ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর ২০২৫ ২১ কার্তিক ১৪৩২
যে সাত কারণে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বামপন্থি ৪ দল
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Friday, 17 October, 2025, 11:15 AM

যে সাত কারণে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বামপন্থি ৪ দল

যে সাত কারণে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বামপন্থি ৪ দল

দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারন্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে। যে সাত কারণে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বামপন্থি ৪ দল

 
রাষ্ট্র সংস্কারের সুপারিশ ও অঙ্গীকারনামা সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বাম ধারার চার দল।

বিদ্যমান সংবিধানের চার মূল নীতিকে বাদ দেওয়া, অঙ্গীকারনামায় মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়াসহ সাত কারণে তারা সনদে স্বাক্ষর না করার কথা বলেছে।

বৃহস্পতিবার পল্টনের মুক্তি ভবনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–বাংলাদেশ জাসদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা কারণগুলো তুলে ধরেছে।


দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারন্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে। আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করে সনদে স্বাক্ষর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগের দিন তারা এই ঘোষণা দিল।


তার আগে বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।


তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা রয়ে গেছে।

‘কেন আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারছি না’, এ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সাতটি কারণ তুলে ধরা হয়। চার দল বলছে-

১. জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনাকালেই তারা বারবার বলেছে, যেসব বিষয়ে সবার ঐকমত্য রয়েছে কেবলমাত্র সেসব বিষয়েই সবার স্বাক্ষর নেওয়া যেতে পারে। ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত (এনেক্স) প্রতিবেদন হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে।


২. সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। তারা বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি।


৩. শেষ অংশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করতে বলা হয়েছে। সেখানে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভিন্নমত থাকলে তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার কীভাবে সম্ভব তা চার দলের কাছে বোধগম্য নয়।

৪. অঙ্গীকারনামার ২ নম্বরে জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে বা যথোপযুক্ত স্থানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তারাও সর্বসম্মত জুলাই সনদ সংবিধানে যুক্ত করার পক্ষে। কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, তা চার দলের বোধগম্য নয়।

৫. অঙ্গীকারনামার ৩ নম্বনে ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’ বলে যে অঙ্গীকার রয়েছে, এটি নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

৬. এছাড়াও সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ষষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ এবং সপ্তম তফসিলে থাকা ‘প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, সেটা বাদ দিলে তো বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। অথচ জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে।

৭. জুলাই সনদের পটভূমিতে অভ্যুত্থান পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের ‘রেফারেন্স’ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেওয়া হয়েছে।


এসব কারণ তুলে ধরে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “এই সাতটি বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়াতে আমাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, বলে অঙ্গীকার করতে হয় যে সনদে তাতে ভিন্নমত দিয়ে চার দল স্বাক্ষর করতে পারে না।

বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেও বিদ্যমান সংবিধানের চার মূল নীতিকে বাদ দেওয়া, অঙ্গীকারনামায় মৌলিক অধিকার পরিপন্থি এবং স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন ইস্যু যুক্ত করে প্রকারান্তরে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করেছে।”

সংবাদ সম্মেলন শেষে দীর্ঘ দিন ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে অংশ নেওয়া সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) যেটা বলেছেন, সবকিছু হয়েছে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ অনুসারে। এখন এই সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতি ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করা হয়েছে।

“এই সনদের মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন ১৯৭১ সালকে ২০২৪ সাল দিয়ে মুছে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, এখন তো মনে হয় একাত্তরকে মুছে দেওয়ার জন্য এই সনদও ‘মেটিকুলাস ডিজাইনের’ অংশ কী না, সেটা দেশের জনগণকে ভেবে দেখতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন।

সেখানে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দনও উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status