|
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ; সীমান্তে আরও অপেক্ষামাণ ২০থেকে ২৫ হাজার
অভি, টেকনাফ
|
![]() রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ; সীমান্তে আরও অপেক্ষামাণ ২০থেকে ২৫ হাজার টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর নেতা মো. ওসমান বলেন, সীমান্তে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রতিদিন কিছু না কিছু রোহিঙ্গা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বর্তমানে ৩০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা জলিয়া দ্বীপের ওপারে মিয়ানমারের লালদ্বীপের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সীমান্তের এপারে তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে আরাকান আর্মি অন্যদিকে জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ এর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। সরেজমিনে সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমারের ওপার থেকে আগের মতো বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে না আসলেও, অন্যরকম আতঙ্কিত এক পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বিজিবিরা টেকনাফের জালিয়াপাড়া ও নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের টহল জোরদার করেছে। টেকনাফ কেরুনতলি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল হাসান বলেন, নদ নদীর ওপারে অর্থাৎ মিয়ানমারের সীমান্তে অনেক রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা দালালের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪ এর দায়িত্বরত মো. আলম মাঝি বলেন, রাখাইনে আবারও আরাকান আর্মি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে গেছে। তাই সাধারণ রোহিঙ্গারা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গতকাল ৫০ জন অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। ৪০ জন বিজিবি ধরে ফেলছে। আর কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প- ২৬ এর দিকে ঢুকে গেছে বলে জানা গেছে। তিনি আরও বলেন, আগে দালালের মাধ্যমে আসলেও, এখন বেশিরভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে আসে। মূলত তারা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, সীমান্ত থেকে চুরি করে বাংলাদেশে ঢুকে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজশে রয়েছে। না হলে কোনভাবেই তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে না। এরা খুব খারাপ জাতি। তাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে টেকনাফে সন্ত্রাসী, অপহরণ ও মানব পাচারের মতো কর্মকাণ্ড বেড়েই যাচ্ছে। ভবিষ্যতে টেকনাফের পরিণতি ভালো না হতে পারে। তাই এখন থেকে রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দালালদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে। এদিকে বছরের পর বছর নানা ঝুঁকি ও সংকট নিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। উল্টো সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা ররক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিন কোন না কোনভাবেই নতুন রোহিঙ্গা ঢুকছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ঢুকেছে সোয়া লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী–এ নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ১৩ লাখ ২৪ হাজার। আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের ওপারে অপেক্ষমাণ, যারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া প্রতি বছর ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজার নবজাতক। দিনের পর দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশ পরিস্থিতি-অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে খুনাখুনি, সন্ত্রাসী, অপহরণ ও মানবপাচার। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে। অনেক দিন ধরে মাদক চোরাচালানের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ক্যাম্পগুলো । |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
