ৬০ লাখ টাকার অস্ত্র কেনার একটি কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে। অস্ত্রের কথা বলা ওই ব্যক্তি বহিষ্কৃত যুবদল নেতা রোকন উদ্দিন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। কথোপকথনে বলতে শোনা যায়, ‘ছিন্নমূলে আমি যুদ্ধ করতে রাজি আছি। ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার অস্ত্র কিনেছি, যা করার সব করব। বহিরাগত কেউ জঙ্গল সলিমপুরে নেতৃত্ব দিতে পারবে না।’ ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডটির বিষয়ে জানতে চাইলে সেটি তাঁর নয় বলে দাবি করেন রোকন উদ্দিন। আলীনগরের দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সলিমপুরে আমার প্লট নেই। রাজনীতি যেহেতু করি, আমার দলীয় লোকজনের খোঁজখবর রাখি। সলিমপুরের দখল নিয়ে ইয়াসিনের সঙ্গে প্রতিপক্ষের দীর্ঘদিন থেকে সংঘর্ষ, নানা ঘটনা ঘটছে। তাঁর (ইয়াসিনের) কোনো প্রতিপক্ষ করতে পারে।’ ইয়াসিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হয় তাঁর মুঠোফোনে। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। প্লট বাণিজ্য সলিমপুরের পাহাড় কেটে গড়ে তোলা বসতি ছোট ছোট প্লট আকারে বিক্রি করা হয়। বিজ্ঞাপন, প্রচারপত্র ছাপিয়েও চলে প্লট বিক্রি। সম্প্রতি একটি সলিমপুরের আলীনগর আবাসিকে প্লট বিক্রির একটি প্রচারপত্র হাতে আসে এই প্রতিবেদকের। এর সূত্র ধরে রাসেল সরকার নামের বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাসেল সরকার জানান, আড়াই কাটা করে আলীনগরে কিছু প্লট রয়েছে তাঁদের কাছে। ৩০ লাখ টাকা করে এসব প্লট বিক্রি হবে। এসব প্লটে এখনই ঘর তোলা যাবে। এর বাইরে কিছু প্লট পাঁচ লাখ টাকা দর বিক্রি হচ্ছে। এসব প্লটের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ রকম প্লটের সংখ্যা ২৬ হাজার, এরই মধ্যে ২৩ হাজার বিক্রি করেছেন তাঁরা। সরকারি খাস জমি ও পাহাড় বিক্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে রাসেল সরকার বলেন, সমিতির মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে, বেচাকেনায় কোনো সমস্যা হবে না। এখানে পাহাড় নেই, সব জমি। বাসিন্দারা জানায়, আলীনগর বহুমুখী সমিতির মাধ্যমে ইয়াসিনের লোকজনই মূলত আলীগনগরের প্লট বিক্রি করছেন। এর বাইরে জঙ্গল সলিমপুরের অন্যান্য এলাকার জমি বিক্রি হয় মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে। অভিযানে গেলেই হামলা ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল বড়ইতলা ২ নম্বর সমাজ এলাকায় পাহাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে ফেরার পথে হামলায় জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক, সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর ককটেল, ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও গুলি ছোড়ে। এর আগের বছর ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি র্যাবের সঙ্গে জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছিল। একই বছরের ২ আগস্ট অবৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ অভিযান শেষে ফেরার পথে বাধা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের লোকজনকে। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আলীনগরে অবৈধ বসতি ভাঙতে যায় প্রশাসন। সেই সময় আলীনগরের সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর হামলা করেন। এর বাইরেও অনেকবার অভিযানে গিয়ে এলাকাটি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার খননযন্ত্র ও ড্রাম ট্রাক জব্দ করলেও পুনরায় চলে পাহাড় কাটা। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ঢুকলেই প্রবেশমুখে পাহারায় থাকা দখলদার এবং সন্ত্রাসীরা দ্রুত খবর পেয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন তাঁরা। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান বলেন, তিনিও ২০১৯ সালে একবার অভিযানে গিয়ে এলাকাটিতে হামলার শিকার হয়েছিলেন। পরিবেশ অধিদপ্তর যতবারই পাহাড় কাটা বন্ধে এলাকাটিতে অভিযানে গেছে, কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পরিকল্পনা করে যৌথ অভিযান করে অবৈধ বসতিদের সরাতে হবে। না হলে জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়গুলো রক্ষা হবে না।’ কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গল সলিমপুরে বারবার হামলার শিকার হন জানতে চাওয়া হয় একাধিকবার অভিযানে যাওয়ার নগরের আকবর শাহ থানার সাবেক এক ওসির কাছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এলাকাটিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই অবৈধ বসতি গড়ে তোলা লোকজন ও তাদের বাহিনী পাহারাদারদের মাধ্যমে খবর পেয়ে যায়। তারা ওপর থেকে হামলা শুরু করে। কেবল গুলি ছুড়ে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যৌথভাবে পরিকল্পনা করে সেখানে অভিযান চালাতে হবে।’ সরেজমিনে যা দেখা গেল আলীনগরের একটি প্লটের ক্রেতা সেজে সম্প্রতি এলাকাটিতে যান এই প্রতিবেদক। আলীনগর যেতে প্রথমে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার টেক্সটাইল গেট থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠা হয়। সেখানে আরও চারজন যাত্রী ছিলেন। অটোরিকশা যখন চলছিল, তখন চালকের সঙ্গে পাশে থাকা এক যুবক সম্প্রতি আলীনগরে সংঘটিত সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলছিলেন। প্রায় ২৫ মিনিট পর অটোরিকশাটি আলীনগর অটোরিকশা স্ট্যান্ডে থামে। অন্য যাত্রীদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকও অটোরিকশা থেকে নামেন। প্রায় দু শ গজ হেঁটে আলীনগরের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টার সময় চেয়ারে বসে থাকা চার যুবক প্রতিবদকের পথ আটকে পরিচয় জানতে চান। প্রতিবেদক প্লট কেনার জন্য একজনের কাছে এসেছেন জানালে যুবকদের একজন বলেন, ‘এখন সময় খারাপ, প্লট কেনা পরে, যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যান।’ পাশে থাকা আরেক যুবক তখন তাঁর কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল দেখানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে প্রতিবেদক চলে যাচ্ছেন বললে তাঁকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেওয়া হয়। যাত্রী পূর্ণ হওয়ায় পাঁচ মিনিট পর ছাড়ে অটোরিকশাটি। অটোরিকশা ছাড়ার আগে পর্যন্ত পাহারায় থাকা তিন যুবক অটোরিকশার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্লট কেনার জন্য আসার বিষয়টি শুনে অটোরিকশার এক যাত্রী এই প্রতিবেদকে জানান, আলীনগরে পুরোনো বাসিন্দাদের পাহারাদাররা চেনে। তাই কেউ জিজ্ঞাসা করে না। তবে নতুন বাসিন্দাদের পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। কারও আত্মীয়স্বজন আসলে বাসিন্দারা ফটকে এসে নিয়ে যান অথবা ফোনে পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়। ওই যাত্রী ২০০৮ সালে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আলীনগরে একটি প্লট কিনেছেন জানিয়ে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আলীনগর দখলে আরেকটি পক্ষ চেষ্টা চলছে। তাই প্রায়ই গোলাগুলি মারামারি হয়, যার কারণে কড়াকড়িও বেড়েছে।’ অগ্রগতি নেই প্রকল্পগুলোর ২০২২ সালের ২৩ জুন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জঙ্গল সলিমপুর এলাকাকে ১১টি ভাগে বিভক্ত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার-২, মডেল মসজিদ, নভোথিয়েটারসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনার কথা জানান। ধারণক্ষমতার তিন গুণের বেশি বন্দী থাকায় নতুন কারাগার তৈরির জন্য সলিমপুরে ৫০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন ও কারা অধিদপ্তরের মধ্যে এ বিষয়ে চিঠি-চালাচালিও হয়। চট্টগ্রাম আদালত ভবন, মেডিকেল কলেজ ও পুলিশ লাইনের দূরত্ব বিবেচনায় জঙ্গল সলিমপুরকে কারাগারের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। এখান থেকে আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়াও সহজ হতো। কারা কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তুতিও নেয়। তবে চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানায়, জঙ্গল সলিমপুরের জমিগুলো দখলে আছে। উদ্ধার না হওয়ায় তা কারা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কারাগার জঙ্গল সলিমপুর হলে ভালো হতো। কিন্তু জেলা প্রশাসন জায়গাটি দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে। কারাগারের জন্য নতুন জমি খোঁজা হচ্ছে।’ জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জঙ্গল সলিমপুরে স্থাপনা নির্মাণের জন্য জায়গা চেয়ে আবেদন করেছে সামরিক-বেসামরিক, সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৪৮ প্রতিষ্ঠান। জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই খাস জমিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু জায়গাগুলো দখল নিতে না পারায় প্রকল্পগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। যা বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন জানতে চাইলে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি উর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সলিমপুরের পাহাড়ে থাকা অবৈধ বসতি উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে। এটি এককভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ ও সরকারি খাস জায়গা উদ্ধার করা হবে।’ জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে নতুন করে অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেখানে ঢুকলেই হামলা শিকার হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা পরিকল্পনা করছি।’ র্যাব-৭ চট্টগ্রামের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্মিলিতভাবে অভিযান চালিয়ে জঙ্গল সলিমপুরকে সন্ত্রাসীমুক্ত করতে হবে।’ |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
